ToguMogu
ToguMogu
article.title
 Jan 4, 2021
 6888

শিশুদের কৌতুহল বাড়ানোর ১০ টি সহজ উপায়

শিশুদের কৌতুহল বাড়ানোর সহজ কিছু উপায একটি শিশু যত বেশি কৌতুহলী হবে, সে ততটাই বেশি শিখতে পারবে। আপনার শিশুকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করতে হলে তার কৌতুহলের ব্যাপারগুলোকে খুব ভালোভাবে প্রতিপালন করতে হবে। ‘কৌতুহল’ বা Curiosity এর শক্তি হচ্ছে যে এটি আপনার শিশুকে অসংখ্য সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, চিন্তা এবং মতপ্রকাশের শক্তিকে উন্নত করে। আপনার শিশু যখন সচেতন হয়ে তার আশেপাশে পরিবেশ উপলব্ধি করে , তখন সে পৃথিবীর সবচেয়ে সৃজনশীল মানুষদের একজনে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। অনুসন্ধানী প্রশ্ন করা, সকল সম্ভাবনাকে তদন্ত করা, মনের মধ্যে সবসময় একধরনের রোমাঞ্চ ধরে রাখা আপনার শিশুকে ভবিষ্যতে একজন চমৎকার উদ্ভাবকে পরিনত করবে।

কৌতূহল (Curiosity) হল এমন একটা গুণ যেটা নিয়ে শিশুরা জন্মগ্রহণ করে থাকে। তারা নতুন একটি জগতে আসে এবং এই জগত কিভাবে কাজ করে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে।

এখানে আপনার শিশুর মধ্যে Curiosity বা কৌতুহল বাড়ানোর জন্য ১০ টি উপায় তুলে ধরছি –

১। আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আগ্রহ গড়ে তুলুনঃ

বাইরে হাঁটতে নিয়ে যান। আকাশ দেখান, গাছপালা দেখান। এগুলো নিয়ে কথা বলুন। “বলো তো আকাশটা কতো বড় ?” “বলো তো গাছের পাতাগুলো কেনো সবুজ হয়?” এভাবে প্রশ্ন করার মাধ্যমে আপনার বাচ্চার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের আগ্রহ গড়ে তুলুন এবং তাকে প্রশ্ন করতে শেখান।

২। আপনার বাচ্চার আগ্রহকে সমর্থন করুনঃ

বাচ্চারা সবকিছু থেকেই শেখে। তার যেসব বিষয়ে আগ্রহ সেগুলোকে প্রাধান্য দিন। সে যদি ছড়া পছন্দ করে, তাকে প্রতিদিন ছড়া শেখান। তার যদি আঁকাআঁকির দিকে ঝোক থাকে, তাহলে তাকে আঁকাআঁকিই করতে দিন। সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন বই কিনে দিন। আপনি যেভাবে গড়ে তুলতে চান সেভাবে না গিয়ে, সে যেভাবে গড়ে উঠছে সেভাবে গড়ে উঠতে দিন।

৩। বাচ্চার মানসিক উন্নতির সাথে মিল রেখে তাদের জিজ্ঞাসাগুলোর সরল ও পরিষ্কার উত্তর দিনঃ

প্রশ্ন করা বাচ্চাদের স্বভাব। একটু পরপরই তারা আশেপাশে যা দেখে তা নিয়েই প্রশ্ন করতে থাকে। বয়স ভেদে এসকল প্রশ্নের উত্তরগুলো বিভিন্ন রকম হয়। তাদের বোঝার ক্ষমতা অনুযায়ী প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। এমন কোনো উত্তর দিবেন না যা তাদের কাছে অপরিষ্কার থেকে যায় বা যেটা দ্বারা তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়না।

বাচ্চারা কখনো কোনো প্রশ্ন করলে প্রথমে তাদের মতামত জিজ্ঞেস করবেন। এরপরে সেটার রেশ ধরে আপনি আপনার উত্তরটি দিন আড্ডা দেয়ার মতো করে। যেমন, আপনার বাচ্চা যদি প্রশ্ন করে যে “আকাশ কেন নীল ?” আপনি তাকে বলুন “তুমি বলো, তোমার কি মনে হয় ?” এরপরে আপনি আপনার উত্তরটি দিন। এতে করে নিজেদের প্রশ্ন নিজেদের সমাধান করার একটা চেষ্টা গড়ে উঠবে তাদের মাঝে।

