৪৫ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ লজ্জা বোধ বেড়ে যায়।

✅ নির্দিষ্ট কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকা কিংবা একনাগাড়ে কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

✅ কাগজ ভাঁজ করতে শিখিয়ে এবং একটি কাগজে প্রায় তিনটি ভাঁজ দিতে পারে।

? উচ্চতাঃ ৯৯.৩-১০০.৮ সে.মি

? ওজনঃ ১৫.৪-১৫.৮ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

এই বয়সে শিশুরা কোন কিছু থেকে উদ্ধার পাবার জন্য হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারে। তবে তার মধ্যে সৃজনশীল নতুন নতুন আইডিয়াও তৈরি হয়। সে এখন বোধগম্য নানা রকম ছবি আঁকতে পারে। হতে পারে সেটি তার পরিবারের সদস্যদের ছবি কিংবা তার কোনো বন্ধুর ছবি। তার বন্ধুদের সাথে মজা করে খেলাধুলা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে এবং দ্রুততার সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। সে তার এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে ২/৩ সেকেন্ডের জন্য লাফিয়ে সামনের দিকে এগোতে পারে। অধিকাংশ সময় তার সামনে লাফিয়ে আসা বল সে হাত দিয়ে ক্যাচ ধরতে পারে। আপনার কিছুটা সাহায্য নিয়ে সে নিজ হাতে খাবার মাখিয়েও খেতে পারে। এছাড়া সে নিজে নিজে তার জামাকাপড় পরতে পারে। যদিও এখনও তার বোতাম লাগানোর ক্ষেত্রে পুরোপুরি দক্ষতা নাও আসতে পারে। সে খুব ভালোভাবেই রং পেন্সিল ধরতে শিখে এবং লম্বা ও গোলাকার আকৃতি গুলো আঁকতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি লাফ দিতে না পারে।

? এক পায়ের ওপরে যদি ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন সময় সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে। যেমন- আজ,‌ গতকাল‌ কিংবা আগামীকাল এই ধরনের সময় সম্পর্কিত বিষয়ে অবগত হয়। একই সাথে সে একরকম এবং ভিন্ন রকম বস্তু আলাদা করতে পারে। কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে সে প্রায় সব বিষয় নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করবে। আপনার সন্তান আগের তুলনায় অনেক বেশি কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। একইসাথে তার জন্য বাস্তব এবং কল্পনা জগতের পার্থক্য করা খুবই মুস্কিল হয়ে যায়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান মজার মজার খেলাধুলার মধ্যে কোন আগ্রহ প্রকাশ না করে।

? এতদিনে যে সকল দক্ষতা সে অর্জন করেছিল সেগুলো হঠাৎ করেই যদি ভুলে যেতে শুরু করে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন আপনাকে খুব সুন্দর করে নকল করার যোগ্যতা অর্জন করে।ছোটবেলায় সে যে সকল বিষয় নিয়ে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে কাদাকাটি করত সেগুলি এখন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সে এখন অনেকটাই স্বাধীনচেতা এবং আত্মবিশ্বাসী আচরণ করে থাকে। আপনার সন্তান তার খেলার সাথী এবং ক্লাসমেটদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করে এবং একজনের পর একজনের টার্ন কিভাবে আসে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। কিভাবে নিয়ম মেনে চলতে হয় সেই সম্পর্কিত ধারণা তার মধ্যে কাজ করে। সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও তার মধ্যে ব্যাপক আকারে আবেগ-অনুভূতির প্রসার ঘটে।

চিন্তার বিষয়ঃ

  • সে যদি তার বন্ধুদের সাথে খেলতে না চায় অথবা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে না চায়।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন সাধারণ প্রশ্ন করতে পারে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সে ২৫০-৫০০ টি কিংবা তারও অধিক শব্দ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারে এবং প্রায় ৬টি শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করে এবং একটির পর আরেকটি বাক্য বলে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। সাধারণ কিছু প্রশ্ন যেমন তার নাম, বয়স, ভাই বোনের নাম ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। আপনার দেওয়া সাধারণ নির্দেশনা মেনে সে কাজ করতে পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

৪৫ মাসের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫৫৪ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।

সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।

দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।

বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।

রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।আবার বিকেল ৫টায় নাশতা দিয়ে রাত ৮টার  মধ্যে রাতের খাবার শেষ করবেন। চাইলে ঘুমের আগে হাল্কা কিছু দিতে পারেন আবার না দিলেও চলে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার সন্তানের উপর সব সময় নজর রাখুন। ঘরের ব্যবহার্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ছুরি, চাকু, কাঁচি, ম্যাচ বক্স কিংবা বড়দের ঔষধ বাচ্চাদের নাগালের বাহিরে রাখুন। ক্রাফটিং করার সময় গ্লুউ গান এবং কাঁচির ব্যবহার থাকলে আপনি সাথে থেকে সেগুলি করতে সাহায্য করুন। যেহেতু সে এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। সে এখনো নিজের নিজের সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।অভিভাবক হিসাবে আপনার উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবে তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণিকে‌ সারাদিন প্রচুর অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। তাকে তার বয়স এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাজল এনে দিন। নিয়মিত তাকে বাহিরে খেলতে নিয়ে যান এবং আপনিও তার সাথে খেলাধুলায় নিযুক্ত হন। তাকে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিন। ঘরের ভিতরে খেলার জন্য তাকে এমন সব খেলনা দিন যেগুলি দিয়ে খেলতে কিছুটা মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। তাকে নিয়ে লুকোচুরি খেলতে পারেন যা তার মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া তাঁর খেলনার মধ্যে স্যান্ডবক্স যুক্ত করতে পারেন কিংবা একটি ছোট পুল তৈরি করে দিতে পারেন। তাকে চক ও বোর্ড এনে দিন এবং প্রতিদিনের সেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু আঁকতে উৎসাহ দিন। খেলার ছলে তাকে পাজল, সংখ্যা এবং অক্ষর মিলানোতে সাহায্য করুন। যখনই সম্ভব হবে তার সামনে কোন কিছু জোরে জোরে গণনা করুন যেন সে গুনতে শিখে। এছাড়াও তাকে নিয়মিত বই পড়ে শোনান এবং এমন সব বই এনে দিন যার গল্পগুলো সাধারণ কিন্তু রঙিন এবং বড় বড় ছবিতে পরিপূর্ণ। তাকে সাধারণ নির্দেশনা গুলো মেনে চলায় অভ্যস্ত করুন। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি তাকে উৎসাহ দান করুন। এইসময় প্রি-স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত বয়স।  প্রি-স্কুলে দেওয়ার আগে যদি সম্ভব হয় তাহলে যেসব বাচ্চারা অলরেডি স্কুলে যায় তাদের সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে তাদেরকে দেখে স্কুলে যাওয়ার জন্য আপনার সন্তানের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হবে। তবে প্রি-স্কুল এ দেওয়ার আগে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা জরুরী। আপনি আপনার সন্তানকে বোঝাতে পারেন যে স্কুল একটি মজার জায়গা এবং সেখানে গেলে অনেক মজার মজার খেলনা এবং বন্ধু পাবে। কিছু সময়ের জন্য মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হবে কিন্তু এই সময়ে তুমি আরো অনেক মজা করতে পারবে। এভাবে আস্তে আস্তে তাকে মানসিকভাবে অভ্যস্ত করে তুলুন যেন তার মধ্যে অতিরিক্ত ভয় থাকলে তা দূর হয়ে যায়।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.