সাধারন বিষয় গুলোঃ
- শিশু তার আশেপাশে থাকা মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে।
- নিজে নিজে দাঁড়াতে শিখে।
- আংগুলের সাহায্যে খাবার ধরে একা একা খেতে পারে।
- নিচের এবং উপরের উভয় চোয়ালে দুটি করে দাঁত উঠে। তবে সেটা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে।
উচ্চতাঃ ৭২.৮-৭৪.৪ সে.মি
ওজনঃ ৯.০-৯.৪ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৪.৬-৪৫.৮ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু এখন এক বছরের পরিপূর্ণ শিশু। এখন আর সে কোলে কোলে ঘুরতে চায়না, সে নিজে নিজে সারা ঘরে হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে কিংবা আসবাবপত্র ধরে ধরে হাঁটতে থাকে।এই সময়ে তার সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো সে নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে এমনকি হাঁটাও শুরু করতে পারে। সে সোফা, চেয়ার কিংবা খাটের ওপর পা তুলে উঠে যায় আবার একা একা নামতেও পারে। তাকে যদি এখন আপনি নাম ধরে ডাকেন তাহলে সে ‘হুমম’ জাতীয় শব্দ করে আপনার ডাকে সাড়া দিবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
বেশিরভাগ শিশুই এই সময়ের মধ্যে হাঁটার জন্য তার প্রথম পা ফেলে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে সেটি আরও কিছুদিন সময় নেয়। এই মাসের মধ্যে যে সকল শিশু হাঁটার জন্য প্রস্তুত হয় তারা খুবই কম দূরত্বের মধ্যে হাঁটতে শুরু করে। দুই বা চার স্টেপ কিংবা একটু বেশি।তবে তার পায়ের ওপর এখন তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। আপনার বাবু এখন বাসার একটি আনন্দময় খেলনা। সে যখন খুশি হয় তখন হাতে তালি দেয়, মাথা দোলাতে থাকে , গান কিংবা মিউজিকের তালে তালে শরীর ঝাঁকাতে থাকে।
সে তার দুই হাত দিয়ে প্লেট, গ্লাস, কাপ ধরতে পারে এবং একা একা আংগুল দিয়ে খাবার তুলে মুখের ভিতর দিতে পারে। এছাড়াও সে হাত দিয়ে বল বা অন্যান্য জিনিস ছুড়ে দিতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- আপনার বাবু যদি এখনও কোনো কিছু ধরে দাঁড়াতে না পারে।
- হামাগুড়ি দেওয়ার সময় সে যদি নিজে নিজে পেছনের দিকে ঘুরতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবুর এখন অন্যতম প্রিয় একটি খেলা হলো বক্স থেকে কোন জিনিস নিয়ে বাইরে রাখা আবার একটি একটি করে সেটি পুনরায় বক্সে উঠানো। এখন থেকে তার স্মরণশক্তির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। সে তার চারপাশের সবকিছু অনেক বেশি আবিষ্কার করতে চায়। সবার সাথে সে যোগাযোগ স্থাপন করে। বাহিরে যাওয়ার সময় সে হাত নেড়ে এবং মুখ দিয়ে বলে টাটা দেয়। এছাড়াও তাকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করা শেখানো হলো সে পুনরায় তা করতে চায়। তার সামনে কোন কিছু লুকিয়ে রাখলে শিশুটি খোঁজার জন্য চেষ্টা করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি এখনও সে কোন জিনিস পয়েন্ট আউট করতে না পারে।
- তার সামনে কোন বস্তু লুকিয়ে রাখলে সে খোঁজার চেষ্টা না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন তার চারপাশে জগতকে আবিষ্কার করতে শুরু করে। কিন্তু সে সব সময় তার আশপাশে আপনাকে খুঁজে। আপনি তার পাশে থাকা অবস্থায়ই সে নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রতি
মগ্ন হয়। কারোর দূরে চলে যাওয়া কিংবা নতুন কারো আগমনে সে বিষন্ন হয়ে পড়ে।এসময় বাড়িতে যারা তার যত্নের জন্য নিয়োজিত থাকে তাদের সাথে তার একটি বন্ধন তৈরি হয়। এছাড়া তার বয়সী কিংবা তাঁর কাছাকাছি বয়সের বাচ্চাদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।
ভাষাগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন ভাষাগত দিক থেকেও অনেকটা এগিয়ে যায়। এতদিন সে মুখে নানারকম শব্দ করতো এবং দা দা ,বা বা শব্দগুলো উচ্চারণ করতো। কিন্তু এখন থেকে সে বুঝেই মাম্মা, বাবা সম্বোধন করে তার মা-বাবাকে ডাকা শুরু করে। সে এখন আপনার দেওয়া ছোট ছোট অর্ডার ফলো করে। যেমন আপনি যদি তাকে বলেন ‘আমাকে বল টা দাও তো’ তাহলে সে তার কাছে থাকা বলতে গিয়ে আপনাকে এনে দিবে। তার মধ্যে একটি শব্দ উচ্চারণ করার প্রবণতা দেখা যায়।এই সময়ে আপনি তার সাথে যত বেশি কথা বলবেন তার ভাষাগত দক্ষতা ততো তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।
চিন্তার বিষয়ঃ
এই বয়সে যদি আপনার বাবু প্রাথমিক কিছু শব্দ যেমন দাদা, বাবা, মামা ইত্যাদি না বলতে পারে তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
স্বাভাবিকভাবেই সে এখন সারারাত ঘুমিয়ে পার করে। এছাড়া সে দিনের মধ্যে দুই কি তিনবার দুই থেকে তিন ঘন্টার জন্য ঘুমায়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এই সময় তাকে বিভিন্ন সবজি এবং মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেও খাওয়ানো যায়।এছাড়াও ফলমূল এবং তরল জাতীয় খাবার নিয়ম করে তাকে খেতে দিতে হবে।আপনার শিশুকে এই সময় ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে নিজ হাতে খেতে অভ্যস্ত করুন। কোন খাবার যদি সে খেতে না চায় তাহলে জোর করে কখনোই খাওয়ানো ঠিক না। মনে রাখবেন আপনি কখনোই একবারে বেশি করে আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারবেন না। নিয়ন অনুযায়ী শিশুকে সারাদিন ও রাত মিলিয়ে তিনবার ভারি খাবার এবং দুইবার হাল্কা নাশতা দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। তবে সে যদি খেতে না চায় তাহলে তার খাওয়ার রুটিন দিনে তিন ভাগে ভাগ না করে বরং সারা দিন অল্প অল্প করে ছয় কিংবা সাত ভাগে ভাগ করে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতিবার খাওয়ানোর পর ২/৩ ঘণ্টা গ্যাপ দিয়ে আবার খাওয়ান।এই সময়ের মধ্যে তার ক্ষুধার সঞ্চার হবে এবং খাবারের প্রতি চাহিদা থাকবে। তাকে সবসময় পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। বাহিরের খাবার এড়িয়ে চলুন। ঘরে তৈরি খাবার আপনার শিশুর জন্য অধিক স্বাস্থ্যসম্মত।ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১২ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৭৭৬.৪ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৭৩৯ মিলি/দিন।
গরুর দুধ : একদমই না।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
১২ মাস বয়সে বাবুরা অনেক বেশি অনুসন্ধানী হয়। তারা যেকোনো কিছুর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে চায়। সে সারাদিন ঘরের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। এইসময় আসবাবপত্রের কোণায় বা পায়ার সাথে লেগে সে ব্যথা পেতে পারে। সে কারণেই ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রে বাচ্চাদের জন্য সেফটি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা হয়। ঘরের বিভিন্ন জিনিস যেমন ঘর পরিষ্কার করার সরঞ্জাম, সাবান, কাপড় ধোয়ার পাউডার ইত্যাদি তাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। এখন আপনার শিশুটি ড্রয়ার, কেবিনেটের দরজা, পাল্লা ইত্যাদির টান দেওয়া শুরু করে। ঘরে এই জাতীয় জিনিসের সেফটি মেজারমেন্ট নিতে হবে। এছাড়াও সকল ইলেকট্রিক্যাল প্লাগ ঢেকে দিতে হবে। কোন ধারালো বস্তু কিংবা ছুরি-কাঁচি যেন তার হাতের নাগালে না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন নিজে নিজে সবকিছু করতে চায়। সে অনেক সময়ই বিরক্ত হয় যদি আপনি তার কাজে সাহায্য করতে চান। একটি হয়তো আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কিন্তু এই সময়ে আপনাকে সবচেয়ে বেশি ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। সে যা চায় অবশ্যই থাকে সেটি করতে দিতে হবে কিন্তু কখনই তার সাথে রাগারাগি বা চিল্লাচিল্লি করা যাবে না। বরং তাকে বুঝিয়ে প্রথমবার তাকে কাজটি করতে দিয়ে আপনি আস্তে আস্তে তাকে সাহায্য করতে পারেন। এর ফলে তার মধ্যে অতিরিক্ত জেদ করার প্রবণতা কমে যাবে।