ToguMogu
ToguMogu
article.title
 Oct 24, 2023
 821

ওমেগা -৩ ডিমের গুনাগুণ

ডিম আগে না মুরগি আগে, এই একটি প্রশ্নের উত্তর যেনো সবাই কখনো না কখনো খুঁজতে গিয়েছি। তবে উত্তর না পেলেও ডিম নিয়ে এমন অনেক ব্যাপারই সামনে এসেছে যে অবাক না হয়ে পারা যায় না। আচ্ছা, আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে ডিমকে সুপারফুড বা পুষ্টির আধার হিসেবে গণ্য করা হয় কেনো? যে ডিম যথাযত পরিবেশ পেলে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দিতে পারে তাতে তো মানবজীবনের জন্য আবশ্যক উপাদানের উপস্থিতি দেখা যাবেই, তাই নয় কি? 

 

তেমনই এক আবশ্যক উপাদান ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানটি দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলেও এর চাহিদা পূরণ করতে হয় খাবারের মাধ্যমে। কেননা, মানবদেহে এই উপাদানটি তৈরি হয় না। তাইতো ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবারের প্রয়োজনীয়তা অসীম। 

 

তবে যে জায়গায় সকলকে ধরা খেয়ে যেতে হয় তা হচ্ছে এর উপযুক্ত উৎস। ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে, সামুদ্রিক মাছ যেমন – ম্যাকেরেল, টুনা, হেরিং, স্যালমন, সার্ডিং ইত্যাদি। পাশাপাশি কিছু বাদাম ও বীজ যেমনঃ ফ্ল্যাক্স সীড বা তিসির বীজ, চিয়া বীজ, আখরোট বা ওয়ালনাট ইত্যাদিও এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটির বেশ ভালো উৎস। তবে এই খাবারগুলো অনেকক্ষেত্রেই জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। তাই বলে কি এতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের যোগান নিশ্চিত করার কোন উপায় নেই? 

 

উপায় তো অবশ্যই আছে, আর তা হচ্ছে ফর্টিফাইড খাবার। আগে জেনে নেওয়া দরকার ফর্টিফাইড খাবার কি জিনিস। মূলত কোন খাবারে এমন কোন পুষ্টি উপাদানের সংযোগ ঘটানো যেটি হয় ঐ খাবারে নেই অথবা কম পরিমাণে আছে তাকেই ফর্টিফাইড খাবার বলে। এই যেমন ইনফ্যান্ট ফর্মূলা বা বাচ্চাদের খাবারে নানান পুষ্টি উপাদানের সংযুক্তি ঘটানো। ঠিক এমনই একটি উপাদান ওমেগা -৩ ডিম। ডিমে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কিছু মাত্রায় উপস্থিত থাকলেও তা দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের মতন নয়। ফলে এতে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করা হলে একজন ব্যক্তির ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে যে ডিমে কীভাবে এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটির সংযোগ ঘটানো হয়। আদতে মুরগির ফিডের উপর ডিমের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য অনেকাংশেই নির্ভরশীল। ফলে ডিম প্রদানকারী মুরগির ফিডকে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ করতে পারলে তা ডিমের মধ্যেও স্থানান্তরিত হওয়া সম্ভব। 

 

এবার আসা যাক এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটি আমাদের দেহে ঠিক কোন কোন কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই যে দিকটিতে আলোকপাত করা আবশ্যক তা হচ্ছে এটি গর্ভাবস্থায় বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাই গর্ভাবস্থায় মা যেনো পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। অন্যথায় বাচ্চার সঠিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হতে পারে। 

 

অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক নানান কারণে মানুষের মধ্যে দেখা যায় হতাশা ও উদ্বেগের ঘনঘটা। এই হতাশা ও উদ্বেগ কমাতে দারুণ ভূমিকা রাখে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার। তাছাড়াও দৃষ্টি শক্তি উন্নত রাখতেও অন্যতম কার্যকরী এক উপাদান এটি। এমনকি সমগ্র বিশ্বে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নামক যে চোখের সমস্যায় সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তি দৃষ্টি শক্তি হারায় তা রুখতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই উপাদানটি। 

 

হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই ডিম, বিশেষত ডিমের কুসুম গ্রহণের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়। অথচ অবাক করা বিষয় এই যে ওমেগা -৩ ডিম তথা ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে এক আশীর্বাদই বলা যায়। কেননা ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ কমায় এবং এলডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে হৃদসুরক্ষা প্রদান করে। তবে হৃদরোগীদের অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে তবেই গ্রহণ করতে হবে। 

 

ADHD বা Attention deficit hyperactivity disorder নামক বাচ্চাদের একটি আচরণগত সমস্যা দেখা যায় এই ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবে। এই সমস্যায় বাচ্চারা সাধারণত অমনোযোগী এবং অস্থিরচিত্তের অধিকারী হয়। অনেকে প্রারম্ভিকভাবে সন্তানের অতিসক্রিয়তা দেখে খুশি হলেও আদতে এটি একটি সমস্যা হয়ে আবির্ভূত হয়। তাই গর্ভাবস্থায় মা কে এবং জন্মের পর যখন থেকে স্বাভাবি খাবার দেওয়া শুরু করা হয় তখন থেকে বাচ্চার খাবারে একটু একটু করে ওমেগা -৩ ডিমের উপস্থিতি নিশ্চিত করাই শ্রেয়। 

 

এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটি অটোইমিউন ডিসওর্ডার যেমন টাইপ -১ ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, আলসেরাটিভ কোলাইটিস, লুপাস এর মতন রোগ প্রতিহত করতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবেও কাজ করে। এমনকি এই উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

 

এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে বাচ্চাদের অ্যাজমার সমস্যা দূর করেও ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশ ভালো কাজ করে। তাছাড়া হাড় মজবুত করতে, মেন্সট্রুয়েশনের সময় ব্যথা বা ক্র্যাম্প কমাতে, এবং নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতেও এই উপাদানটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। 

 

যদি এতো গুরুত্ববহ একটি উপাদানের ঘাটতি আমাদের শরীরে দেখা যায় তবে তা যারপরনাই ক্ষতি বয়ে আনবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ওমেগা -৩ ডিম নিয়ে এতো গবেষণা, এর এতো চাহিদা। প্রাত্যাহিক খাবারে একটি ডিমের উপস্থিতি যদি এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানটির চাহিদা পূরণ করতে পারে তবে মন্দ কি বলুন? 

ToguMogu App