সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ কোন সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে বসতে পারে।
✅ নিজে থেকে কোন জিনিস ধরতে পারে।
✅ ভাষাগত উন্নতি ঘটে। দাদ-দা,বা-বা, মাম-মা ইত্যাদি শব্দ করে।
? উচ্চতাঃ ৬৫.৭-৬৭.৬ সে.মি
? ওজনঃ ৭.৩-৭.৯ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪২.২-৪৩.৩ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার ৭ মাস বয়সী ছোট্ট সোনামণি এখন নিজে নিজে শোয়া থেকে উঠে বসতে পারে। কোন জিনিস তার সীমানার বাইরে থাকলে সে সেটি নেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে চায় এবং সে নিজ হাতে জিনিস ধরতে পারে। তার ভাষাগত উন্নতি এখন আরো বেড়ে যায়। তবে তার থেকেও বেশি আপনার কথা শুনে সেটি বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি যায়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন নিজে নিজে বসতে শিখে। তাকে যদি আপনি দাঁড় করিয়ে দেন তাহলে সে অনেকটাই তারপর তার পায়ের উপরে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এবং সে ওপর-নিচে লাফাতে থাকে। এখনো সে একা একা দাঁড়াতে সক্ষম নয়, তাকে দাড় করানোর সময় অবশ্যই আপনাকে ধরে রাখতে হবে। সে তার সামনে থাকা কোন খেলনা বা জিনিস ধরার জন্য সামনের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে নিজে নিজে তার খেলনা দুই হাতে ধরতে পারে এবং সেটি নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়।
আপনার বাবুকে এখন তার হাতে কোন খাবার দিলে সেটি ধরে সে মজা করে খায়। সে তার হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের ব্যবহার করে সমতলে বা প্লেইন সারফেসে থাকা ছোট ছোট জিনিসপত্র ধরতে পারে। যেমন ঘরের মেঝেতে থাকা কোন মুড়ি সে হাত দিয়ে তুলে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। সে এখন দুই হাতে তালি দেওয়া এবং টা-টা দেওয়া শিখে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? কোনভাবেই যদি সে বসতে না পারে কিংবা বসার পরে মাথার ভারে পেছন থেকে পড়ে যায়।
? তার সামনে থাকা কোনো বস্তু বা খেলনা ধরার জন্য সামনে এগিয়ে না যায়।
? তার চোখ দিয়ে যদি অনবরত পানি পড়ে এবং আলোর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন চেনা এবং অপরিচিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অপরিচিত কোন পরিবেশে কিংবা মানুষের সামনে সে কান্নাকাটি করে। এই বয়সে শিশু কোন বস্তুর প্রতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে শিখে এবং বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। যেমন আপনি যদি তার সামনে পি-কাবু/টুকি খেলাটি করেন তাহলে সে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত হয়। এছাড়াও সে এখন পুনরাবৃত্তির বিষয়টি বুঝতে শিখে। তাই সে একই ছড়া বা গান বারবার দেখতে পছন্দ করে। বিশেষ করে তার উপযোগী রাইমস বা ছড়াগান তার খুব পছন্দ। এই সময়ে আপনি যদি তার পছন্দের কোন খেলনা তার থেকে নিয়ে নেন কিংবা সে যখন তার পছন্দের ছড়া গানগুলো শুনে তখন তা বন্ধ করে দেন তাহলে সে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার বাবু আপনার ডাকে যদি সাড়া না দেয় কিংবা তার আশপাশে আপনি ঘোরাঘুরি করা সত্ত্বেও যদি সে ফলো না করে তাহলে এটি আপনার জন্য চিন্তার বিষয়।কোন বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করতে যদি তার সমস্যা হয় এটিও একটি চিন্তার বিষয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন আপনার সঙ্গ খুব ভালোবাসে। আপনি যখন তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে থাকেন তখন সে কান্না করে ওঠে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় তার আপনাকে চায় ই চাই।
এই বয়সে শিশু সম্ভবত আপনার কণ্ঠস্বর শুনে আপনার আবেগ বুঝতে পারে।
আপনি যদি তার সাথে জোরে কথা বলেন কিংবা তাকে কোন কিছু নিতে না করেন অথবা তাকে বকা দেন তাহলে সে কান্না করতে পারে। সে আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য অনেক হাস্যকর অঙ্গভঙ্গিও করে থাকে।
এই সময় তার নাম ধরে ডাকলে সে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় আর ডাকে সাড়া দেয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার বাবুকে যারা দেখাশোনা করে তাদের প্রতি সে যদি কোন রেসপন্স না করে।
