ToguMogu
ToguMogu
article.title
 May 29, 2021
 4626

৩ থেকে ৪ বছর বয়সী বাচ্চাদের মিথ্যে বলার প্রবণতার কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয়

কেন এ বয়সে বাচ্চারা মিথ্যে কথা বলে?

যখন আপনার ৩-৪ বছর বয়সী বাচ্চাকে আপনি জেরা করেন এবং সে নিজের মনমতো লম্বা কোন কাহিনী বানায় অথবা আপনার কাছে অস্বীকার করে তার মানে এই না যে সে মিথ্যে কথা বলছে। সাধারনত এই বয়সী বাচ্চাদের জন্যে বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যেকার তফাৎ বুঝাটা খানিকটা কষ্টকর।

 

কারনঃ

১. ৩-৪ বয়সী বাচ্চারা সাধারনত একটু ভুলোমনের হয়। কোন একটা কাজ করলে সে খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। তাই কোন কিছু সে যখন নিয়ে লুকিয়ে রাখে এবং আপনি জিজ্ঞেস করলে অস্বীকার করে, এর কারণ হতে পারে খুব সম্ভবত তার ঘটনাটির কথা মনেই নেই। তাই সে অস্বীকার করে যে সে এই রকম কিছু করেছে।

২. যখন আপনি দেখবেন যে কোন একটা কাজ করার পরও আপনার বাচ্চা জোর গলায় বলছে সে তা করে নি তখন এর পিছনে কারণ হতে পারে, সে মনে প্রানে চাচ্ছে যা সে করেছে সেটা যেন না হয়ে থাকে। এই প্রবল আকাঙ্ক্ষাশক্তির মধ্যে সে নিজেকে এমনভাবে হারিয়ে ফেলে যে, সে ভুলেই যায় যে সে কি করেছে। যা সাধারনভাবে চিন্তা করলে মনে হবে যে বাচ্চা মিথ্যে কথা বলছে।

৩. এ বয়সে বাচ্চাদের কল্পনাশক্তি খুবই প্রখর থাকে। তারা নানা রকমের কল্পকাহিনী চিন্তা করে এবং ভাবে যা তারা চিন্তা করছে তা আসলেই বাস্তবে ঘটছে। তাই তারা যখন উদ্ভট সব কাহিনী বলে এর কারণ হতে পারে তারা হয় সেসব কিছু স্বপ্নে দেখেছে অথবা এসব নিছক তাদের কল্পনা।

৪. এ বয়সী বাচ্চারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। সবাই তাদেরকে নিয়ে কথা বলুক, তাদের সাথে খেলুক, তাদেরকে ভালবাসুক এটাই তাদের চাওয়া থাকে। এর ফলে তারা নানা ধরনের অদ্ভুত গল্প বলে, যেন আপনার মনোযোগ শুধু তার দিকেই থাকে।

৫. অনেক সময়ই বাচ্চাদের দেখা যায় বলতে আমি আজকে আমার ছোট ভাই বা বোনকে দোলনা থেকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছি বা এধরনের অন্য কোন সাহসীকতার গল্প। এর কারণ হতে পারে তারা নিজেরা এই ধরনের চিন্তা করে আনন্দ পায় এবং অন্যের কাছে তাদের কাল্পনিক সাহসিকতার গল্প শোনাতেও পছন্দ করে।

আপনার যা করনীয়ঃ

১. আপনার মনে হতেই পারে মিথ্যে বলাকে প্রশ্রয় দেয়া আপনার উচিৎ নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে বেশি চিন্তা না করে বাচ্চার প্রতিদিন বানানো নতুন নতুন গল্প উপভোগ করা উচিৎ। তাদের বয়সটাই এমন যে তারা আশেপাশে যা দেখে তা নিয়ে নিজে নিজেই কোন গল্প বানিয়ে ফেলে এবং ওইসব জিনিস নিয়েই চিন্তায় মগ্ন থাকে। ফলে একটা সময় তারা কল্পনা আর বাস্তবতাকে এক করে ফেলে। তাই ৩-৪ বছর বয়সী বাচ্চা যদি বলে যে সে তার Imaginary Friend এর সাথে পুতুল খেলছে তাহলে ভয় পাবেন না। এটা শুধুই তার কল্পনা, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।

