সাধারন বিষয় গুলোঃ
- নতুন শব্দ বলা শুরু করে। অন্তত সাতটি শব্দ বলতে পারে।
- আপনার বলা যেকোনো কথা বুজতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দেয়।
উচ্চতাঃ ৭৬.৪-৭৭.৯সে.মি
ওজনঃ ৯.৭-১০.১ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৫.৫-৪৬.৬ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই সময়ের মধ্যে আপনার শিশুর হাঁটার মধ্যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। সে এখন ব্যালেন্স করে তার পা ফেলতে পারে। এমনকি সে তার কোন খেলনা হাতে করে নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে।সে টুল বা ছোট চেয়ার ঠেলে নিয়ে উঁচুতে রাখা কোন বস্তুর কাছে যায় এবং টুলের উপরে উঠে সেগুলো পাড়ার চেষ্টা করে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার ১৬ মাস বয়সী শিশুর সারাদিন ঘরের মধ্যে দৌড়ে বেড়াবে। সে এতটাই চঞ্চলতা দেখাবে যে আপনি তার পেছনে পেছনে থাকতে গিয়ে প্রায়ই হাঁপিয়ে উঠবেন। সে এখন তার জিনিসপত্র নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াবে। কোন কিছু উপর থেকে নীচে নামানোর প্রতি তার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। সে খাঁচার পাখি, অ্যাকুরিয়ামের মাছ , বারান্দার গাছপালা এসব দেখে খুবই পুলকিত হয়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার কাছে মনে হয় শিশু আপনার কথা ঠিকমত শুনতে পাচ্ছে না।
- যদি আপনার শিশু এখনো হাঁটতে না পারে।
- যদি সে তার শরীরের কোন একটি অঙ্গ যেমন একটি হাত বা পা ব্যবহার করে কোন কাজ না করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এই সময় বাবুরা অনেক বেশি অনুকরণপ্রিয় হয়। সে তার খেলনা নিয়ে খেলার সময় বড়দের মতো আচরণ করার চেষ্টা করে। যেমন খেলনা কাপ বা মগে চা খাওয়ার অভিনয় করে সে মুখ দিয়ে ‘আহহহ’ শব্দ করে চা খাবে।আবার টেলিভিশন এর রিমোট নিয়ে মোবাইল বানিয়ে কথা বলবে আর সারা ঘর ঘুরবে। এরকম নানা প্রকার দুষ্টুমি করে আপনাকে মাতিয়ে রাখবে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- নতুন কোন পরিবেশে সে যদি নির্লিপ্ত আচরণ করে।
- নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির দ্বারা কিংবা পরিবেশে যদি সে ভয় পায় এবং কান্নাকাটি করে।
- সে যদি তার উপযোগী সাধারণ কার্যকলাপ না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করে। কিন্তু সে তার নিজের জিনিসের ব্যাপারে খুব বেশি অধিকারী হয়।তার খেলনা,খাবার এমনকি সবার কাছ থেকে সে যে মনোযোগ পায় সেটিও কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। আপনি যদি আপনার সন্তানের সামনে অন্য কোন বাচ্চাকে কোলে নেন বা আদর করেন তাহলে সে কোনোভাবেই সেটি মেনে নিতে চায়না, এমনকি সে কান্নাও শুরু করে দিতে পারে। তবে সে এখন অন্যের অনুভূতি গুলো বোঝার চেষ্টা করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- তার চোখে চোখ রেখে কথা বললেও সে যদি কোন প্রতিক্রিয়া না দেখায়।
ভাষাগত পরিবর্তন ঃ
আপনার সন্তানের ভাষাগত দক্ষতা এখন আরও কিছুটা উন্নত হয়। সে এখন কিছু একটা বলে তার কথাগুলো প্রকাশ করে। তার ভাষাগুলো পুরোপুরি স্পষ্ট বোঝা না গেলেও আপনি বুঝতে পারবেন সে কি বলতে চায়। আপনি তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলেও সে কিছু একটা বলে আপনার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।
চিন্তার বিষয় ঃ
এই বয়সেও আপনার শিশু যদি একটি শব্দও উচ্চারণ করতে না পারে তাহলে তা আপনার জন্য চিন্তার বিষয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এখন থেকেই আপনার শিশুকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করুন। তাকে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে নিজ হাতে খেতে দিন। সেইসাথে তাকে নানা রকম খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। এর ফলে সে নিজে হয়তো অল্প খেতে পারবে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন খাবারের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হবে। ব্লেন্ড করা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। ব্লেন্ড করা খাবারে কোন খাদ্যেরই সঠিক স্বাদ পাওয়া যায় না। যার ফলে খাবারের প্রতি শিশুর কোন আগ্রহ থাকে না। সে যদি একটি একটি করে আইটেম নিয়ে খাওয়া শুরু করে তাহলেই তার বিভিন্ন রংয়ের এবং স্বাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে এবং সে মজা করে খাবে।
এক এক বাচ্চার খাবারের ধরণ এক এক রকম। কারোর হয়তো তিন চামচেই পেট ভরে যায় আবার কারো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্লেট শেষ করার পরেও তাকে এক্সট্রা খাবার দিতে হয়। তাই কখনোই আপনার বাচ্চাকে অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করতে যাবেন না। আগে তার খাবারের চাহিদা সম্পর্কে বুঝে তাকে সে অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৬ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৮৫৪.৫ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ (ফুল ক্রিম): ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ পান করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার আদরের সোনামণি এখন সারা ঘর জুড়ে বিচরণ করে। এই সময় আপনাকে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে । সবসময়ই তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে সে ব্যথা পেতে পারে এমনকি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। সে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের পাল্লা, ড্রয়ার খুলতে চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে ধাক্কা লেগে তার চোখমুখে এমনকি হাত-পায়ে ব্যথা লাগতে পারে। এইসব জিনিসের উপরে বাচ্চাদের উপযুক্ত সেফটি মেজারমেন্ট নিতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সোনামণির এখন খেলার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী থাকে। তাকে নতুন নতুন খেলনা এনে দিন। বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলনা যেমন ব্লক, পাজেল ইত্যাদি খেলনাগুলো তার বুদ্ধি বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।এই বয়সে শিশুরা খুব বেশি পরিমাণে নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। তাই তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ে শোনান। দিনে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বই পড়ে শোনান। বইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। এভাবে নতুন নতুন জিনিস শেখার প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন।