সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ খালি পায়ে কিছুদূর হাঁটতে পারে।
✅ বাবা এবং মাম্মা ছাড়াও একটি শব্দ যেমন বাই, টা টা, হাই বলতে পারে।
✅ নিচু হয়ে কোন বস্তু হাত দিয়ে তুলে উঠে দাঁড়াতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৭২.৮-৭৪.৪সে.মি
? ওজনঃ ৯.০-৯.৪ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৪.৬-৪৫.৮ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
১৩ মাস বয়সের শিশুর ওজন আগের মত অত বেশি বৃদ্ধি পায় না অর্থাৎ ওজন বৃদ্ধির গতি কিছুটা মন্থর হয়ে যায়। এ সময় তার শারীরিক পরিবর্তন গুলো আপনি সহজেই দেখতে পাবেন। তার হাত এবং পায়ের ভাজগুলো এখন অচিরেই মিলিয়ে যায়। এই সময় এর ওজন বৃদ্ধি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং ওজন এবং উচ্চতার সাথে তার সুস্থতা এবং স্বাভাবিক কর্মচঞ্চলতা বজায় আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই সময়ে আপনার বাবু একপা দুপা করে হাঁটার চেষ্টা করে। কিন্তু সে এখনো পুরাপুরি তার হাটার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে না। তার পা ফেলা গুলো খুবই এলোমেলো এবং সেই বেশিরভাগ সময়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসে পড়ে। হাঁটতে না পারলেও সে হামাগুড়ি দিয়ে সারা ঘর ঘুরে বেড়ায়। এখন তার খুব পছন্দের কাজটি হলো খাট, সোফা, চেয়ার ইত্যাদি বেয়ে উপরে উঠে বসা এবং নিচে নামা।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার শিশু সন্তান যদি এখনও হাঁটার জন্য তার প্রথম পদক্ষেপ না ফেলে তাহলে এই নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে হাঁটার সময় আরো পরে শুরু হয়। অনেকের ক্ষেত্রে তা ১৭/১৮ মাসও লাগতে পারে। তবে সে যদি হামাগুড়িও না দেয় কিংবা কোনো কিছুই ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা না করে তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
১৩ মাস বয়সে বাচ্চারা কোন কিছু কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। এই সময়ে তার একটি পছন্দের খেলা হলো সে হাত থেকে কোন কিছু ফেলে দিয়ে দেখতে চায় যে কি হয়, এই সময়ে আপনি যদি সেটি উঠিয়ে তার হাতে দেন সে খুশি হয় এবং আবারও সেটি আগের মতো ফেলে দেয় আর দেখতে চাই আপনি পুনরায় সেটি তার হাতে তুলে দিচ্ছেন কিনা। এই খেলাটি তার জন্য খুবই আনন্দদায়ক একটি খেলা। এই বয়সে এসে আপনার ছোট ছোট ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে পারে। তবে সবক্ষেত্রে সেটি নাও হতে পারে। তার নিজস্ব মত দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে তার চারিদিকের সবকিছুর সাথে পরিচিতি হতে থাকে। সে যদি টিভিতে নার্সারি রাইমস দেখে কিংবা আপনি যদি তাকে বিভিন্ন বই পড়ে শোনান তাহলে তাকে সেই বইয়ের কোন অবজেক্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে সেটি দেখিয়ে দিতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার বাবু সাধারণ ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে না পারে।
? সে যদি অবজেক্ট ফলো করতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন মানসিকভাবেও বেশ পরিপক্ক। সে আগের মত কোন কিছু চাওয়ার জন্য বা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কান্নাকাটি করে না। বরং সে আপনাকে ইশারায় বা তার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দেয়। এখন আপনার বাবুর নিজস্ব মতামত এবং আবেগ তৈরি হয়। সে এখন খাবার ব্যাপারে তার মত দিতে শুরু করে। খাওয়ার পরিবর্তে সে খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। ডায়াপার পাল্টানোর সময় রীতিমতো তার সাথে যুদ্ধ করা লাগে। কারন সে ডায়পার পরিবর্তনের সময় শুয়ে থাকতে চায় না। তার নিজস্ব মতামত তৈরি হলেও অপরিচিত পরিবেশে সে আপনার ওপরেই নির্ভর করে। তখন সে চুপচাপ থাকে এবং সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার থেকে দূরে থাকার ফলে সে যদি অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে এবং উদ্বিগ্ন হয়।
ভাষাগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন একটি কিংবা খুব বেশি হলে দুইটি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। মাম, মাম্মা, বাবা, টাটা, দাদা এই শব্দগুলি সাধারণত সে উচ্চারণ করে। এছাড়া দূর থেকে কাউকে ডাকতে হলে 'উউহ' , 'হূমম' 'আআহ' জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে ডাকতে থাকে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের ক্ষেত্রে সে এখন তার মতামত দিতে শুরু করে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি খাবার তার পছন্দ হয়না। এজন্য তাকে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দিয়ে দেখতে হবে যেন তার খাবারের রুচি বজায় থাকে। সেই সাথে খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিনও আপনাকে তৈরি করতে হবে। তার সকালের নাস্তা সাতটা কিংবা আটটা খুব বেশি হলে নয়টার মধ্যে সেরে নিতে হবে। এরপর এগারোটার দিকে তাকে হালকা কিছু স্নাক্স বা ফল/ফলের রস দিতে হবে। দুপুরে ভারী খাবার, বিকালের নাস্তা এবং রাতে আটটার মধ্যে তার খাবার শেষ করতে হবে। প্রতিবেলায় যদি তাকে ঠিকমতো না খাওয়ানো যায় তাহলে সেটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে অল্প অল্প করে হলেও সারাদিনে খাইয়ে দিতে হবে। তার বাড়তি শরীরের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে তার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের যোগান দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৩ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৮০১.১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার বাবু সারা ঘর হামাগুড়ি দিয়ে কিংবা আসবাব ধরে ধরে ঘুরে বেড়ায়। তাই এই সময় অবশ্যই তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে সে ব্যথা পেতে পারে এমনকি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। সারা ঘর ঘুরে বেড়ানোর ফলে সে একা একা রান্নাঘরে চলে যেতে পারে। তাই রান্নাঘরের চুলা, দা, বটি ইত্যাদি তার নাগালের বাইরে রাখুন। তার জন্য আরও আকর্ষণীয় বস্তু হল ইলেক্ট্রিক সুইচ। এগুলো অবশ্যই কভার করে রাখার ব্যাবস্থা করুন যেন তার হাত সেগুলোর মধ্যে পৌছাতে না পারে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে শিশুরা খুব বেশি পরিমাণে নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। তাই তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ে শোনান।দিনে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বই পড়ে শোনান। বইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। যেমন আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন বলতো এখানে লাল বলটি কোথায়? বইটির যদি আপনি তাকে আগে পড়িয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন লাল বলটি সে ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে। এভাবে নতুন নতুন জিনিস শেখার প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন।