আমি সাধারণত সুযোগ পেলেই প্যারেন্টিং কোর্স করি। করতে ভালো লাগে।কিছু নতুন জিনিস জানাও হয় আবার কিছু নতুন মানুষের সাথে পরিচিতিও হয় যাদের সাথে পরে প্লেডেট এরেঞ্জ করা যায়। গতমাসে বেশ কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী যে প্যারেন্টিং কোর্সটা করেছিলাম সেটা আমার কাছে খুব এক্সেপশনাল লেগেছে। শুধু কোর্স কন্টেন্টের জন্যই না বরং অফিস আওয়ারের পরেও ইন্সট্রাক্টর যেভাবে উৎফুল্ল ভাবে প্রেজেন্ট করেছেন সেটা এক কথায় অসাধারণ ছিল। অনেক টপিকের ভেতর একটা টপিক ছিল প্যারেন্টিং অপরাধবোধ নিয়ে। মানে একজন প্যারেন্ট হিসেবে এই দিকটা কীভাবে দেখা উচিত এবং কীভাবে এটা মেনে নিয়ে প্যারেন্টিং করা উচিত সেই ব্যাপারগুলো এই টপিকে ডিসকাস করা হয়েছিলো।
এই টপিকটার সাথে আমার পার্সোনাল লাইফের অনেক সম্পর্ক আছে এবং এতো ভালো লেগেছে যে ভাবলাম একটি পোস্ট থাকুক। সো হেয়ার ইউ গো।
একজন প্যারেন্ট হিসেবে আমাদের সবার জীবনেই কিছু কিছু মোমেন্ট আছে যেগুলোকে আমরা মনে করতে চাইনা অথবা বলা যেতে পারে আমাদের যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে ফিরে গিয়ে ওই মোমেন্টের কাজগুলোকে একটু পাল্টে দিয়ে আসতাম। এই মোমেন্ট হতে পারে যেদিন আপনি প্রথম আপনার বাচ্চাকে প্রচন্ড ঝাড়ি দিয়েছেন এবং ফলাফলে ওই প্রথম বাচ্চাটা কেঁদে উঠেছে, হয়তো তাড়াহুড়া করে কোথাও বেড়াতে গিয়ে বাচ্চার একটা মেডিসিন না নেবার কারণে তাকে নিয়ে ইমারজেন্সিতে যেতে হয়েছিলো বা এই টাইপ। আপনি ওই মোমেন্টগুলোতে করা অনিচ্ছাকৃত কাজগুলোর ফলাফল এখন কাটিয়ে উঠেছেন এবং আপনার স্মৃতিতে সেগুলো কিছুটা ধুসরও হয়ে গিয়েছে কিন্তু ছোট্ট একটা অপরাধবোধ আপনি মুছে ফেলতে পারেননি। হুটহাট করে কাজগুলোর কথা আপনার মনে পড়ে, মন খারাপ হয় এবং আপনি জানেন,মৃত্যু হবার আগ পর্যন্ত এই অপরাধবোধ আপনার যাবেনা।
যদিও আমরা জানি আমরা সবাই ভুল করি কিন্তু দেখা যায় অনেকেই ভাবি যে ওই মুহূর্তের করা কিছু ভুল হয়তো বাচ্চাদের চোখে আমাকে একজন খারাপ প্যারেন্ট হিসেবে দেখাবার রাস্তা ওপেন করে দিয়েছে। হয়তো কোনো একটা কারণে বাচ্চা রাগ বা অবহেলা করলে আমরা ভাবি যে ওই ভুলটি থেকেই হয়তো আজ এই অবহেলার জন্ম হয়েছে। এই কথাগুলো যখন আমাদের মনে আসে তখন হয়তো নিজের উপরে প্যারেন্ট হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেটা ঠিকঠাক মতো করা হয় না অথচ এটাই বেশি জরুরী। এই কারণেই আমাদের জানা থাকা দরকার এইসব অপরাধবোধ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারি।
#ভবিষ্যতের_ব্যাপারে_রেসনালি_উদ্বিগ্ন_হন - আমরা প্রত্যেকেই একটা না একটা সময় আমাদের বাচ্চাদের উপরে রাগী এবং তখন হয়তো কিছু কান্ড করি যেটা একজন প্যারেন্ট হিসেবে আমাদের হয়তো করা উচিত না। কিছু চাইল্ড সাইকোলজিস্টের মতে আমরা আসলে উদ্ভট কান্ড করি কারণ আমরা ভাবি যে এখন যদি বাচ্চাদের একটা কাজকে ঠিক না করে দেই তাহলে বড় হয়েও সে এই একই রকমের কাজই করতে থাকবে যেটা তার ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ভাবি সে যদি কখনোই ঠিক ভাবে করাটা না শেখে তাহলে কি হবে? সে যদি ভবিষ্যতে কিছু না করতে পারে তাহলে কি হবে? এই ভীতিগুলো আসলে আমাদের সবার ভেতরেই থাকে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট লেভেল ছাড়িয়ে গেলে সেটার দিকে নজর দেওয়া দরকার কারণ ভীতি অনেক সময়েই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। একটি বাচ্চার ব্রেন ২৫ বছরের দিকে ম্যাচিউর হয় অর্থাৎ তার জন্ম থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সে ডেভলোপমেন্ট স্টেজে থাকে। এই কারণে ১০ বছর বয়সে একটি বাচ্চা যদি একটা ভুল করে তাহলে এটা মনে করার দরকার নেই যে সে আজীবনই ওই একই ভুল করতে থাকবে। নিজেকে বলা উচিত যে আমি যে প্যারেন্টিং পেয়েছি তার চেয়ে ভালো প্যারেন্টিং আমি আমার বাচ্চাকে দেবার চেষ্টা করছি তাই সে আমার চেয়েও ভাগ্যবান এবং তার ডিসিশন ম্যাকিং ক্যাপাবিলিটি আমার চেয়েও ভালো হবে।
#নিজেকে_ক্ষমা_করুন - আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই এবং সত্যি হলো বাচ্চার ব্যাপারে একটি ভুলে বাচ্চাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু একটা ভুল ধরে বসে থেকে লাভ নেই। প্যারেন্ট হিসেবে যেটা করা উচিত সেটা হল ওই ভুলটাকে পাশে সরিয়ে রেখে কীভাবে সেটা সংশোধন করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা। ইনফ্যাক্ট একটা ভুল যেটা করা হয়ে গিয়েছে সেটা বাচ্চার সাথে শেয়ার করা যেতে পারে এবং এটাও বলা যেতে পারে ভুল থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। বাচ্চার ভেতর যদি কোনো নেগেটিভ ইমশোন গ্রো করতেও থাকে তাহলে সে বুঝতে শুরু করবে যে আমার অভিভাবক ভুলকে ভুল এবং শুদ্ধকে শুদ্ধ বলার ক্ষমতা রাখেন এবং তার সেটা ফলো করা উচিত।
#কোনকিছু_পার্সোনালি_নেবার_দরকার_নেই - বাচ্চা কোনো একদিন যদি প্রচণ্ড খেপে গিয়ে বলে বসে যে সে আপনাকে ঘৃণা করে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্যারেন্ট হিসেবে আপনার মন খারাপ হবে। এই মন খারাপ থেকে হয়তো আমাদের একটা ডাউন টাইম আসবে এবং সেটা বাচ্চাকে এফেক্ট করবে। এরচেয়ে তাদের এই টাইপ কথাকে এত পার্সোনালি না নিয়ে বরং ভাবা যেতে পারে যে সে কেনো এটা বলছে? তার কাছে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে এবং তাকেই বলা যেতে পারে যে সে বলে দিক কি করলে পরিস্থিতির আরো উন্নয়ন সম্ভব। বাচ্চা এটা দেখলে মোটিভেটেড হবে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার নিজের ব্যাবহারের জন্য নিজের কাছেই স্যরি হবে যেটা তার ভবিষ্যতের জন্য অনেক উপকারি।
#নিজের_ইমোশনকে_নিজেরই_রেগুলেট_করতে_হবে - যখনি মনে হবে যে আপনি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না তখনই ছোট্ট একটা ব্রেক নিয়ে যা করতে ভালো লাগে সেটা করতে হবে। এটা সবচেয়ে বেশি জরুরী। শুধু একবার করলেই হবে না কারণ প্যারেন্ট হিসেবে আমাদের সারাক্ষনই বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তার ভেতর থাকতে হয় তাই এটাকে একটা রিচুয়াল করে নেওয়াই ভালো। এটা এমন না যে কাউকে ৫ ঘন্টা একা থাকতেই হবে নিজেকে ঠিক রাখতে বা এই টাইপ। সেটা বাড়াবাড়ি। এটা হতে পারে একা একা একটা কফি খাওয়া, একটা পছন্দের মিউজিক শোনা কিংবা অন্য কিছু। মানে নিজেকে রিচার্জ রাখাটাই সবচেয়ে মূখ্য বিষয়। আসেপাশের মানুষ যাতে এটাকে নেগেটিভ ভাবে না নেয় সেই কারণে তাদের বলা যেতে পারে যে কেনো আমার এই কিছুটা একান্ত সময় দরকার।
আগের করা প্যারেন্টিং এর একটা ভুল থেকে অনেক কিছু শেখার আছে এবং সংশোধন করলে সেটা আসলে একজনকে ভবিষ্যতে আরও ভালো প্যারেন্ট হবার নিশ্চয়তা দেয়। পুরনো ভুলের জন্য এত অপরাধবোধে থাকার তেমন কোনো কারণ নেই। যেটা হয়ে গিয়েছে সেটাকে আমরা চেঞ্জ করতে পারবো না তবে ভবিষ্যতে যেন না হয় সেটার দিকে খেয়াল রাখতে পারি। জাস্ট লেট ইট গো।