সাধারন বিষয় গুলোঃ
-
এই সময়ের মধ্যে সলিড/শক্ত খাবারের সাথে শিশুর ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এডজাস্ট হয়ে যায়।
-
কোনরকম সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে বসতে পারে এবং বসে থেকে খেলাধুলা করে।
-
পায়ের মাংসপেশি শক্তি অর্জন করে ফলে সাপোর্ট পেলে পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।
উচ্চতাঃ ৬৭.৩-৬৯.০ সে.মি
ওজনঃ ৭.৯-৮.৩ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪২.৮-৪৪.০ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই সময়ের মধ্যে আপনার বাবুর ঘুমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি হয়ে যায়। সে তার খাবারের সাথেও মোটামুটি এডজাস্ট করে ফেলে। ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে বাবুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ফলে এর মধ্যে আপনি বুঝে যাবেন কোন নির্দিষ্ট খাবারে তার এলার্জি বা অন্য কোন সমস্যা হয় কিনা। এই বয়স থেকেই সে রিপিটেশন বুঝতে শিখে। তাই একই ছড়া বা গল্প সে বারবার শুনতে চায়। এসময়ের মধ্যে সে ভালোভাবে হাত নেড়ে টাটা/বাই বলতে পারে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন বিভিন্নভাবে হামাগুড়ি দিয়ে কিংবা হাত ও পায়ের উপরে ভর দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে পারে। এ সময় তার অ্যাক্টিভিটি বেড়ে যায়। সে বল কিংবা ব্লক জাতীয় খেলনা দিয়ে খেলতে পছন্দ করে। সে এখন হাত দিয়ে জিনিস ছুড়ে দেয়। এই বয়সেই সে ক্ষুদ্র কোন জিনিস (যেমন-মুড়ি) তার দুই অঙ্গুল দিয়ে ধরার চেষ্টা শুরু করে। যদিও সে এখনো পুরোপুরি সফল হয় না। সে তার হাতে তালি দিতে পারে এবং কোন কিছুর ওপরে ভর দিয়ে পায়ের উপরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
-
যদি আপনার বাবু তার পায়ের উপরে ভর দিতে না পারে।
-
যদি এখনও সে সাপোর্ট ছাড়া বসতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন একই কাজের পুনরাবৃত্তি করতে চায়। যেমন সে এক বল বারবার ছুড়ে দেয় আবার সেটি পুনরায় হাতে নিতে চায় কিংবা আশা করে আপনি সেটি উঠিয়ে আবার তার হাতে দিবেন এবং সে আবার সেটি ফেলে দিবে। সে কোন কিছুর কারণ এবং ফলাফল দেখতে চায়। সে এখন সমস্যা সমাধান করতে চায়। যেমন দূরে থাকা কোনো পছন্দের খেলনার কাছে যেভাবেই হোক পৌঁছানো। সে বস্তুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে এবং লুকিয়ে থাকা বস্তু খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে।
এছাড়াও তার নাম ধরে ডাকলে সে এখন ঘুরে তাকায় এবং উত্তর দেয়।
চিন্তার বিষয়ঃ
-
যদি আপনার বাবু এখনো আপনার সাথে চোখে চোখ না রাখে অর্থাৎ আই কন্টাক্ট না করে।
-
যদি কোন শব্দ শুনে সে ঘুরে না থাকায়।
-
তার নাম ধরে ডাকলে যদি সে সাড়া না দেয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন চেনা এবং অপরিচিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। অপরিচিত কোন পরিবেশে কিংবা মানুষের সামনে সে অস্বস্তি বোধ করে এবং কান্নাকাটি করে। এই বয়সে শিশু কোন বস্তুর প্রতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করতে শিখে এবং বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। যেমন আপনি যদি তার সামনে পি-কাবু/টুকি খেলাটি করেন তাহলে সে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত হয়। এছাড়াও সে এখন পুনরাবৃত্তির বিষয়টি বুঝতে শিখে। তাই সে একই ছড়া বা গানের ভিডিও বারবার দেখতে পছন্দ করে। বিশেষ করে তার উপযোগী রাইমস বা ছড়াগান তার খুব পছন্দ। এই সময়ে আপনি যদি তার পছন্দের কোন খেলনা তার থেকে নিয়ে নেন কিংবা সে যখন তার পছন্দের ছড়া গানগুলো শুনে তখন তা বন্ধ করে দেন তাহলে সে চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
-
আপনার বাবুকে যারা দেখাশোনা করে তাদের প্রতি সে যদি কোন রেসপন্স না করে।
-
আপনার বাবুর যদি আশেপাশের পরিবেশের প্রতি আগ্রহ না দেখায়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
৮ মাস বয়সের মধ্যে আপনার বাবুর স্বাভাবিক ঘুমের একটি রুটিন তৈরি হয়ে যায়। এখন সে রাতে একটানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমায়। যদি তা না হয় তাহলে তাকে রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের অভ্যাস করুন। এছাড়া সে সকালে ওঠার পরে আবার ১০টা কিংবা ১১ টার দিকে একবার ঘুম দেয়। আবার দুপুরে গোসল ও খাওয়ার পরে লম্বা সময়ের জন্য আবারও ঘুম দেয়। এভাবে তার ঘুমের একটি সাইকেল তৈরী হয়ে যায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
৮ মাস বয়সের মধ্যেও যদি শিশুর ঘুমের সাইকেল ঠিক না হয় অথবা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় তাহলে এটি আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার শিশু এখন বাহিরের খাবার অর্থাৎ শক্ত খাবারের সাথে মোটামুটি ভাবে পরিচিত হয়ে যায়। ৬ মাস বয়সে প্রথম যখন তার খাবার শুরু করা হয় তখন তার শারীরিক বিভিন্ন অসঙ্গতি যেমন বদহজম, পাতলা পায়খানা কিংবা কনস্টিপেশন ইত্যাদি হয়ে থাকলে এতদিনে সেগুলি আয়ত্তে চলে আসে এবং তার হজম ক্ষমতা বেড়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়।এই বয়সের মধ্যে শিশুর খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি হয়ে যায় এবং সেই খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও তার শরীরে প্রবেশ করে।সে নিয়ম করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পটি করে এবং স্বাভাবিক নিয়মে হিসু করে। তার শরীরের ওজন এবং তার অ্যাক্টিভিটি যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
আপনার শিশুকে এই সময় ভিন্ন ভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাকে নিজ হাতে খেতে অভ্যস্ত করুন। কোন খাবার যদি সে খেতে না চায় তাহলে জোর করে কখনোই খাওয়ানো ঠিক না।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৮ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৬৮৭.৪ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৮৭৫ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ (যদি খায়): ৮২৮ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩.৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ৪১ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ২৫ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ২৮ গ্রাম/দিন।
পানি: ৬০-১১০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ২ থেকে ৩ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ১২৫ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার বাসার ইলেকট্রিক সুইচ/প্লাগ, বাসার দরজা, জানলা,ড্রয়ার, কেবিনেট এর পাল্লা জাতীয় জিনিসের উপরে সেফটি ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।ধারালো বস্তু যেমন ছুরি-কাঁচি কিংবা ওষুধ বাবুর নাগালের বাইরে রাখুন। এই বয়সে কখনোই বাবুকে বিছানায় একা রাখা যাবেনা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিস তার মুখ এবং নাকের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে সেগুলি তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। তার কানে ময়লা জমলে তা পরিস্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সর্তকতা অবলম্বন করুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে আপনার শিশুর হাতে নতুন নতুন খেলনা তুলে দিন। বিশেষ করে ব্লক এবং বিভিন্ন সেইপ টাইপ খেলনা তার বুদ্ধি বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। বাবুর সাথে বেশি বেশি কথা বলুন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন। আপনি খেয়াল করবেন আপনার প্রশ্নে আপনার বাবু তার মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার সাথে বেশি বেশি কথা বলার ফলে তার ভাষাগত উন্নতিও হবে। আপনার বাবুর ডায়াপার এর খেয়াল রাখুন। কখনোই যেন ডায়পার অতিরিক্ত ভরে না যায় তার আগেই সেটি পরিবর্তন করে দিন।