সাধারন বিষয় গুলোঃ
- অনেক বেশি পরিমাণে খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
- সামাজিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
- নিজস্ব মতামত তৈরি হয় এবং মতের বাইরের কোন কিছু মেনে নিতে পারে না।
উচ্চতাঃ ৭৫.১-৭৬.৯সে.মি
ওজনঃ ৯.৫-৯.৯ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৫.২-৪৬.৩ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য। সে সারাদিন আপনাকে এতই ব্যস্ত রাখবে যে আপনি নিজেও টের পাবেন না দিনের অধিকাংশ সময় কিভাবে পার হয়ে যায়। এই বয়সে যে সারাদিন খেলাধুলা করে এবং অ্যাডভেঞ্চার খুঁজতে থাকে। যেমন চেয়ারের উপরে উঠে টেবিলে ওঠা কিংবা একা একা গ্লাসে পানি ঢালা। এই কাজগুলি তার জন্য অনেক বেশি আকর্ষণীয়। তবে শত আনন্দের মাঝেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার উপরই বর্তায়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সের মধ্যে আপনার সন্তানের হাঁটা মোটামুটি আয়ত্তে চলে আসে। সে এখন সামনে থেকে পেছনে ঘুরে হাঁটতে পারে। তার হাঁটার গতি এতটাই দ্রুত থাকে যে আপনার কাছে মনে হবে সে দৌড়াচ্ছে। তবে এই সময়ের মধ্যে বাচ্চারা হাঁটতে গিয়ে ব্যথা পায় সবচেয়ে বেশি। তাই আপনাকে অবশ্যই তার পিছে পিছে থাকা লাগবে।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার শিশু সন্তান যদি এখনও হাঁটার জন্য তার প্রথম পদক্ষেপ না ফেলে তাহলে অনেক সময় দুশ্চিন্তা হয়। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে হাঁটার সময় আরো পরে শুরু হয়। অনেকের ক্ষেত্রে তা ১৭/১৮ মাসও লাগতে পারে। তবে সে যদি হামাগুড়িও না দেয় কিংবা কোনো কিছুই ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা না করে তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এখন আপনার শিশু তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, কান, নাক, মাথা, চুল হাত-পা ইত্যাদি দেখিয়ে দিতে পারে। সে তার বইয়ে পড়া অথবা ছড়ায় দেখা পশুপাখি, ফলফুলসহ অন্যান্য জিনিস এর ছবি আশেপাশে দেখলে সেগুলি চিনতে এবং বলতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
-
নতুন কোন অ্যাক্টিভিটি কিংবা পরিবেশে সে যদি নির্লিপ্ত আচরণ করে।
-
নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির দ্বারা কিংবা পরিবেশে যদি সে ভয় পায় এবং কান্নাকাটি করে।
-
সে যদি তার উপযোগী সাধারণ কার্যকলাপ না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে খুব পছন্দ করে। এমনকি সে আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়। সে তার বাবা মায়ের ছবি দেখেও অনেক খুশি হয়। সে অনুকরণ করতে খুব ভালবাসে। তাই তার সামনে বাসার সবার আচরণ এবং কথাবার্তা যথেষ্ট সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন।
চিন্তার বিষয়ঃ
-
আপনার সন্তান যদি আপনার মনোযোগ আকর্ষণের কোন চেষ্টাই না করে।
-
তাকে একটি কাজ ছেড়ে অন্যটি করতে বলা হলে সে যদি অতিরিক্ত আপসেট হয়ে যায় এবং চিল্লাচিল্লি করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ঃ
আপনার সন্তান এখনো আকার-ইঙ্গিতে মাধ্যমে তার কথাগুলো বুঝিয়ে থাকে। তার ভাষাগত স্পষ্টতা তৈরি হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এখনো সে একসাথে একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। তবে তার শব্দের ভান্ডার আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। এই বয়স থেকে 'না' শব্দটি তার খুব পছন্দের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে তার নিজের মত প্রকাশ করে 'না' শব্দটি ব্যবহার করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার বাবু কোন শব্দই মুখে উচ্চারণ না করে।
- যদি সে কোন শব্দ বুঝতে না পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের ক্ষেত্রে সে তার মতামত দেয়। প্রতিদিনের একঘেয়েমি খাবার তার পছন্দ হয়না। এজন্য তাকে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দিয়ে দেখতে হবে যেন তার খাবারের রুচি বজায় থাকে। সেই সাথে খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিনও আপনাকে তৈরি করতে হবে। তার সকালের নাস্তা সাতটা কিংবা আটটা খুব বেশি হলে নয়টার মধ্যে সেরে নিতে হবে। এরপর এগারোটার দিকে তাকে হালকা কিছু স্নাক্স বা ফল/ফলের রস দিতে হবে। দুপুরে ভারী খাবার, বিকালের নাস্তা এবং রাতে আটটার মধ্যে তার খাবার শেষ করতে হবে। প্রতিবেলায় যদি থাকে ঠিকমতো না খাওয়ানো যায় তাহলে সেটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে অল্প অল্প করে হলেও সারাদিনে খাইয়ে দিতে হবে। তার বাড়তি শরীরের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে তার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের যোগান দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৫ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৮৩৬.৭ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ (ফুল ক্রিম): ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ পান করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার আদরের সোনামণি এখন সারা ঘর জুড়ে বিচরণ করে। এই সময় আপনাকে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে । সবসময়ই তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে সে ব্যথা পেতে পারে এমনকি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। সে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের পাল্লা, ড্রয়ার খুলতে চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে ধাক্কা লেগে তার চোখমুখে এমনকি হাত-পায়ে ব্যথা লাগতে পারে। এইসব জিনিসের উপরে বাচ্চাদের উপযুক্ত সেফটি মেজারমেন্ট নিতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সোনামণির এখন খেলার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী থাকে। তাকে নতুন নতুন খেলনা এনে দিন। বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলনা যেমন ব্লক, পাজেল, মিউজিক্যাল সেট ইত্যাদি খেলনাগুলো তার বুদ্ধি বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।এই বয়সে শিশুরা খুব বেশি পরিমাণে নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। তাই তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ে শোনান। দিনে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বই পড়ে শোনান। বইয়ের বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। যেমন আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন বলতো এখানে লাল বলটি কোথায়? বইটির যদি আপনি তাকে আগে পড়িয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন লাল বলটি সে ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে। এভাবে নতুন নতুন জিনিস শেখার প্রতি তার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন।