সাধারন বিষয় গুলোঃ

• বাবুর নাম ধরে ডাকলে ঘুরে তাকায়।

• একা একা সাহায্য ছাড়াই বসতে পারে।

• সলিড খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।

উচ্চতাঃ ৬৫.৭-৬৭.৬ সে.মি

ওজনঃ ৭.৩-৭.৯ কেজি

মাথার আকৃতিঃ ৪২.২-৪৩.৩ সে.মি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার আদরের ছোট্ট সোনামনির বয়স এখন ছয় মাস। তার ঘাড়ের পেশি এবং হাত-পা এখন যথেষ্ট শক্ত হয়ে যায়। সে এখন উচ্ছলতার সাথে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। সে প্রশস্ত কোন জায়গায় গড়াগড়ি করতে চায়। এ সময় সে সামনের দিকে ঝুঁকতে বা হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে চায়। এছাড়াও সে একা একা কোন সাহায্য ছাড়াই বসতে পারে।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার শিশু সন্তান এখন দৈহিক দিক থেকে অনেকটাই শক্তপোক্ত হয়ে যায়। এই পর্যায়ে এসে সোজা থেকে উপুড় আবার উপুড় থেকে সোজা হতে পারে। সে তার সামনে থাকা কোন খেলনা বা জিনিস ধরার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে নিজে নিজে তার খেলনা দুই হাতে ধরতে পারে এবং সেটি নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়।

এই সময় বাবু কোন সাহায্য ছাড়া একাই বসতে পারে। তাকে যখন তার পায়ের উপরে ভর দিয়ে দাড় করানো হয় তখন সে উপর নীচে লাফানো শুরু করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

• বাবু যদি একা একা উল্টাতে না পারে।

• কোনভাবেই যদি সে বসতে না পারে।

• তার সামনে থাকা কোনো বস্তু বা খেলনা ধরার জন্য সামনে  এগিয়ে না যায়।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার বাবু এখন তার আবেগ প্রকাশ করতে শুরু করে। একই রকম মিউজিক বা নার্সারি রাইমস গুলো সে মনোযোগ দিয়ে শুনে। তার মধ্যে কোন কিছুর দেখার আছে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। বিশেষত উজ্জ্বল ও চকচকে বস্তুর প্রতি সে খুবই আকৃষ্ট হয়। এসময় সে নানারকম শব্দ করে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এসব শব্দ গুলির মধ্যে বা..বা, মা..মা এই জাতীয় শব্দ থাকে যা শুনলে আপনার হয়তো মনে হবে যে সে বুঝেশুনেই আপনাকে ডাকছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো এসব শব্দের অর্থ সে নিজেও এখনো জানেনা। এগুলো তার ভাষাগত দিকের প্রথম শব্দ। এছাড়া সে এখন তার খাবার থেকে শুরু করে খেলনা পর্যন্ত সব কিছুর ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন থাকেন। বিভিন্ন খাবারের রঙ , গন্ধ এবং টেক্সচার তাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

আপনার বাবু আপনার ডাকে যদি সাড়া না দেয় কিংবা তার আশপাশে আপনি ঘোরাঘুরি করা সত্ত্বেও যদি সে ফলো না করে তাহলে এটি আপনার জন্য চিন্তার বিষয়।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

এখন থেকে শিশু  তার পরিচিত জনদের মধ্যে থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অপরিচিত কাউকে দেখলে সে তার কোলে যেতে চায়না। কিংবা একসাথে অনেককে দেখলে যারা তার পরিচিত নয় তাদেরকে দেখে সে কান্নাকাটি করে। সে তার পরিচিত মুখ গুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে খেলা করতে চায়। সে আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য অনেক হাস্যকর অঙ্গভঙ্গিও করে থাকে।

চিন্তার বিষয়ঃ

আপনার বাবুর যদি আশেপাশের পরিবেশের প্রতি আগ্রহ না দেখায় তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয়।

স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ

এখন থেকে বাবুর ঘুমের সময় আরো কমতে থাকে এবং তার খেলার সময় বৃদ্ধি পায়। রাতে যদি তার ক্ষুধা পায় তাহলে সে কিছুক্ষণের জন্য জেগে ওঠে। পেট ভরে খাইয়ে দিলে সে রাতে একটানা ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

৬ মাস বয়সের মধ্যেও যদি শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক না হয় অথবা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

এখন থেকেই আপনার সন্তান বাড়তি খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়। শুধুমাত্র বুকের দুধে তার বাড়তি শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়না। তাই এখন থেকে অল্প অল্প করে তাকে সলিড খাবার খাওয়ানো শুরু করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে সবার প্রথমে ধৈর্যশীল আচরণ করতে হবে। সলিড খাবার শুরু করার সাথে সাথে তাকে একগাদা খাবার খাওয়ানো যাবে না। আপনি যদি তাকে খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করেন তাহলে প্রথম সপ্তাহে শুধুমাত্র চাল এবং ডাল দিয়ে সেটি তৈরি করুন। প্রথম এক বছর বাবুর খাবারে কোন লবণ বা চিনি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এগুলি তার শরীরের জন্য গ্রহণযোগ্য না। প্রথম এক সপ্তাহ চালডাল এবং পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে একটি করে সবজি দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে বাবুকে কয়েক চামচ খাওয়ালেই যথেষ্ট। এই সময় আপনার খেয়াল রাখতে হবে যে কোন খাবারে বাবুর এলার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। এভাবে ৭-৯ মাস পার করার পরে খাবারে মুরগির মাংস/মাছ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার যোগ করতে হবে। মনে রাখবেন প্রথম এক বছর বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার অল্প করে খাওয়ালেই যথেষ্ট। এখনো আপনার বুকের দুধই আপনার শিশুর জন্য প্রধান খাবার।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

৬ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৬৬১.৭৭ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

• বুকের দুধ: ৫৭০-৯০০মিলি/দিন।

• ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৯৪৬মিলি/দিন।

• প্রোটিন: প্রয়োজন নেই।

• ফল/ফলের রস: ৪১ গ্রাম/দিন।

• শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।

• শস্য দানা: ২৮ গ্রাম/দিন।

• পানি: ৬০-১১০ মিলি/দিন।

শিশুর দৈনিক ২ থেকে ৩ বার তার প্রধান খাবার খাবে। প্রতিবারেই ২/৩ চামচ খাবারই যথেষ্ট। এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

এখন থেকেই আপনার বাসার দরজা, ড্রয়ার, কেবিনেট এর পাল্লা জাতীয় জিনিসের উপরে সেফটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সবসময় বাবুর ডায়পারের খেয়াল রাখুন। ডায়পার ভারী হলে তা সাথে সাথেই পরিবর্তন করতে হবে নাহলে বাবুর র‍্যাশ  উঠে যেতে পারে।

আপনার বাবু  উজ্জ্বল রঙের জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আপনার পরিহিত চকচকে গহনা গুলোও ধরতে চায়। এই কারনে চোখা/সার্প গহনা পড়ে বাবুকে ধরার সময় সাবধান থাকুন। বাবুর হাতের কাছে কোন ছোট জিনিস রাখবেন না কেননা সে এখন হাতের কাছে যা পাবে সেটাই মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই বয়সে কখনোই বাবুকে  বিছানায় একা রেখে যাবেন না। কারন সে এখন নিজে নিজে উল্টানো শিখে। একা থাকা তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার ছোট সোনামণিকে এখন বেশি বেশি খেলাধুলা করতে দিন। তাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরে আসুন। বাইরের খোলা হাওয়া তার শরীর এবং মনের উপরে দারুণ প্রভাব ফেলবে।

এখন সময় এসেছে আপনার বাসাটি ছোট্ট সোনামণির জন্য উপযুক্ত করে সাজানো। আপনার বাচ্চার আশপাশে বাচ্চাদের খেলার উপযুক্ত জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রাখুন। ফ্লোর ম্যাট, সফট টয়, র্্যাটল

টয়, বিভিন্ন মিউজিক্যাল টয় ইত্যাদি খেলনা দিয়ে আপনার বাসাটি সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলুন। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হবে। তাকে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটির মধ্যে রাখুন। যেমন তার থেকে কিছু দূরে একটি খেলনা রেখে দিন যেন সে সামনের দিকে এগিয়ে এসে খেলনাটি ধরতে চেষ্টা করে।শিশুকে দিনে অন্তত একবার টামি টাইম দিন। এতে তার শরীরের মাংসপেশি শক্ত হবে এবং সে আরও বেশি একটিভ হয়ে উঠবে।