২. তাকে মিথ্যে কথা বলতে শুনলে কখনই বকা দিবেন না। তাহলে সে ভয় পেয়ে অস্বীকার করতে চাইবে। সে যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করা নিয়ে জোরাজোরি না করে বরং এমন ভাবে বলুন যেন সে তার ভুল স্বীকার করুক বা না করুক কিন্তু ভুলটিকে শুধরিয়ে নেয়। যেমন ধরুন ড্রয়িং রুমে খেলনা পরে থাকতে দেখলে আপনি যা করতে পারেন তা হল, আপনার বাচ্চাকে ডাকুন এবং বলুন- “কে যে এখানে এতোগুলো খেলনা ফেলে রেখেছে, আমাকে সাহায্য করার কেউ নেই, তুমি কি আমাকে এগুলি গুছিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারবে?”

৩. অনেক সময়ই বাচ্চারা ভুল কিছু করে ফেলে যেমন- কার্পেটে জুস ফেলে দেয়া, টেবিলে পানি ফেলে দেয়া, সোফায় খাবার ফেলে দেয়া ইত্যাদি এবং শিকার করতে চায় না। তাদেরকে বলুন যে, ভুল করাটা স্বাভাবিক এবং ভুল করলে সবসময় নিজের ভুল স্বীকারও করতে হয়। ভুল হয়ে গেলে তা শুধরিয়ে নেয়ার দায়িত্বও নিজেকেই নিতে হয়। কয়েকবার এভাবে তাকে বুঝাতে থাকুন, ধীরে ধীরে সে বুঝে যাবে।

৪. এ বয়সে বাচ্চারা গল্প শুনতে খুব ভালবাসে। অনেক সময়ই দেখা যায় তাদেরকে কিছু বুঝালে তারা বুঝতে চায় না কিন্তু একি কথা যদি গল্পের মাধ্যমে বুঝানো হয় তাহলে তা তার মনেও থাকে ভাল এবং সে ব্যাপারটি বুঝেও সুন্দর করে। তাই কিছু সম্পর্কে যদি তাদের জ্ঞান দিতে হয় তবে গল্পের মাধ্যমে দিন।

৫. যখন আপনার বাচ্চা কোন ভুল করে তা স্বীকার করবে তখন তাকে বাহবা দিন। উলটো তার উপরে রাগ করবেন না কখনোই। যদি আপনি রাগ করেন তাহলে সে পরবর্তীতে আর স্বীকার করতে চাইবে না যে সে কোন ভুল করেছে। ছোটখাটো সব ব্যাপারে তাকে বকাঝকা করবেন না। আশ্বস্ত করুন যে, যত বিপত্তিই আসুক না কেন আপনি তাদের সবসময় ভালবাসবেন।

৬. বাচ্চাদেরকে ভালো আচরণ শিখাতে হলে প্রথমে উদাহরণস্বরূপ নিজে করে তাদের দেখাতে হয়। ভুল করলে ক্ষমা চাওয়া, কারও কাছ থেকে উপকৃত হলে ধন্যবাদ জানানো ইত্যাদি যদি আপনার বাচ্চা আপনাকে করতে দেখে তাহলে সে বেশি তাড়াতাড়ি শিখবে।

আপনার এ বয়সী বাচ্চার মিথ্যে শুনে ঘাবড়ে না গিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন। কারণ আপনার বাচ্চা মিথ্যে বলছে বা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে এর মানে হচ্ছে ও কল্পনা করতে পারছে। খনিশ্চিন্তে থাকুন। কারণ আপনার বাচ্চা মিথ্যে বলছে বা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলছে এর মানে হচ্ছে ও কল্পনা করতে পারছে। খুব ধীরে ধীরে তাকে কল্পনা আর বাস্তবতার পার্থক্যটি ধরিয়ে দিন যেভাবে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

সন্তানের সৃজনশীলতার চর্চা করান কিডসটাইমের কোর্সে।কিডসটাইমের কোর্স গুলো দেখতে ভিজিট করুন নিচের লিংকে :

 

ToguMogu App