? আপনার বাবু যদি আশেপাশের পরিবেশের প্রতি আগ্রহ না দেখায়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এখন থেকে বাবুর ঘুমের সময় আরো কমতে থাকে এবং তার খেলার সময় বৃদ্ধি পায়। রাতে যদি তার ক্ষুধা পায় তাহলে সে কিছুক্ষণের জন্য জেগে ওঠে। পেট ভরে খাইয়ে দিলে সে রাতে একটানা ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? ৭ মাস বয়সের মধ্যেও যদি শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক না হয় অথবা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এখন থেকেই আপনার সন্তান বাড়তি খাবারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত । শুধুমাত্র বুকের দুধে তার বাড়তি শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়না। তাই এখন থেকে অল্প অল্প করে তাকে সলিড খাবার খাওয়ানো শুরু করা হয়। আপনি যদি তাকে খিচুড়ি খাওয়ানো শুরু করেন তাহলে এই সপ্তাহ থেকে চাল এবং ডাল এর সাথে একটি বা দুটি করে সবজি যোগ করতে পারেন। প্রথম এক বছর বাবুর খাবারে কোন লবণ বা চিনি ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এগুলি তার শরীরের জন্য গ্রহণযোগ্য না। প্রথম এক সপ্তাহ চালডাল এবং পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে একটি করে সবজি দিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে বাবুকে কয়েক চামচ খাওয়ালেই যথেষ্ট। এই সময় আপনার খেয়াল রাখতে হবে যে কোন খাবারে বাবুর এলার্জি বা অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। এভাবে ৭-৯ মাস পার করার পরে খাবারে মুরগির মাংস/মাছ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার যোগ করতে হবে। মনে রাখবেন প্রথম এক বছর বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের খাবার অল্প করে খাওয়ালেই যথেষ্ট। এখনো আপনার বুকের দুধই আপনার শিশুর জন্য প্রধান খাবার।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৭ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৬৬০.৭ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৮২৮ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩.৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ৪১ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ২৮ গ্রাম/দিন।
পানি: ৬০-১১০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ২ থেকে ৩ বার তার প্রধান খাবার খাবে। প্রতিবারেই ২/৩ চামচ খাবারই যথেষ্ট। এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
এখন থেকেই আপনার ইলেকট্রিক সুইচ/প্লাগ, বাসার দরজা, ড্রয়ার, কেবিনেট এর পাল্লা জাতীয় জিনিসের উপরে সেফটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। সে যখন বসে থাকে তখন তার আশপাশে বালিশ কিংবা কুশন বা নরম কোন জিনিস রেখে দিন যেন সে পড়ে গেলেও ব্যথা না পায়।
আপনার বাবু উজ্জ্বল রঙের জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আপনার পরিহিত চকচকে গহনা গুলোও ধরতে চায়। এই কারনে চোখা/শার্প গহনা পড়ে বাবুকে ধরার সময় সাবধান থাকুন। বাবুর হাতের কাছে কোন ছোট জিনিস রাখবেন না কেননা সে এখন হাতের কাছে যা পাবে সেটাই মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে। ধারালো বস্তু যেমন ছুরি-কাঁচি কিংবা ওষুধ বাবুর নাগালের বাইরে রাখুন। এই বয়সে কখনোই বাবুকে বিছানায় একা রেখে যাবেন না। একা থাকা তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
এছাড়া সবসময় বাবুর ডায়পারের খেয়াল রাখুন। ডায়পার ভারী হলে তা সাথে সাথেই পরিবর্তন করতে হবে নাহলে বাবুর র্যাশ উঠে যেতে পারে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার ছোট সোনামণিদের এখন বেশি বেশি খেলাধুলা করতে দিন। তাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরে আসুন। বাইরের খোলা হাওয়া তার শরীর এবং মনের উপরে দারুণ প্রভাব ফেলবে। তাকে নিয়মিত বাচ্চাদের প্লেগ্রাউন্ড এ নিয়ে যান এতে করে সে নিজে খেলতে না পারলেও অন্যদের খেলা দেখে অনেক উচ্ছ্বসিত হবে এবং সেটি শিখতে পারবে।
এখন সময় এসেছে আপনার বাসাটি ছোট্ট সোনামণির জন্য উপযুক্ত করে সাজানো। আপনার বাচ্চার আশপাশে বাচ্চাদের খেলার উপযুক্ত জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রাখুন। ফ্লোর ম্যাট, সফট টয়, র্্যাটল
টয়, বিভিন্ন মিউজিক্যাল টয় ইত্যাদি খেলনা দিয়ে আপনার বাসাটি সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলুন। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হবে। তাকে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটির মধ্যে রাখুন। যেমন তার থেকে কিছু দূরে একটি খেলনা রেখে দিন যেন সে সামনের দিকে এগিয়ে এসে খেলনাটি ধরতে চেষ্টা করে।শিশুকে দিনে অন্তত একবার টামি টাইম দিন। এতে তার শরীরের মাংসপেশি শক্ত হবে এবং সে আরও বেশি একটিভ হয়ে উঠবে।