৪। লাইব্রেরির সাহায্য নিনঃ

বিভিন্ন ধরণের কৌতুহল মেটানোর এবং নতুন কৌতুহল সৃষ্টি করার জানালা হচ্ছে বই। আপনার বাচ্চাকে তার বয়স উপযোগী লাইব্রেরিতে নিয়ে যান। তাকে সেখানে মুক্তভাবে বই পছন্দ করতে দিন। এরপরে দুজনে মিলে একসাথে সেই বইটি পড়ুন।

শিশুর বয়স উপযোগী বাছাই করা বই দেখুন

বাচ্চাদের নিয়ে করা গবেষণাগুলোতে উঠে আসে যে, রকেট সাইন্স হোক বা কমিক বই হোক, যেটাই পড়ুক না কেন, তারা যদি তাদের আগ্রহ নিয়ে থাকে তাহলেই তাদের কৌতুহল এবং চিন্তাধারার উন্নতি সাধন ঘটে।

৫। Open ended প্রশ্ন করে আপনার বাচ্চার চিন্তাকে উদীপ্ত করুনঃ

যেসকল প্রশ্নের হ্যাঁ বা না তে উত্তর নেই, যেসকল প্রশ্নের মাধ্যমে কোনো কিছু নিয়ে অনুভূতি বা অভিজ্ঞতাকে জানতে চাওয়া হয়, আপনার সন্তানকে সেসকল প্রশ্ন করুন। যেমন, “গান শুনতে তোমার কেমন লাগে?” “আজকে শিশুমেলা ঘুরে তুমি কেমন মজা করলে?” “স্কুলে আজকে কি কি করলে?” – এই ধরণের বিস্তারিত উত্তরের প্রশ্নগুলো করুন। এই ধরণের প্রশ্নগুলো আপনার সন্তানের চিন্তা এবং অনুভুতি বিকাশিত করবে, তার কাছে আকর্ষনীয় ব্যাপারগুলো উঠে আসবে এবং তার ভেতরের ব্যাপারগুলোর সাথে আপনি সবসময় অবগত থাকতে পারবেন।

৬। কৌতুহলোদ্দীপক পরিবেশ গড়ে তুলুনঃ

বাচ্চারা যতটুকুসময় চলাফেরা করে তার এক-পঞ্চমাংস সময় কোন কিছুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আশেপাশের জিনিসগুলো নিয়ে তারা সবসময়ই কৌতুহলী থাকে। দেয়ালে লাগানো ছবি বা পরিবারের দৈনন্দিন কার্যক্রম সবসময়ই তাদের আকর্ষণ করে। তাই আপনার সন্তানের জ্ঞানলাভের জন্য তাকে নিরাপদ খেলনা এবং পরিবেশ দিন। কিছুদিন পরপর অবশ্যই তাকে বিভিন্ন রকম নতুন নতুন খেলনা কিনে দিবেন।

৭। কখনো নিরুৎসাহিত করবেন না, প্রয়োজনে পুনঃনির্দেশনা দিন ঃ

সবসময়য় এটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন, কোন জিনিসটি আপনার সন্তানের আকর্ষণ কাড়ছে, কোন জিনিসটি সে শেখার চেষ্টা করছে । এরপরে সেটা শেখার জন্য একটি নিরাপদ, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন। যেমন, আপনার সন্তান যদি প্রায়ই জানালা দিয়ে বাড়ি নির্মানের কাজগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখে, তাহলে তাকে নিরুৎসাহিত না করে এর কাছাকাছি কোনো একটি বিকল্প ব্যবস্থা করে দিন। এক্ষেত্রে আপনি লেগো খেলনাগুলো দিয়ে কিভাবে বাড়ি বানাতে হয় সেগুলো শেখাতে পারেন। অথবা শক্ত কাগজের বিভিন্ন পাজেল পাওয়া যায় যেগুলো সঠিকভাবে জায়গামতো বসিয়ে বাড়ি/গাড়ি নির্মাণ করা যায়, সেগুলো দিতে পারেন তাকে। এভাবে তাদের আগ্রহগুলোকে নিরুৎসাহিত না করে বিকল্প পথ খুঁজে দিন। এতে করে তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়বে, সৃজনশীল কাজ এবং বিভিন্ন কাজের গ্রহনযোগ্য সমাধানের পথগুলো শিখতে পারবে।

