শিশু কি বুকের দুধ পাচ্ছে না?

সন্তান জন্মানোর পর নতুন মায়েরা এমনিতেই উদ্বিগ্ন থাকে। এই উদ্বেগ আর অস্থিরতা থেকে প্রায় সময় মায়েরা বলেন যে, তাদের সন্তান ঠিক মতো দুধ পাচ্ছে না। অনেকে আবার মনে করেন সিজারিয়ান অপারেশন করালে বুকের দুধ দেওয়া যাবে না। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। প্রসবের পর নতুন মা ও নবজাতক শিশু উভয়ের কাছে বুকের দুধ সঠিকভাবে পান করানোর বিষয়টি রপ্ত করতে কিছুটা সময় লাগে। যথেষ্ট সময় নিয়েও যদি শিশু বুকের দুধ পান করতে না পারে, তখনই মায়েদের সাহায্য করতে হবে। যত দিন শিশু বুকের দুধ খেতে না চায়, তত দিন শিশুকে বুকের দুধ টিপে বের করে কাপে বা চামচে করে খাওয়াতে হবে।

কখনো বা দেখা যায়, শিশু কিছুতেই মায়ের বুকে যেতে চাইছে না বা মায়ের দুধ খেতে চাইছে না। মা যখনই বুকে নিতে চান, অমনি শিশু কান্নাকাটি করে। শিশুকে দুধ পান করানোর সময় মা বা অন্য কেউ যদি শিশুর মাথা পেছন থেকে বুকে চেপে রাখে বা সে চেষ্টা করে, শিশু তখন বিরক্তি বোধ করে। পরবর্তী সময়ে এই শিশু আর মায়ের বুকে যেতে চায় না। শিশুকে জোর করে খাওয়ানো থেকে কিছুক্ষণের জন্য অব্যাহতি দিতে হবে। পরে সঠিক নিয়মে চেষ্টা করতে হবে। যদি কোনো শিশুকে চুষনি বা বোতল দেওয়া হয়, তাহলে শিশু নিপল ও স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধপানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। বোতলের নিপলে একটু চাপ লাগাতেই দুধ পেয়ে যায়। অথচ স্তনের বোঁটা চুষে টেনে পরিশ্রম করে খেতে হয়। উপরন্তু টিনের দুধ বুকের দুধের চেয়ে বেশি মিষ্টি। ফলে শিশু আর মায়ের দুধ খেতে চায় না। মাকে যতটুকু সম্ভব বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার (যেমন- মাছ, ডিম, দুধ প্রভৃতি) খেতে হবে। অতিরিক্ত দুধ তৈরিতে যে খাবারগুলো সরাসরি সহযোগিতা করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজর, শিম, বাদাম (চীনাবাদাম, কাজুবাদাম), কালোজিরার ভর্তা, লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি। বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য লেকটোহিল নামের দুধ পাওয়া যায়। ‘হলিসিড’ নামের কালাজিরার ক্যাপসুলও পাওয়া যায়। ফার্মেসি থেকে এই দুধ কিংবা ক্যাপসুল কিনে খেলে অনেক ক্ষেত্রে কাজে লাগে।

বুকের দুধ বাড়াতে আরো কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি –

১। স্তনের বোঁটাকে শিশুর জন্য পাঁচ মিনিট করে চুষতে দিতে হবে, একেবারে একফোঁটা দুধ না এলেও এই কাজটা নিয়মিত করেই যেতে হবে। একবারে ১০-২০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে দুধ দেবেন। 

২। বাচ্চাকে যত ঘন ঘন দুধ দেবেন তত বেশি দুধ আসতে থাকবে। বাচ্চা যদি খুব কম দুধ পান করে সে ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে দুধ চিপে ফেলে দেবেন। 

৩। একবারে এক স্তন থেকেই দুধ খাওয়াতে হবে। দুই দিক থেকে খাওয়াবেন না। কারণ, প্রথম দিকের দুধে পানির পরিমাণ বেশি থাকে আর শেষ দিকের ঘন দুধে পুষ্টি বেশি থাকে। এতে বাচ্চার পেটও ভরে। কিন্তু অর্ধেক খাওয়ানোর পর পরিবর্তন করে আরেক দুধে চলে গেলে বাচ্চা শেষ দিকের পুষ্টিকর দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। 

৪। শিশু স্তন চুষবার সময় মাকে অবশ্যই নিরুদ্বিগ্ন এবং চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। শিশু যদি মায়ের বুক না টানতে চায় তবে জোরাজুরি করা উচিত নয়। বরং নিরিবিলি ঘরে বসে মা আস্তেআস্তে তার মাথায় হাত বুলিয়ে কথা বলে ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করবেন। যখন সে মুখ হা করবে তখন শিশুকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরতে হবে। মায়ের শিশুর দিকে ঝুঁকে যাওয়ার দরকার নেই।

৫। কোনো কারণে যদি বুকের দুধ খাওয়ানো সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে তবে মা যখনই আবার খাওয়াতে চাইবেন তখনই শিশুকে বুকের দুধ টানাতে হবে। শিশু চুষলেই আস্তে আস্তে আবার আগের মতো দুধ আসবে। 

৬। কোনো অবস্থাতেই শিশুর মুখে বোতল বা চুষনি দেওয়া উচিত নয়। তাহলে শিশু তার মায়ের স্তনের বোঁটা মুখে নিতে চাইবে না। সে ওই নরম রাবারের বোঁটা বেশি পছন্দ করবে।  

৭। মাকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে। তার ঘুম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। স্তন্যদানের ১৫ মিনিট আগে মা দুই গ্লাস পানি পান করে নিলে স্তন্যদান সহজ হবে। 

৮। বেশি পরিমাণে জোরে দুধ এলে খাওয়ানোর সময় চোখেমুখে দুধ ছিটিয়ে পড়ে, তাই শিশুকে খাওয়ানোর আগে কিছুটা দুধ টিপে ফেলে নিতে পারেন। এতে বোঁটাও তার নিজের আকার ফিরে পাবে। শিশুর বোঁটাসহ কালো অংশ ধরতে সুবিধা হবে। 

৯। মাকে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করা অভিভাবকদের দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। তাকে কখনোই তিরস্কার বা হতাশ করা যাবে না। 

১০। ডেলিভারির দুই সপ্তাহ পর এসব ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ না আসে বা কম আসে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে প্রায় সময় দেখা যায় ওপরের নিয়মগুলো পালন করলে আর এক থেকে দুই সপ্তাহ ধৈর্য ধরলে এমনিতেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এ সময় শিশু কম দুধ পাচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে কৌটার দুধ দেওয়া হবে আত্মঘাতী। কারণ, প্রথম দিকে এমনিতেই শিশুর চাহিদা কম থাকে আর একবার কৌটার দুধ দিলে তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে খুব কষ্ট হয়। আজকাল সরকারি হাসপাতালগুলোতে এবং ক্লিনিকেও ‘ব্রেস্ট ফিডিং কাউন্সেলিং’-এর জন্য আলাদা সেন্টার বা বুথ থাকে। এসব স্থানে গিয়ে মায়েরা সাহায্য চাইতে পারেন।

লিখেছেনঃ ডা. আবু সাঈদ শিমুল

সৌজন্যে- ডক্টোরোলা ডট কম ।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.