সাধারন বিষয় গুলোঃ
- ভাষাগত উন্নতি ঘটে।
- একপা দুইপা করে হাঁটা শুরু করে।
- বাসার সদস্যদের সাথে সবসময় কমিউনিকেট করতে থাকে।
উচ্চতাঃ ৭৪.১-৭৫.৭ সে.মি
ওজনঃ ৯.২-৯.৬ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৪.৯-৪৬.১ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
১৪ মাস বয়সী শিশু হাঁটার জন্য তার প্রথম কদম ফেলে। তার হাঁটার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখনো আসে না। এক দুই পা হাঁটার পরে সে নিজে নিজে বসে পড়ে কিংবা পড়ে যেতে পারে। সে এলোমেলোভাবে পা ফেলে, আবার গোড়ালিতে ভর দিয়ে হাঁটতে চায় এইসময় পড়ে যেতে পারে। তাকে নিরুৎসাহিত না করে বেশি বেশি উৎসাহ দিতে হবে যেন সে হাঁটার সময় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই সময়ে শিশুরা একা একা বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারে। তার প্রথম হাঁটা এই মাস থেকেই শুরু হয়। বড়দের সাহায্য নিয়ে সে সিঁড়ির এক দুই ধাপ উঠতে পারে। তার পা ফেলা গুলো খুবই এলোমেলো এবং সেই বেশিরভাগ সময়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে পড়ে। হাঁটতে না পারলেও সে হামাগুড়ি দিয়ে সারা ঘর ঘুরে বেড়ায়। এখন তার খুব পছন্দের কাজটি হলো খাট, সোফা, চেয়ার ইত্যাদি বেয়ে উপরে উঠে বসা এবং নিচে নামা।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার শিশু সন্তান যদি এখনও হাঁটার জন্য তার প্রথম পদক্ষেপ না ফেলে তাহলে এই নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে হাঁটার সময় আরো পরে শুরু হয়। অনেকের ক্ষেত্রে তা ১৭/১৮ মাসও লাগতে পারে। তবে সে যদি হামাগুড়িও না দেয় কিংবা কোনো কিছুই ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা না করে তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন ঘরের সব কিছু আবিষ্কার করতে চায়। ড্রয়ার, কেবিনেট এর পাল্লা, কাপবোর্ড ইত্যাদি খুলে খুলে দেখে এবং সেগুলির ভেতর থেকে জিনিস নিয়ে আবার সেখানেই রেখে দেয়। এটি তার জন্য মজার একটি খেলা। এছাড়া সে সব জিনিস মুখে দেয় বিশেষত্ব ফ্লোরে বা মেঝেতে পড়ে থাকা বস্তু সে হাতে নেওয়ার পর সেটি খুব ভালোভাবে দেখে এবং মুখে দিয়ে ফেলে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার বাবু সাধারণ ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে না পারে।
- সে যদি অবজেক্ট ফলো করতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখনো আপনাকে সবচেয়ে আপনজন হিসাবে গ্রহণ করে। তারমধ্যে আপনাকে সাহায্য করার প্রবণতা দেখা যায়। যেমন ছোট ছোট জিনিস এগিয়ে দেওয়ার মধ্যে সে খুব আনন্দ খুঁজে পায়। এর মাধ্যমে সে নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মেনে নেয়। নানারকম দুষ্টুমি করে সে আপনাকে যেমন আনন্দে ভাসিয়ে দেয় আবার আপনার পরিশ্রমও বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। এছাড়া সে একা একা তার খেলনা নিয়ে খেলাধুলা করে আপনাকে আপনার কাজ করতেও সাহায্য করে। এই বয়স থেকে তার মধ্যে অন্ধকারের প্রতি বিশেষ করে রাতে অন্ধকার ঘরে থাকা একটি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্ধকারে সে কান্নাকাটি করতে পারে কিংবা আপনার সাহায্য চায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- নতুন কোন কিছু দেখলে কিংবা নতুন পরিবেশে সে যদি নির্লিপ্ত আচরণ করে।
- নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির দ্বারা কিংবা পরিবেশে যদি সে ভয় পায় এবং কান্নাকাটি করে।
ভাষাগত পরিবর্তনঃ
সে এখন আপনাকে তার মনের ভাব যথাসম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করে। দিন দিন তার ভাষাগত দক্ষতার যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। সে আপনার মুখের ভাষা সবই বুঝতে পারে এবং কোন শব্দটির কি মানে সেটিও সে ধরতে চেষ্টা করে।আপনার সন্তান এখন একটি কিংবা খুব বেশি হলে দুইটি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। মাম, মাম্মা, বাবা, টাটা, দাদা, বল, ওয়াও, বাহ এই শব্দগুলি সাধারণত সে উচ্চারণ করে। এছাড়া দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে ‘উউহ’ , ‘হূমম’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে ডাকতে থাকে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার বাবু কোন শব্দই মুখে উচ্চারণ না করে।
- যদি সে কোন শব্দ বুঝতে না পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের ক্ষেত্রে সে এখন তার মতামত দিতে শুরু করে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি খাবার তার পছন্দ হয়না। এজন্য তাকে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দিয়ে দেখতে হবে যেন তার খাবারের রুচি বজায় থাকে। সেই সাথে খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিনও আপনাকে তৈরি করতে হবে। তার সকালের নাস্তা সাতটা কিংবা আটটা খুব বেশি হলে নয়টার মধ্যে সেরে নিতে হবে। এরপর এগারোটার দিকে তাকে হালকা কিছু স্নাক্স বা ফল/ফলের রস দিতে হবে। দুপুরে ভারী খাবার, বিকালের নাস্তা এবং রাতে আটটার মধ্যে তার খাবার শেষ করতে হবে। প্রতিবেলায় যদি তাকে ঠিকমতো না খাওয়ানো যায় তাহলে সেটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে অল্প অল্প করে হলেও সারাদিনে খাইয়ে দিতে হবে। তার বাড়তি শরীরের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে তার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের যোগান দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৪ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৮১৮.৯ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪৫০-৫০০ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ পান করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার আদরের সোনামণি এখন সারা ঘর একটু একটু করে হেঁটে বেড়ায়। এই সময় আপনাকে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে । সবসময়ই তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে সে ব্যথা পেতে পারে এমনকি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। সে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের পাল্লা, ড্রয়ার খুলতে চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে ধাক্কা লেগে তার চোখমুখে এমনকি হাত-পায়ে ব্যথা লাগতে পারে। এইসব জিনিসের উপরে বাচ্চাদের উপযুক্ত সেফটি মেজারমেন্ট নিতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে শিশুরা খুব বেশি পরিমাণে নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। তাই তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ে শোনান। দিনে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বই পড়ে শোনান। বইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। যেমন আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন বলতো এখানে লাল বলটি কোথায়? বইটির যদি আপনি তাকে আগে পড়িয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন লাল বলটি সে ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে। এভাবে নতুন নতুন জিনিস শেখার প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন।