প্রতিটি শিশুর মেধার সুষ্ঠু বিকাশের প্রথম ধাপ তার পরিবার থেকেই শুরু হয় শুধু পুথিগত বিদ্যাতে একটি শিশুর পরিপূর্ণ মেধা বিকাশ হয়না। শিশুর বুদ্ধি বিকাশে খেলা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই শিশুর মেধার ভিত মজবুত করতে হলে তাকে খেলাধুলা ও হাসি আনন্দের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে বুদ্ধিমান ও মেধাবী করে তুলতে হবে।
সবধরনের খেলাতেই কিন্তু মেধার বিকাশ হয়না। কোন খেলার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর মেধার বিকাশ সাধন করতে পারবেন সেটা নিয়ে আগে আপনাকে একটা পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে হবে। বাচ্চাকে অতি বুদ্ধিমান করে গড়ে তুলতে গিয়ে তার মাথায় অবশ্যই পাহাড় সমান বোঝা চাপিয়ে দেয়া উচিত না । আপনার বাচ্চার মেধার ধারণ ক্ষমতা বুঝে নিয়ে তাকে বিভিন্ন ব্রেইন বুস্টিং খেলার সাথে পরিচিত করান।
শিশুর মেধা বিকাশে সাহায্য করবে এমন কিছু খেলা নিয়েই আজকের আয়োজন।
দাবা:
শিশুর বুদ্ধিমত্তার বৃদ্ধি সাধনের প্রথম ধাপ হিসেবে দাবাকে ধরা যেতে পারে। ভেনিজুয়েলায় ৪০০০ শিক্ষার্থীর উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে দাবা খেলে এমন ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই ৪ মাসের মধ্যে আইকিউ স্কোর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আপনার সোনামণিকে মেধাবী করে তুলতে চাইলে তাকে খেলার ছলে দাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তবে মনে রাখবেন দাবা যেহেতু বড় ছোট উভয়ের খেলা সেহেতু বাচ্চার মাথায় চাপ সৃষ্টি করবেন না ভুলেও। সে যাতে পুরো খেলাটা উপভোগ করতে পারে সেটা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। একবার আপনার বাচ্চা মজা পেয়ে গেলে মেধার বিকাশ এবং খেলাধুলা দুইটাই হবে।
সুডোকু:
আমেরিকান একদল বিজ্ঞানী সুডোকু খেলাকে ব্রেইনগেম বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটি এমন একটি খেলা যা শিশুর মেধা বিকাশে ও মস্তিষ্ক বিকাশে খুবই সহায়ক। মজার এই খেলাটি আপনার সন্তানের মধ্যে ইউনিটি বা দলগত শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিবে আবার একই সাথে আপনার বাচ্চাকে মনযোগী ও শান্ত হতে উত্সাহী করে তুলবে।
লুডু:
লুডু খেলার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই লুডু খেলাও কিন্তু আপনার শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে আরও একটি অন্যতম সহযোগী খেলা। সময় পেলে আপনার সোনামণিকে নিয়ে লুডু খেলতে বসতে পারেন। আপনার বাচ্চাকে সাপ লুডু খেলার সাথে আগে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে একটু একটু করে খেলার নিয়ম কানুন গুলো বুঝিয়ে দিন। মজার এই খেলাটি আপনার সন্তানকে অংক ভীতি থেকে বের করে আনবে।
পাজল গেম:
বাচ্চাকে মেধাবী করে তোলে এমন আরও একটি খেলা হল পাজল গেম। ভীষণ মজার এই খেলাটি আপনার সন্তানকে মনযোগী করে তুলবে। তবে আপনাকে অবশ্যই খেলাটির মজার অংশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে
কিউব:
পাজল গেমের মতো কিউব গেমও শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। বেশ কিছু রঙের সমন্বয়ের এই খেলাটি যেমন মজার ঠিক তেমনি আপনার শিশুকে বুদ্ধিমান করে তুলবে।
ভিডিও গেম:
একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে ভিডিও গেমস খেলা বদভ্যাস এটা সত্যি, তবে ভিডিও গেমস কিন্তু বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে অনেক সাহায্য করে। আপনার সন্তান কতটুকু সময় কম্পিউটারের সামনে বসে গেমস খেলবে সেটা আপনি নির্ধারণ করবেন কিন্তু বুদ্ধির বিকাশে শিশুর খেলার তালিকায় ভিডিও গেমস টা রাখার চেষ্টা করবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, এটি যেন শিশুর নেশায় রূপ না নেয়।
গুপ্তধন খোঁজা:
আমাদের কাছে গুপ্তধন মানেই সোনা-দানা, অর্থ সম্পদ আরও কতকিছু। কিন্তু আপনার বাচ্চার কাছে সামান্য একটা টেডি বিয়ার, একটা চকলেট অথবা একটা খেলনা বল বিশাল রকমের গুপ্তধন হতে পারে । আপনার সন্তনের বুদ্ধি বিকাশে এই সামান্য খেলনা গুলো কাজে লাগাতে পারেন। একটা টেডি বিয়ার, চকলেট বা খেলার বল নিয়ে কোথাও লুকিয়ে রেখে আপনার সন্তানকে খুঁজতে দিন। চাইলে আপনি এতে ক্লু হিসেবে কুইজের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। যখন সে জিনিসটা খুঁজে পাবে তাকে কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না। এই খেলাটা আপনার বাচ্চার একাগ্রতা ও মনোযোগ বাড়াবে আর তার কৌতুহল ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ইনডোর বাস্কেটবল:
ইনডোর বাস্কেটবল আরও একটি খেলা যা আপনার শিশুর মেধার বিকাশ ঘটাবে। অবসর সময়ে সময় কাটাতে পরিবারের সদস্যরা মিলেই খেলতে পারেন। খুব ভালো পারিবারিক পরিবেশে আপনার সন্তানের শারীরিক মানসিক উভয়ের অগ্রগতি সাধন হবে। শিশুর সঠিক বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে ইনডোর বাস্কেটবল খেলা লিস্টে রাখুন।
গুনতে শেখানো:
আপনার পাশে বসিয়ে আহামরি ধরণের কোন খেলনা বা সময় অপচয় না করে যে খেলার মাধ্যমে আপনার বাচ্চার মেধা বাড়িয়ে তুলতে পারেন তা হলো শিশুকে গুনতে শিখানো। সাধারণ কোন জিনিস নিয়েই খেলার ছলে আপনার সন্তানতে গুনতে শেখান। যেমন, একটি প্লেটে কয়েকটি মটর দানা, ছোলা বুট বা চকলেট দিয়ে বাচ্চাকে পাশে বসিয়ে তাকে গুনতে শেখান। কোন বইয়ের বা পত্রিকায় কতটি ছবি আছে তা গুনতে বলুন। দেখবেন আপনার সন্তান আগ্রহী হয়েই তা নিয়ে খেলবে আবার গুনতেও শিখবে।
রঙ তুলি নিয়ে খেলা:
শিশুর বুদ্ধি বিকাশে রং-তুলি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। আপনার ছোট্ট সোনামণির সুপ্ত মেধা বিকাশ তো বটেই আঁকাআঁকির মাধ্যমে সে মানসিক ভাবেও সৃজনশীল হবে। তাই বাচ্চার খেলার তালিকায় রংতুলি রাখতে ভুলবেন না।
মনে রাখবেন কোন বাচ্চাই বিশেষ কোন মেধা নিয়ে জন্মায় না। তারা একটু একটু করে যেমন কথা বলা হাঁটাচলা করতে শেখে ঠিক সেভাবেই তাদের বুদ্ধি আর মেধার বিকাশ ঘটতে থাকে। তাই বাচ্চার উপর কখনোই কোন কিছু শিখতে বা বুঝতে চাপ দিবেন না। ওরা ঠিক নিজেদের মতো করেই শিখে আর বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার কাজ হবে সঠিক উপায়ে সুন্দর ভাবে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটে এরূপ সব কিছুর সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
সন্তানের সৃজনশীলতার চর্চা করান কিডসটাইমের কোর্সে।কিডসটাইমের কোর্স গুলো দেখতে ভিজিট করুন নিচের লিংকে :