সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ প্রায় ৫০ টির মত শব্দের ব্যবহার জানে।
✅ একই প্রশ্ন বারবার করতে থাকে।
✅ মোবাইল কিংবা স্ক্রিনের প্রতি আসক্তি দেখা যায়।
✅ পা দিয়ে বল ছুড়ে দেয় এমনকি মাথা দিয়েও বল ছুড়ে মারতে পারে এবং এই সময় পড়ে যায় না।
?উচ্চতাঃ ৮৬.৩-৮৮.০ সে.মি
?ওজনঃ ১২.০-১২.৪ কেজি
?মাথার আকৃতিঃ ৪৭.৩-৪৮.৪ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এই বয়সে এসে প্রায় সব কথাই বলতে পারে। সে আপনার দেওয়া একাধিক নির্দেশনাও অনুসরণ করতে পারে। সে এখন তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোনটি কি কাজে ব্যবহৃত হয় তা বোঝার চেষ্টা করে। প্রত্যেক শিশুই তার নিজস্ব গতিতে বিকশিত হতে থাকে। তাই এই বয়সে যদি আপনি তার মধ্যে সাধারণ পরিবর্তনগুলো নাও দেখেন তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা সব শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ একই সাথে সমান তালে হয় না। কারো কারো ক্ষেত্রে কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে। তাই চিন্তা না করে আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করতে আপনি হয়তো কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন ।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
২৬ মাস বয়সী শিশুর হাত দিয়ে কোন কিছু শক্ত করে ধরার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সে তার ব্লক গুলি দিয়ে লম্বা লম্বা বিল্ডিং বানাতে পারে। সে ঘরের মধ্যে দৌড়ে বেড়ায় এবং ছোট করে লাফ দিতে পারে। মাথা দিয়ে বল ছোড়া কিংবা পা দিয়ে লাথি দেওয়া তার জন্য এখন বেশ সহজ কাজ। হাত এবং হাতের আংগুল ব্যবহার করে সহজে কোনো কিছু ধরতে পারে এবং যে কোন দিকে পয়েন্ট আউট করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে শারীরিক কর্মকাণ্ড এবং খেলাধুলার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে।
? সব সময় যদি সে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু এখন যেকোনো একদিকে মনোনিবেশ করে অনেকক্ষণ থাকতে পারে। বিশেষ করে তাকে যদি স্লাইম এবং ক্লে ডো জাতীয় খেলার উপকরণ দিয়ে বসিয়ে রাখা যায় তাহলে সে একনাগাড়ে অনেকক্ষণ সেগুলো দিয়ে খেলতে থাকে। তার মধ্যে এখন সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি হয়। সে ছোট ছোট সাধারণ পাজল মেলানোর চেষ্টা করে। এছাড়াও সেই তার ছোট ছোট যেসকল খেলনা গণনা করা যায় সেগুলির প্রতি আগ্রহ দেখায়। তারমধ্যে একটি কাজের পরে আরেকটি করতে বলা হলে সে সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়। যেমন যদি বলা হয় তোমার খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখার পরে তুমি চকলেট পাবে। তাহলে সে বুঝতে পারে যে এই কাজটির পরে আরেকটি কাজ সম্পন্ন হবে। এছাড়াও সে সাধারণ কাজ গুলি থেকে একটু জটিলের দিকে ধাবিত হয়। যেমন সে যদি তার কিচেন সেট নিয়ে খেলা করে তাহলে তার ছোট ছোট পাতিল গুলি আগে চুলায় বসানো, তারপর চুলা ধরানো, পাতিলে তেল এবং খাবার দিয়ে রান্না করা এরকম একের পর এক সিকোয়েন্স মিলিয়ে সে খেলা করে। পটি ট্রেনিং শুরু হলে এই সময়ের মধ্যে সে মোটামুটি বুঝো যায় কিভাবে পটিতে বসতে হবে। তবে এখনো হয়তো সে পুরোপুরি পটিতে বসায় অভ্যস্ত হয় না, মাঝেমধ্যে সে ঘর নোংরা করে ফেলে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি নতুন নতুন খেলনা কিংবা নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে আগ্রহ প্রকাশ না করে।
? খেলার সময় যদি সে নির্লিপ্ত থাকে এবং মজার খেলাধুলায় কোন আগ্রহ না দেখায়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে বাচ্চারা তার নিজের জিনিসের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক আচরণ করে। সে কারো সাথে তার জিনিস ভাগাভাগি করতে মোটেও পছন্দ করেনা। সবার থেকে সে সহমর্মিতা এবং মনোযোগ কামনা করে। সে যদি কোন কাজ করতে গিয়ে সফল না হয় তাহলে রাগ এবং হতাশা প্রকাশ করতে পারে। হঠাৎ করেই সে রেগে যায়। এরকম হলে আপনাকে ধৈর্য সহকারে তার রাগ নিয়ন্ত্রণের আনার চেষ্টা করতে হবে। এই বয়সের শিশুদের এক এক সময়ে এক এক রকম মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। তাই ধৈর্য্য হারা না হয়ে সময় নিয়ে তার পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করুন এবং তার সাথে সেভাবে আচরণ করুন।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সেসব বিষয়ে অতিরিক্ত রাগ করে।
? ছোটখাটো বিষয়ে এবং অল্পতেই যদি সে কান্নাকাটি করতে থাকে।
? ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়ায় সে যদি কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করে।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
আপনার সন্তান এখন ঘুমের সময় নিজ থেকেই ঘুমিয়ে যেতে পারে আবার নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠে যায়। সারাদিনে সে খুব একটা ঘুমাতে চায় না। তবে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার ঘুম যেন অতিরিক্ত কম না হয়। সকালের দিকে না ঘুমালেও দুপুরের পরে তাকে কিছু সময়ের জন্য ঘুমাতে দেওয়া উচিত। না হলে সে অস্থির চিত্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে এবং হয়তো আপনাকে বিরক্তও করতে পারে। ঘুমের সময় তাকে গল্পের বই পড়ে শোনানোর অভ্যাস করা ভালো। প্রতিদিন গল্পের বই পড়া শুনে ঘুমাতে গেলে তার মানসিক বিকাশ ভালো হয়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন মোটামুটি ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। তার উচ্চারণ হয়তো এখনো পুরোপুরি বোঝা যায় না তবে সে চেষ্টা করে সঠিকভাবে উচ্চারণ করে কথা বলতে। এই সময় সে ভাষার ব্যাকরণগত নিয়ম গুলি মেনে কথা বলার চেষ্টা করে। একটি পূর্ণ বাক্যের মধ্যে যেমন নাম, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রীড়া ইত্যাদি নিয়মগুলো অনুসরণ করে বাক্য তৈরি হয় ঠিক তেমনি আপনার ছোট্ট সোনারটির একটি পূর্ণ বাক্যের মধ্যে আপনি এই নিয়ম গুলি অবলোকন করতে পারবেন। তার শরীরের কোন স্থানে ব্যথা পেলে সে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবে। অর্থাৎ সে যেকোনো কিছু বিস্তারিত বলে বোঝানোর সক্ষমতা অর্জন করে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের প্রতি আপনার শিশুকে আগ্রহী করতে তার খাবার প্রস্তুতের সময় তাকে সাথে রাখুন আর ব্যাখ্যা করে বলুন কিভাবে তার খাবার তৈরি করা হয়। তাকে আপনাকে সহযোগিতা করতে উৎসাহ দিন। প্রতি বেলার খাবার এর সময় নানা রকম গল্প বলে কিংবা তার সামনে খেলনা রেখে খেলার ছলে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। তবে মোবাইল বা টেলিভিশন দেখিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো একদমই ঠিক না। সে যদি প্রতিবেলার খাবার ঠিকমতো খেতে না চায় তাহলে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে তাকে স্বাস্থ্যকর স্নাক্স আইটেম দেওয়া যেতে পারে। তবে দুপুর বা রাতে ভারি খাবার খাওয়ানোর আগে অন্য কিছু তাকে খেতে দেওয়া যাবেনা। এতে করে পেট ভরে গেলে সে আর কিছুই খেতে চাইবেনা। বাবু সবজি না খেলে সবজি দিয়ে রোল বানিয়ে ভেজে দেওয়া যেতে পারে। কিংবা নুডুলস এর মধ্যে সবজি দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। ফল খেতে না চাইলে জুস বা স্মুদি বানিয়ে দিতে পারেন। এভাবে নানারকম টেকনিক ব্যাবহার করে আপনার সন্তানের খাওয়াদাওয়া নিশ্চিত করতে হবে
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
২৬ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১০৩২.৫ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৫৯০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তানের উপর এখন সব সময় নজর রাখুন। যেহেতু সে এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। সে এখনো নিজে নিজে সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সোনামণির নতুন নতুন কাজগুলোকে উৎসাহিত করুন। সে কোনো ভালো কাজ করলে তাকে বারবার বলুন যে আপনি এই কাজটির জন্য অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। এ সময় তার প্রচুর এনার্জি কাজ করে তাই সে যতক্ষন খুশী খেলতে চায় তাকে খেলতে দিন। তবে সে যদি মোবাইল স্ক্রিনে প্রতি আসক্ত হয়ে যায় এবং আপনার কাছে বারবার সেটা চাইতে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে তা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এমনকি সে যদি কান্নাকাটিও করে তাহলে আপনার উচিত হবে তাকে বোঝানো কিংবা তার কান্নাকাটিকে প্রাধান্য না দেওয়া। কারণ একবার জিদ করে সে যদি তার কাঙ্খিত বস্তুটি পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতেও সে বারবার একই কাজ করতে থাকবে। পটি ট্রেনিং এখনো বলবৎ রাখুন। কোন কারণে যদি সে ঘর নোংরা করে ফেলে তাহলে তার সাথে বকাবকি কিংবা চিল্লাচিল্লি করা মোটেও ঠিক হবে না। বরং তাকে বোঝান যে এটি কোন বিষয় না পরবর্তীতে সে যদি পটিতে তার কাজ সম্পন্ন করে তাহলে আরো বেশি ভালো হবে। তাকে স্লাইম এবং ক্লে ডো দিয়ে খেলতে দিন এতে করে তার হাত এবং আংগুলের সমন্বয় সাধন হবে।