নতুন শিশুর আগমন জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে, বিশেষ করে সেই শিশু যদি হয় মা- বাবার প্রথম সন্তান। যতই প্রস্তুতি নেয়া থাকুক যারা প্রথম মা বাবা হয় তারা প্রথম কয়েক সপ্তাহ হালকা একটা ধাক্কার মধ্যে দিয়ে যায়। যদিও এই সময়ে মা বাবা উভয়ই প্রচুর এ্যাডজাস্টমেন্ট করে জীবনে, তবে স্বাভাবিকভাবেই মাদের এইসময়ে অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রথম কয়েক সপ্তাহ মায়ের জন্যে শিশু প্রসবের সময় শরীরের উপর দিয়ে যে ধাক্কাটি যায় তার থেকেও অনেক কঠিন। এই কঠিন সময়ে বাবার করণীয় অনেক কিছুই আছে যাতে শিশুর সাথে বাবার বন্ধন দৃঢ় হয় এবং মায়ের কাজের ভার কিছুটা কমে যায়।
১। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পাশে থাকাঃ
প্রথম কয়েক সপ্তাহে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়ের জন্যে অনেক কঠিন। এই সময়ে দিনের অধিকাংশ সময়ই তাকে হয়তো বুকের দুধ খাওয়ানোয় ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে অনেক কাজই সে এই সময়ে নিজ হাতে করতে পারেনা। সঙ্গী হিসেবে এই সময়ে আপনার উচিৎ তাকে সর্বোচ্চ আরামদায়ক অবস্থায় রাখা। এইসময়ে আপনি তাকে পানি বা জুস এবং সাথে কিছু সাস্থ্যকর স্ন্যাক্স এনে দিতে পারেন। কিছুক্ষণ পরপর জানতে চাইতে পারেন যে তার কিছু লাগবে কি না বা ঘরের কোন কাজ করে দিতে হবে কি না।
২। শিশুকে কোলে নিয়ে রাখাঃ
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বাদে হেন কোন কাজ নেই যা নবজাতকের বাবা করতে পারেনা। শিশুকে কোলে নিয়ে দুলানো বাবার জন্যে একটি বিশাল সুযোগ শিশুর সাথে বন্ধন গাঢ় করার। স্কিনের সাথে স্কিনের এই সংযোগ যাকে কি না ‘ক্যাংগারু কেয়ার’ বলা হয় তা শুধু মা এবং শিশুর জন্যেই না, আপনি বাবা হিসেবে নির্দ্বিধায় যতক্ষণ ইচ্ছে এই সময় কাটাতে পারেন। নতুন মায়ের জন্যেও এই সময়টুকু হবে একটু বিশ্রামের।
৩। মাকে ঘুমাতে দিনঃ
নতুন মায়ের জন্যে ঘুমানোর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। বাবা যদি শিশু জন্মের পর মায়ের সব কাজেই অনেক সহযোগিতা করে থাকে সেক্ষেত্রে মা বাবা দুজনেরই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। সাধারণত নতুন মায়ের জন্যে পর্যাপ্ত ঘুমের সময় বের করে নেয়াটা খুবই কঠিন কারণ বেশির ভাগ নির্ঘুম রাত তাকেই কাটাতে হয় শিশুর সাথে। এই সময়ে বাবাই পারে একজন মাকে পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ করে দিতে। আপনি শিশুর সাথে কিছু একাকী সময় কাটাতে পারেন মাকে ঘুমের সুযোগ করে দিয়ে। মাকে আশ্বস্ত করুন আপনি শিশুর ঠিকমতো দেখা শুনা করবেন।
৪। শিশুর ডায়াপার বদলে দিনঃ
আপনি যে সময়টিতে বাসায় থাকছেন সে সময়ে শিশুর কিছু কাজ নিজে করে ফেলতে পারেন। নবজাতকের ডায়াপার দিনে অনেকবার বদলাতে হয়। বাবা যখনই সুযোগ পায় তখনই উচিৎ এই কাজটি করে ফেলা। একদুবার করলেই কাজটি অনেক সহজ মনে হবে এবং শিশুর মাও সঙ্গী হিসেবে আপনার উপর ভীষণ খুশি হবে।
৫। শিশুকে গোসল করিয়ে দিনঃ
নবজাতককে গোসল করানো আপাতদৃষ্টিতে বেশ কঠিন কাজ মনে হলেও এটি আসলে শিশুর সাথে বন্ধন দৃঢ় করার মতো একটি কাজ। প্রথম কিছুদিন আপনি শিশুর মাকে অনুসরণ করে কাজটি কিভাবে করতে হয় তা আয়ত্ত করে নিতে পারেন। মা যদি পারে তাহলে অবশ্যই আপনিও পারবেন। শিশুকে গোসল করানো খুবই মজাদার একটি মুহূর্ত।