৮। বিভিন্ন সৃজনশীল কার্যক্রমের জন্য সুযোগ করে দিনঃ

কিছু কিছু খেলনা থাকে যেগুলো একেকটি নির্দিষ্ট উপায়ে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়ে থাকে। এছাড়া আরো কিছু খেলনা থাকে যেমন, বক্স, ব্লকস, পানি, বালু, হাড়ি-পাতিল এবং বিভিন্ন কারুশিল্প যেগুলোর কোনো নির্দিষ্ট ব্যবহার থাকেনা, বাচ্চারা তাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই জিনিসগুলো দিয়ে খেলা করে। এই ধরণের খেলনাগুলো দিয়ে খেলার সুযোগ করে দিন তাদেরকে। কিভাবে খেলতে হবে এ ব্যাপারে আপনি তাদের কিছুই জানাবেন না, তারা কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে এগুলো দিয়ে খেলা করবে।

'Kids Time' এর সৃজনশীলতা বাড়ানোর বিভিন্ন কোর্স

৯। অনুধাবন করতে শেখানঃ

মাঝেমধ্যে কিছু কিছু জিনিস ধরে ধরে অনুধাবন করা শেখাতে পারেন। যেমন- “দেখেছো পিপড়াগুলো কি সুন্দর লাইন ধরে হাঁটছে? ” ” দেখেছো রংধনুটিতে কতগুলো রঙ আছে?”  আবার কিছু স্মৃতিমূলক প্রশ্নও করতে পারেন। “বলতো আজকে সাকিবদের বাসাতে কয়টি বিড়াল ছিলো?” অথবা ”আজকে বাবার অফিসে বেড়াতে গিয়ে কি কি খেয়াল করেছো?” বা  “বলোতো এই দুটি ছবি মধ্যে কি কি পার্থক্য আছে?”

১০। অতিরিক্ত শাসন করবেন না :

আপনার সন্তানকে তার কাজগুলো মুক্তভাবে করতে দিন। কি করতে হবে, কি করতে হবেনা- এগুলো সবসময় বলে বেড়াবেন না। যেমন, “এই স্থানটুকু লাল রং করো”, “খেলনাগুলোকে এভাবে সাজাও” – এই ধরণের নির্দেশনাগুলো সবসময় দেয়া থেকে বিরত থাকুন। তাকে নিজে থেকে চিন্তা করে জিনিসগুলো বের করতে দিন। ভরসা রাখুন, প্রায় সময়ই আপনি তার কাজ দেখে অবাক হয়ে যাবেন। আপনার বাচ্চা কি করছে তা সবসময় মেপে দেখার অভ্যাসটাকে বাদ দেয়াও একটি ভালো দিক। আপনি তার কাজটিকে মাপকাঠি না করে বরং তাকে ব্যাখ্যা করতে দিন আপনার কাছে। “তোমার ড্রইং টি একটি গাড়ির মতো দেখাচ্ছে, আমি কি ঠিক বলছি? ” – এই ধরনের মন্তব্য না করে বরং তাকে বলুন “বাহ! তোমার ড্রইংটি তো বেশ সুন্দর। আমাকে একটু শেখাও এই ড্রইংটির ব্যাপারে, কি আঁকছ এবং আমি সেটা কিভাবে আকতে পারবো “।

এছাড়াও আরো হাজারো উপায় আছে আপনার বাচ্চার মধ্যে কৌতুহল তৈরি করার। যদি আপনারা তার পাশে থাকেন এবং সমর্থন দিয়ে যান তাকে।

একসময় হয়তো সে অনেক বড় কিছুই করে ফেলবে। তাই তাদের নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ না রেখে মুক্ত করে দিন জ্ঞানের সমুদ্রে।

সন্তানের সৃজনশীলতার চর্চা করান কিডসটাইমের কোর্সে।কিডসটাইমের কোর্স গুলো দেখতে ভিজিট করুন নিচের লিংকে :

ToguMogu App