ফল কখন খাবো ভরাপেটে না খালিপেটে?

ছোটবেলা থেকেই ফল ভীষন পছন্দ সাদাফের। খেয়েদেয়ে উঠেই মনে হলো একটু ফল খেতে হবে। হাতের কাছে ফল পেল আর খেয়ে নিল। আবার খুব খিদে পেয়েছে, কিছু খাওয়া দরকার? খালি পেটেই ফল খেয়ে নিল। তাজা ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এ কথা তো সবাই জানে। কিন্তু ওর এই যখন-তখন ফল খাওয়া নিয়ে চিন্তিত সাদাফের মা। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে কিনা, এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত তিনি! অনেকেই আবার চিন্তায় থাকে ফল কখন খাবো ভরাপেটে না খালিপেটে ?

ফল কখন খাবো ভরাপেটে না খালিপেটে? – এই বিষয়ে আমাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে সবসময়ই। অনেকেই আমরা জানি না দিনের ঠিক কোন সময়ে ফল খাওয়া উচিত। না জেনেবুঝেই অনেক সময় শরীরের ক্ষতি করে ফেলি আমরা অনেকেই। তাই জেনে রাখা ভালো যে আসলে কখন ফল খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।

টাটকা ফলমূল নানান পুষ্টিগুনে ভরপুর। শরীরের ক্ষয় পূরণে নিয়মিত ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সময় না বুঝে ফল খেলে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতির ভয়ই থাকে বেশি। তাই হয়ত অধিকাংশ চিকিৎসকই খালি পেটে ফল খেতে নিষেধ করেন। ফলকে একটি পরিপূর্ণ খাবার বলা যায়। কারন অনেক ধরনের ফল খেলে পেট একেবারে ভরে যায়। তাই প্রধান খাবারের সঙ্গে ফল না খাওয়াই ভালো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফল খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ এতে শর্করার সঙ্গে কার্বোহাইড্রেট আর ব্যাকটেরিয়া মিশে যায়। ফলে শরীরের হজমশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসাশাস্ত্রে আরো বলা হয়, ফলের সঙ্গে যদি উচ্চমানের প্রোটিন খাওয়া হয় তবে শরীরে থাকা শর্করা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। ফলে এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মূল খাবার খাওয়া ও ফল খাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ব্যবধান রাখতে হবে।

তাহলে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়ে যায় ফল খাবেন কখন? সকালে এক গ্লাস পানি খাওয়ার পর ফল খেতে পারেন, যেমন- কলা, আপেল, নাশপাতি, জাম, বেদানা। এ ধরনের ফল খালিপেটে খেলে শরীরের ভিতরের কার্যক্রমে সহায়তা করে। এগুলো শরীরে শক্তি জোগায়। সেই সঙ্গে ওজন কমতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, সাইট্রাস জাতীয় কিছু ফল রয়েছে, যেমন- আঙ্গুর, কমলা, বাতাবীলেবু। এ ধরনের ফলগুলো খেলে অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে। এছাড়া সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং সন্ধ্যায় কিছু খাওয়ার আগে ফল খাওয়া উচিত, খাওয়ার পরে নয়। মূল খাবার খাওয়ার আগে ফল খেলে পাকস্থলীতে ক্যালরি কিছুটা কম জমা হয়। ফল খেলে পেট তুলনামূলক ভরা লাগে এবং তা হজমেও সহায়তা করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফল না খাওয়াই ভালো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, ফলের শর্করা শরীরকে সক্রিয় করে। এতে ঘুম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ঘুমের অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য সঠিক ফল খাওয়া নিশ্চিত করা খুব জরুরি। কেননা গর্ভবতী থাকাকালীন দেহ অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় পর্যন্ত পরিবর্তনের সমুদ্র অতিক্রম করে। মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়ম মেনে চলা জরুরি। বিভিন্ন প্রবন্ধ অনুযায়ী কিছু ফল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রস্তাবিত নয়।

যেমন –

১. আনারসঃ আনারস খাওয়ার ফলে জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে, যার ফলস্বরূপ একটি গর্ভপাত ঘটতে পারে। আনারসে ব্রোমেলাইন থাকে, এটি একটি এনজাইম; যা প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। এটি জরায়ু নরম করতে পারে এবং অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে।

২. আঙুরঃ গর্ভাবস্থায় আঙুর এড়ানো ভাল এবং এটি সবুজ ও কালো উভয় আঙুরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদিও গর্ভাবস্থায় আঙুর খাওয়া সম্পর্কে মিশ্র মতামত রয়েছে, তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে আঙুরের মধ্যে থাকা যৌগিক রেজভেরট্রোল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায়, কালো আঙুরের ত্বক হজম করতে অসুবিধা হতে পারে কারণ এই সময় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকে।

৩. তেঁতুলঃ গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খাওয়ার অভ্যাস হওয়া স্বাভাবিক। তবে গর্ভাবস্থায় বেশি তেঁতুল খাওয়া ভাল হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। তেঁতুল দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাবের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে তেঁতুলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি আপনার দেহে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনকে দমন করতে পারে এবং প্রজেস্টেরনের নিম্ন স্তরের ফলে গর্ভপাত হতে পারে, অকাল প্রসব হতে পারে এবং ভ্রূণের কোষের ক্ষতি হতে পারে।

৪. পেঁপেঃ পেঁপে দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য ভাল নয়। এছাড়াও ফলটি ল্যাটেক্স সমৃদ্ধ যা জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এবং এমনকি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। এটি ভ্রূণের বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে তাই গর্ভাবস্থার সময়কালে পাকা ছাড়াও কাঁচা পেঁপে খাওয়া এড়ানো ভালো।

৫. কলাঃ যদিও গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলি এড়ানো দরকার হতে পারে। যেসব মায়েরা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন এবং ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের কলা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কলাতে চিটিনেস থাকে। এটি একটি ল্যাটেক্স জাতীয় উপাদান যা একটি পরিচিত অ্যালার্জেন। এটি শরীরের উত্তাপ বাড়ায়। তাই চিটিনেসে অ্যালার্জিযুক্ত মায়েদের কলা থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও, কলাগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত যে কোনো মূল্যে কলা খাওয়া এড়ানো।

করোনার ভয়াবহতার এ সময়টাতে কাঁচা ফলমূল খাওয়া নিয়েও কিছু নিয়ম গুরুত্বের সাথে মানা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের মতে, “বাজার থেকে কেনা কোন ফল শুধু পানিতে ধুয়ে কাঁচা খাবেন না। যদি মনে করেন একটা পেয়ারা খাবেন পেয়ারাটা সাবান দিয়ে ধুয়ে তারপর কেটে খাবেন। পেয়ারাতো আর রান্না করা যাচ্ছে না। আপেলও তাই। আঙ্গুর খেতে হলে সাবানের পানিতে আধা ঘন্টা রাখবেন। তারপর ধুয়ে খাবেন।”

তাজা ফলের গুনের কথা আমরা সবাই ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছি। তা সত্ত্বেও কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা ভালো। নিয়ম মেনে আমরা সবাই সুস্থ থাকি, সুন্দর থাকি। নিজের ও আশেপাশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের যথাসম্ভব খেয়াল রাখি।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.