শিশুরা মুক্ত মনের অধিকারী। তাদের কল্পনা শক্তিও প্রখর। তাই সৃজনশীল কাজে তাদের আগ্রহও থাকে অনেক বেশি। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই যদি সৃজনশীল কাজে সংযুক্ত করা যায় তাহলে সে একজন মুক্তমনা মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
বর্তমান পরিস্থিতে শিশুরা বাইরে গিয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছেনা। এমনিতেই শহরের বাচ্চাদের খেলার জন্য তেমন কোন খোলা জায়গা নেই। তার ওপর এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সব শিশুরাই ঘরে বন্ধী। ঘরে থাকতে থাকতে মানসিকভাবে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠছে । উপরন্তু তাদের মধ্যে নানা রকম সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। যেমন- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সারাক্ষন বিরক্ত করতে থাকে, অল্পতেই রেগে যায় এছাড়াও নানা রকম আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া মোবাইল কিংবা টেলিভিশনে আসক্ত হওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই।
এগুলো তো শুধু মানসিক সমস্যা ! কিন্তু আপনি কি জানেন শারীরিকভাবেও এই গৃহবন্দী পরিস্থিতি কতটা নেগেটিভ প্রভাব ফেলে? বাচ্চারা ঘরে থাকার কারনে তাদের এনার্জি রিলিজের সুযোগ পায়না। ফলে তাদের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে যায়। মোবাইলে আসক্ত হওয়ার ফলে তাদের হাতের আঙ্গুল, চোখ এবং মস্তিষ্কের নানা রকম অসুবিধা সৃষ্টি হয়। একটানা স্ক্রিন দেখার ফলে খাওয়ায় অরুচি, বমি বমি ভাব , মাথা ও চোখ ব্যথা সহ অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে সৃজনশীল কাজগুলো শিশুদের বিকাশের জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। যেসব বাচ্চারা অনলাইনে ক্লাস করে, তারা ক্লাস টাইম শেষ করে ক্রাফটিং কিংবা ড্রয়িং করতে পারে। এসব কাজে শিশুরা তাদের কল্পনার অনুভূতিগুলোকে একটি ফ্রেমে বন্দি করতে পারে। ফলে তারা মনের দিক দিয়ে প্রশান্তি অনুভব করে। তাছাড়াও তাদের ফাইন মোটর স্কিল যেমন- চোখ ও আঙ্গুলের সমন্বয় এবং চোখের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বা ভিজুয়ালাইজেশন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। শিশুর একাগ্রতা এবং কল্পনার বিকাশ ঘটে এসব সৃজনশীল কাজকর্মের মধ্য দিয়ে। শুধু যে বড় বাচ্চারাই সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারে তা কিন্তু নয়!
আপনার ছোট্টটিও তার নিজের বয়স অনুযায়ী এ ধরনের কাজে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারে। ভাবছেন কিভাবে? আপনার সন্তানের বয়স যদি হয় এক থেকে তিন বছরের মধ্যে তাহলে তাকে কাগজ বা ক্রাফটিং এর জিনিস দিলে সে প্রথমে কাগজ গুলো হয়ত ছিঁড়বে। এই ছেঁড়ার কাজটিও কিন্তু তার ফাইন মোটর স্কিল এর বিকাশের কাজ করে। একদম ছোট বাচ্চারা সাধারনত কাগজ ছেঁড়ার কাজটি করে। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেটি সে মুখে না দেয়। একটু বুঝতে শিখলে বাচ্চারা পেন্সিল ধরে কাগজের মধ্যে হাবিজাবি আঁকিবুঁকি শুরু করে। এই কাজটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের বাসায় হয়ত সমস্ত ঘরের দেওয়াল জুড়েই শিশুর শিল্পকর্মের ছাপ থেকে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এগুলো ঝামেলা মনে হলেও আপনার সন্তান কিন্তু এগুলোর মধ্য দিয়েই তার মানসিক বিকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
শুধু ক্রাফটিং কিংবা ড্রয়িংই নয় তাদের হাতে তুলে দিতে পারেন ক্লে ডো সেট
যেগুলো দিয়ে সে নানা রকম আকার আকৃতির জিনিস তৈরি করতে পারে। ক্লে ডো সেট যদি না পারেন তাহলে তাকে এক দলা মাটিও এনে দিতে পারেন। মাটির কথা শুনে নিশ্চয় আপনার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল? ছোটবেলায় আমরা সবাই কিন্ত কমবেশি মাটির হাড়ি-পাতিল, চুলা, পুতুল আরও কত কী তৈরি করেছি যেগুলার স্মৃতি আমাদের সবারই মনে আছে। ভাবছেন শহরে আমরা যারা থাকি, তারা মাটি কোথায় পাবো? সবার ঘরেই ময়দা বা আটা নিশ্চয় আছে। ময়দা বা আটার দলাই হতে পারে শিশুর কল্পনার খোরাক যা দিয়ে সে নানা জিনিস বানাবে।
এছাড়াও আপনি আপনার সন্তানকে আপনার বাগানের মালির দায়িত্ব দিতে পারেন, দেখবেন সে কতটা যত্ন নিয়ে গাছের পরিচর্যা করছে। হয়ত একটু অগোছালো কিংবা নোংরা হবে কিন্তু এসব কাজে সে যতটা আনন্দ পাবে বিশ্বাস করুন অন্য কোন কাজে তা পাবেনা। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য তাকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
সন্তানের সৃজনশীলতার চর্চা করান কিডসটাইমের কোর্সে।কিডসটাইমের কোর্স গুলো দেখতে ভিজিট করুন নিচের লিংকে :