৬। রাতে শিশুকে খাওয়ানোর সময় উঠুনঃ
শিশু বুকের দুধ বা ফর্মুলা যাই খাক না কেন আপনি বাবা হিসেবে মাঝে মধ্যে শিশুকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে পারেন। শিশু বুকের দুধ খেলে মাকে বলুন রাতের জন্যে পর্যাপ্ত দুধ পাম্প করে রাখতে। আর ফর্মুলা খেলে পরিমাণ অনুযায়ী নিজেই বানিয়ে খাইয়ে দিন। মনে রাখবেন আপনি কোন কোন রাতের যদি দায়িত্ব নেন তাহলে নতুন মায়ের জন্যে তা বিশাল একটি সুযোগ হবে বিশ্রাম
৭। শিশুর মার জন্যে রান্না করুণঃ
যেহেতু শিশুর মার দিনের একটা বড় অংশই চলে যায় শিশুর পরিচর্যামূলক কাজে তাই অন্যান্য কাজের সময় বের করা তার জন্যে বেশ কঠিন। পরিবারে আপনার সন্তান আসার আগে যদি রান্নার কাজটি আপনার সঙ্গিনী করে থাকতো তাহলে সন্তার আগমনের পরেও যে এমনতাই ঘটবে তা আশা করাটা হয়তো ঠিক নয়। এর পরিবর্তে কেন না আপনি নতুন মায়ের এই কঠিন সময়ে রান্নার কাজটি করে দিয়ে তাকে সারপ্রাইজ করে দিন।
৮। অথবা খাবার অর্ডার করুণঃ
আপনার যদি মনে হয় রান্না আপনাকে দিয়ে একেবারেই হচ্ছেনা তাহলে আপনি খাবার অর্ডার করতে পারেন বাইরে থেকে। এতে যদিও খরচ বেড়ে যাবে তবে মায়ের জন্যে কতখানি কাজ কমিয়ে দিবে একবার ভাবুন।
৯। নবজাতকের মার প্রশংসা করুণঃ
অনেক নতুন মাকেই তার পোষ্ট-প্রেগন্যান্সি শরীর নিয়ে চিন্তিত থাকতে দেখা যায়। অনেকেই আবার নতুন মা হিসেবে শিশু যত্নের অনেক কাজেই নিজেকে ঠিক দক্ষ মনে করতে পারেনা। আপনি তাকে বুঝিয়ে বলুন যে সে মা হবার আগেও সুন্দর ছিলো এবং মা হবার পরে এখন সে আরো বেশি সুন্দর। আপনি তার মা হিসেবে দায়িত্ববোধ এবং দক্ষতা দেখে কতটা মুগ্ধ হচ্ছেন তাও প্রকাশ করুণ।
১০। নতুন কিছু উপহার দিনঃ
আগের জামা গুলি মায়ের শরীরে এখন ফিট নাও হতে পারে। এটা নিয়ে তাকে মন খারাপের সুযোগ না দিয়ে আপনি তার জন্যে চট করে কিছু নতুন জামা কিনে ফেলুন। এছাড়াও উপহার দিতে পারেন বই, বা তার প্রিয় পারফিউম।
১১। কথা বলুন তার সাথেঃ
নতুন মা অনেক রকমের হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। এইসময় যতটুকু পারবেন তার সাথে কথা বলুন। তার মনের মধ্যে কি চলছে জানতে চান। এতে যে সে শুধুই কথা বলার সুযোগ পাবে তা না, বরং আপনাদেরও একে অন্যের কাছাকাছি আনবে।
১২। পার্লারে যাবার সুযোগ করে দিনঃ
এটি খুবই প্রয়োজনীয় নতুন মাকে প্যাম্পার করার জন্যে। ছুটির দিনে আপনি কিছুক্ষণ শিশুকে নিজের কাছে রেখে তাকে পাঠিয়ে দিন পার্লারে।
১৩। হাসানোর চেষ্টা করুণঃ
অনেক কাপলকেই দেখা যায় বাচ্চা হবার পরে সব বিষয়ে সিরিয়াস হয়ে যায়। মনে রাখবেন, হাসি ঠাট্টা দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো তো রাখবেই, এছাড়াও অনেক ক্লান্তিভাব দূর করে।
১৪। ধৈর্য ধরে রাখুনঃ
সন্তান প্রসবের পর থেকেই মায়ের শরীরে চলে অনেক হরমোনাল পরিবর্তন। ম্যুড সুয়িং এবং বেবি ব্লুজের মধ্যে দিয়ে অনেক মাকেই যেতে হয় এসময়। এসময়ে আপনি ধৈর্য হারালে চলবেনা একেবারেই। মনে রাখবেন, ভালোবাসা দিয়ে এই কঠিন সময়কে জয় করা অনেক সহজ।
( লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন আপনার পরিচিত অন্য বাবা-মাদের সাথে। আপনাদের কোন পরামর্শ ও মতামত থাকলে জানাতে ভুলবেন না। এছাড়া আর কোন বিষয়ের উপর ভবিষ্যতে লেখা দেখতে চান সেটি আমাদের কমেন্ট করে বা মেসেজ দিয়ে জানাতে পারেন)