ToguMogu
ToguMogu
article.title
 Jun 10, 2019
 3611

বাচ্চা প্রতিদিন একই সময়ে চিৎকার করে কাঁদে?

হঠাৎ আপনার পাঁচ মাস বয়সী বাচ্চাটি চিৎ’কার করে কান্না শুরু করলো, সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সে একটানা কেঁ’দেই যাচ্ছে। কোনভাবেই শান্ত হচ্ছেনা। পরপর সাত আটদিন ধরে এই ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে দুই থেকে ছয়মাস বয়সী প্রায়  ২০-২৫% বাচ্চার একটি সাধারণ চিত্র এটি- টানা কিছুদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন কারণ ছাড়াই কা’ন্না।

ছোট বাচ্চার এরকম কান্নাকাটি পরিবারের অন্যদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়! বারবার ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হচ্ছেন। কোন শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ডাক্তার বুঝিয়ে দেবার পরও আপনার মন মানছে না। আশেপাশের কোন কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রতিবেশী কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ কারো কথায় আপনিও বিশ্বাস করতে শুরু করলেন – বাচ্চার উপর জি’ন ভূ’তের উপদ্রব হয়েছে! নইলে প্রতিদিন একই সময়ে কা’ন্নাকাটি করছে কিভাবে – বাচ্চা তো আর ঘড়ির সময় বোঝেনা! ব্যস,শুরু করে দিলেন তাবি’জ কবজ, ঝা’ড়ফুঁক চিকিৎসা! বাংলাদেশ তথা এই গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই এই প্রথা চালু আছে!

 

কোলিকঃ

বাচ্চাদের প্রতিদিন এই নির্দিষ্ট সময় ধরে কান্নাকাটিকে বলা হয় কোলিক (Colic) বা ইনফ্যান্টাইল কোলিক (Infantile colic).

লক্ষণসমূহ:

  •  এই কা’ন্নাকাটিকে কোলিক বলতে হলে অবশ্যই নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পূরণ করতে হবে-
  • শিশুর বয়স ২-৬ মাসের মধ্যে। তবে দুই সপ্তাহের এবং ছয়মাসের বেশী বয়সী বাচ্চাদেরও হতে পারে।
  • প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি করে পরপর তিনদিন কিংবা সপ্তাহে তিনদিন করে তিন সপ্তাহ।
  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে কা’ন্না। সাধারণত বিকাল থেকে রাতের মধ্যে।
  • কোন দৃশ্যমান সময় খুঁজে পাওয়া যাবেনা ডাক্তারের কাছে গেছে।
  • কা’ন্নার সময় বাচ্চা সাধারণত অস্থিরতা দেখায়। এছাড়াও হাঁটু ভাজ করে পেটের দিকে রাখে,মুখমণ্ডল লাল, কপালে ভাজ এবং হাত শক্ত করে মুঠি করা থাকে।

কারণ:

ছেলে মেয়ে উভয় শিশুই কোলিকে আক্রা’ন্ত হয়। উল্লেখিত ২০-২৫% এর মধ্যে ৫% বাচ্চার শারীরিক সমস্যা খুঁজে পেতে পারেন ডাক্তার। তবে বেশিরভাগেই কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না। এসব ক্ষেত্রে কিছু মতবাদ/অনুমান কারণ হিসেবে ধরা হয়। যেমন-

  • # খাবারের সাথে গিলে ফেলা বাতাস (পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করে বলে ধারণা করা হয়,যদিও তা সাধারণত পায়ুপথে বের হয়ে যায়)।
  • # বাচ্চার খাবারের মাধ্যমে হতে পারেঃ মিল্ক প্রোটিন অ্যালার্জি , মিল্ক প্রোটিন ইনটলারেন্স, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, ল্যাকটোজ ওভারডোজ
  • #এছাড়াও আয়রন জাতীয় খাবারের কারণে হতে পারে (আয়রন পেটে গ্যাস তৈরি,কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটায়)
  • # মায়ের খাবারের কারণে। এসব খাবার যদি হয়- পেটে গ্যাস তৈরি করার মতো সোডা (কোমল পানীয়) ক্যাফেইন (চা,কফি) মায়ের অ্যালার্জি হয় যেসব খাবারে।
  • # পেটের সমস্যা – রিফ্লাক্স/ রিগারজিটেড স্টোমাক কনটেন্ট, গ্যাস্ট্রো-কোলিক রিফ্লেক্স
  • # কোষ্ঠকাঠিন্য
  • #ঠিকমতো খাবার হ’জম না হওয়া
  • #বাচ্চাকে ঠিকমতো কোলে না নেয়া থেকে স্ট্রেস।
  • #বাচ্চার খিটখিটে মেজাজ।
  • #স্নায়ুর সংবেদ’নশীলতা।
  • #ঘুম না হওয়া।
  • #ভ্যাগাস নার্ভের উপর কোন কারণে কশেরুকার চাপ।
  • # অন্যান্য কারণ,যেমন- মুখের ভিতরের ইন’ফেকশন, দাঁতের মাড়িতে ব্যথা, চামড়ার গভীরের র‍্যাশ।

 

চিকিৎসা/ করণীয়:

যেহেতু কোলিক এ সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না,তাই এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য কারণগুলো এড়িয়ে চলতে বলা হয়। তবে অবস্থা বুঝে চিকিৎসক কিছু অ্যান্টি’কোলিক মেডিসিন যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন,অ্যান্টিস্পাজমোটিক,সিডেটিভ,অ্যান্টাসিড ইত্যাদি সাজেস্ট করতে পারেন।

যেহেতু কোলিক একটি প্রায় স্বাভাবিক ঘটনা,ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। নির্দিষ্ট সময়ে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বাচ্চাকে এসময়ে যথাসম্ভব রিল্যাক্সড রাখতে হবে। কান্না থামাতে অবশ্যই তাকে প্রবলবেগে ঝাঁকানো যাবেনা। এতে বাচ্চার ব্রেন ড্যামেজ হবার সম্ভাবনা থাকে। সৌজন্যে- ডক্টোরোলা ডট কম

ToguMogu App