গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে প্রকৃতপক্ষে আপনি এখনো গর্ভবতী নন, তবে শরীর ইতিমধ্যেই গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিনটাকেই গর্ভাবস্থার প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়। তাই কাগজে-কলমে এই সপ্তাহ থেকেই আপনার গর্ভধারণের যাত্রা শুরু হয়েছে। আপনার শরীর ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে এবং জরায়ু শিশুর জন্য নিরাপদ বাসা তৈরি করতে শুরু করেছে।
এই সময়ে আয়রন–ফলিক এসিড খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থ বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভধারণের আগে থেকেই নিয়মিত এই ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করলে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ আরও ভালো হয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, প্রচুর পানি পান করা এবং হালকা ব্যায়াম করা এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মাসিকের আগের অস্বস্তিকর লক্ষণ যেমন পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো, স্তনে ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে লাগা ইত্যাদি স্বাভাবিক। এগুলো গর্ভধারণের লক্ষণ নয়, বরং PMS-এর অংশ। এ সময়ে ধৈর্য ধরে নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং করানোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রোগ, যা বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশুর কাছে যেতে পারে এবং মারাত্মক রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে। একজন মা ও বাবার দুজনেরই পরীক্ষা করা উচিত, কারণ কেউ বাহক হলেও স্বাভাবিক দেখাতে পারে। পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার পরামর্শ দিলে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
এছাড়া, নিয়মিত খাওয়া ওষুধ, ভিটামিন বা হারবাল ওষুধের তথ্য ডাক্তারকে জানানো জরুরি। কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয় এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হঠাৎ করে কোনো ওষুধ বন্ধ না করে ডাক্তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন বা বিকল্প নেওয়া উচিত। ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়ানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুর জন্মের সময় নানা জটিলতা এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সংক্ষেপে, প্রথম সপ্তাহটি মূলত আপনার শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করার সময়। এটি শিশুর সুস্থ জন্মের ভিত্তি গড়ে। আয়রন–ফলিক এসিড খাওয়া, থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এই সময়ের মূল দায়িত্ব। এই সপ্তাহে নেওয়া সচেতন পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।