জন্ম থেকে ২ বছর পর্যন্ত শিশুর সাথে যেভাবে কথা বলা উচিৎ
মা বাবার ফোকাস কখনই শিশু কয়টি শব্দ বলতে পারছে তা হওয়া উচিৎ না। বিশেষজ্ঞের মতে “শিশুর সাথে সারাদিন কথা বলে বাবা-মার ক্লান্ত হবার কোন প্রয়োজন নেই। টার্গেট সেট করে দিনে শিশুকে এতটা শব্দ শেখাবো ব্যাপারটা ঠিক এমনও নয়। বরং তাদের উচিৎ সময় দেয়া ছোটছোট কোয়ালিটিসম্পন্ন ভাব আদানপ্রদানে।” নবজাতক থেকে ২ বছর বয়সী শিশুর সাথে কোন পর্যায়ে কিভাবে কথা বলা উচিৎ সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে হার্ভাড গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং বসটন মেডিকেল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ সম্মিলিতভাবে। আমরা টগুমগু থেকে তা তুলে ধরছি আপনাদের সাথে।
১। কথা বলার ধরণকে অতিরঞ্জিত করুনঃ
যখন নিজেদের স্বরে স্বাভাবিক গলায় শিশুর সাথে কথা বলা হয় তখন শিশু সাধারণত সাড়া দেয় না তাতে। এই বয়সে শিশুকে আকর্ষণ করার জন্যে মা বাবাকে কথা বলার সময় যা করতে হবে তা হল গলার স্বরের উঠানামা করা, চোখ বড় বড় করা, কোমল ভালবাসাময় অভিব্যক্তি দেখানো এবং শিশুর চোখে তাকিয়ে থাকা। একই শব্দ বা বাক্য বারবার বলা যেতে পারে। কিভাবে কথা বলা আপনার শিশু পছন্দ করছে তা খুঁজে বের করুণ এবং তাই বারবার করুণ। জেনে রাখুন এইসময়ে শিশুদের দৃষ্টি এবং শ্রবনশক্তি ধীরেধীরে কাজ করে। বয়সের সাথে আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে।
২। শব্দ বা আওয়াজে সাড়া দিনঃ
শিশু যাই আওয়াজ বা শব্দ করে তাতে সাড়া দিনএই সময়ে শিশু বিভিন্ন আওয়াজ করতে থাকে, এইসব আওয়াজে মা বাবাকে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে। যেমন ছড়া বলার সময় যদি শিশু যদি কোন আওয়াজ করে তাহলে সাথে সাথে আপনি চোখ বড় করে অভিব্যক্তি দিয়ে জিজ্ঞেস করুন “ছড়া মজা লেগেছে? আবার বলবো?” এই বলে ছড়াটি আবার বলুন। মনে রাখবেন, শিশুরা টিভিতে একই শব্দ বারবার শুনে ভাষা শিখেনা; শিখে মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদানের মাধ্য৩। শিশু যা দেখতে পাচ্ছে সে বিষয়ে কথা বলুনঃ
বিশেষজ্ঞের মতে এই বয়সী শিশুরা সামনে যে বস্তুটি দেখতে পাচ্ছে সে বিষয়ে কিছু বললে তা চট করে ধরে ফেলে। কোন একটা বিষয় নিয়ে শিশুর সাথে কথা বলুন। যেমন গল্পের বই সামনে ধরে ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে তার নাম বলুন শিশুকে। গোছলের সময় পানির সাথে পরিচয় করিয়ে দিন, খাবার সময় কি খাচ্ছে তা বলুন, খেলার সময় হাতে যে খেলনাটি ধরে আছে তার নাম বলুন। ছাদে নিয়ে গিয়ে পাখি দেখিয়ে উচ্ছসিত গলায় বলুন ঐ যে পাখি, পাখি উড়ে যাচ্ছে।
৪। শব্দের পুনরাবৃত্তিঃ
পুনরাবৃত্তিটাই আসল যে কোন দক্ষতা অর্জনের অনুশীলনে। শিশুর সাথে কথা বলার সময় যে বিষয়ে কথা বলছেন তা বারবার পুনরাবৃত্তি করুণ। যেমন খেলার সময় তার প্রিয় খেলনাটির নাম বারবার বলুন।
৫। অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করুণঃ
শিশুরা ৯ মাস থেকেই অঙ্গভঙ্গি বুঝতে পারে। যখন আপনি হাত তুলে তার প্রিয় খেলনাটি দেখাবেন তখন সে বুঝে যাবে যে সে এখন খেলবে। আঙ্গুল দিয়ে কিছু পয়েন্ট করে দেখানটা হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন যা শিশুর সাথে করা উচিৎ। পয়েন্টিং এর মাধ্যমে শিশু যেকেনো বস্তুকে চিনতে শিখে। আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে তারপর বস্তুটির নাম বলুন শিশুকে তারপর তা নিয়ে কিছুক্ষন গল্প করুন শিশুর সাথে। এছাড়া যে অঙ্গভঙ্গিগুলো শিশু এই সময়ে শিখবে তা হল- মাথা ঝাঁকান মানে না বলা, হাত নাড়ান মানে টাটা দেয়া ইত্যাদি। অঙ্গভঙ্গি ব্যবহারে এই প্রাথমিক পার্থক্য শিশুদের শব্দভান্ডারের দক্ষতা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৬। কি, কে, কোথায় জাতীয় প্রশ্ন করুনঃ
কথোপকথনের এই লেভেলে শিশুর ভাষার দক্ষতা অনেক বেড়ে যায়। ভাষার দক্ষতার পাশাপাশি শিশুর স্মৃতিশক্তি আর নতুন কিছু শেখার ক্ষমতাও বেড়ে যায়। প্রশ্নের মাধ্যমে শিশু শেখে কিভাবে একটি কথা বা কথোপকথন শুরু করতে হয়।
৭। বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করুণঃ এটাই বয়স শিশুর গল্পের বই সংগ্রহ শুরু করার। নতুন নতুন শব্দের সাথে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে বিভিন্ন রকমের বই খুঁজে বের করুণ। এটাই সময় শিশুকে যতবেশি সম্ভব শব্দ চেনানো।
মা-বাবার জন্য এখন Togumogu নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের প্রথম Parenting app যার মাধ্যমে প্রেগনেন্সি থেকে শুরু করে ১২ বছর পর্যন্ত শিশুর সকল ধরনের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস পেয়ে যাচ্ছেন একটি App এ।অভিভাবকের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আর্টিকেল যা আপনার সাথে শিশুর বেড়ে উঠাকে করে তুলবে আরও সহজ এবং নিরাপদ। আমাদের সংগ্রহে রয়েছে ৩-৬ বছরের শিশুদের গল্পের বইয়ের সিরিজ, যা আসলে ১-২ বছরের শিশুদের জন্যও উপযোগী। কারণ বইগুলোতে আছে অনেক রঙিন ছবি যা ২ বছরের শিশুদের পড়ায় আগ্রহ তৈরি করবে। শিশুদের Moral Values বা নৈতিকতা বোধ শিক্ষার বিভিন্ন বই খুব সহজেই পেতে পারেন এখানে।