ToguMogu
ToguMogu
article.title
 Jun 11, 2019
 3783

সর্দি-কাশি-জ্বরে শিশুকে কেন ওষুধ দেয়া উচিৎ নয়

আমাদের শিশুর সর্দি, কাশি বা জ্বর আসার সাথে সাথে আমরা যে কাজটা করি তা হল ওষুধ খাওয়ানো ।এই তিনটি অসুখই অত্যন্ত কমন যাতে এক-দু মাস পরপরই শিশুরা আক্রান্ত হয়। আপনি যদি আপনার শিশুকে এই তিনটি অসুখে আক্রান্ত হবার সাথে সাথে সিরাপ বা ওষুধ দিয়ে থাকেন তাহলে তা সময় এসেছে তা থামাবার! জ্বর, সর্দি, কাশিতে শিশুকে আর ওষুধ নয়। কেন নয় তা আসুন জেনে নেই।

কখনো কি ভেবে দেখেছি যে আমরা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছি নাকি কমন অসুখ- বিসুখেও ওষুধ খাইয়ে সেটাকে দূর্বল করে দিচ্ছি?

সব অসুখ যে ক্ষতিকর তা কিন্তু না, কিছু অসুখ থাকে যা আসলে উপকারী। অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে বলছিনা, পুরো লেখাটি পড়ুন তারপর বিশ্বাস করুন।

সর্দি, জ্বর, কাশি এই কমন অসুখগুলি সাধারণত একটি কারণে হয়ে থাকে, মূলত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে।

আসুন জ্বর, সর্দি, কাশি সম্পর্কে বেসিক তথ্যগুলি জেনে নেই।

সর্দি কি?

সর্দি হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন নাক দিকে শ্লেষ্মা অর্থাৎ মিউকাস বের হয় এবং হাঁচি হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তন, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাল ইনফেকশন অথবা অন্য কোন অসুখের সাইড ইফেক্টের কারণে সর্দি হয়ে থাকে। ৩০ এরও বেশি ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে যা শিশুদের সর্দির কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন ঘটায় তার বিরুদ্ধে শিশুর শরীর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরপর থেকে সেই ব্যাকটেরিয়াটি আর কখনই আপনার শিশুকে আক্রমন করতে পারবেনা।

আমেরিকার Food and Drug Administration এর একজন মেডিকেল অফিসার বলেন ‘সর্দিতে আক্রান্ত রোগীরা এক থেকে দু সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে কোন ওষুধ ছাড়াই। একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধ কিছুটা কষ্ট কমাতে পারে কিন্তু তা সর্দিকে তাড়াতড়ি যেতে সাহায্য করবেনা।’

 

এখন আসি কাশিতে!

সাধারণত সর্দি থেকে কাশি হয়। অন্যান্য কারণও থাকতে পারে যেমন এ্যালার্জি, গলায় ইনফেকশন বা গলা এবং ফুসফুস সম্পর্কিত অন্যান্য রোগের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। প্রায় সব ক্ষেত্রে কাশি একটি মূল্যবান কাজ করে থাকে তা হল – ফুসফুসের মিউকাসকে বের করা।

আপনি যদি কাশির চিকিৎসা করতে চান তাহলে আগে যে কারণে কাশি হচ্ছে তার চিকিৎসা করুন। আর শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি নিজেই চলে যাবে যখন ফুসফুস অনাকাঙ্ক্ষিত শ্লেষ্মা এবং ধূলিকণা থেকে পরিষ্কার হয়।

কখনও কখনও আপনার শিশুর এক ধরণের শুকনো কাশি হতে পারে। এই কাশিতে কোন মিউকাস বের হয়না। এই শুকনো কাশি হয়ে থাকে গলায় কোন ইনফেকশন হলে।

সর্দি এবং কাশি একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সর্দিরই একটি স্বাভাবিক লক্ষণ হচ্ছে কাশি।

জ্বর কি?

কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে কোন রোগের সময় কেন জ্বর হয়? কেন শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে আর এই বাড়তি তাপমাত্রার কি কোন ভাল উদ্দেশ্য হতে পারে? হ্যা পারে। শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা দ্বারা নিহত হয় কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। উচ্চ তাপমাত্রা অর্থাৎ জ্বর শরীরের জন্য একটি প্রাকৃতিক অস্ত্র যা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পিটার নালিন বলেন, ‘ইমিউন সিস্টেমের যে লড়াই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে তাতে জ্বর সহায়ক হিসেবে কাজ করে। জ্বর শরীরকে সহায়তা করে যাতে এই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো আর ফিরে না আসে।’

আরেকটি বিষয়, জ্বরের তাপমাত্রা আপনাকে অসুস্থতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে পারবে না। আপনার শিশুর গায়ে অনেক জ্বর অর্থাৎ উচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে সর্দির মত কমন অসুখের কারণেও। এর উল্টোটাও হতে পারে যেমন, গায়ে হয়তো জ্বর একদম কম কিন্ত আপনার শিশু গুরুতর অসুস্থ।

ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা কি?

যখন কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশ করে তখন শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে। শ্বাস নেবার সময় বাতাসের অনেক জীবাণু আমাদের ভেতরে চলে আসে। নিশ্বাসের সাথে যে জীবাণুরা শরীরে ঢুকে যায় তাদের থেকে আমাদের রক্ষা করে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম। আমাদের ইমিউন সিস্টেম জানে যে কোন জীবাণুটি শরীরের জন্যে ভাল এবং কোনটি ক্ষতিকর।

ইমিউন সিস্টেম সব ক্ষতিকারক জীবাণুকে ধ্বংস করে কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টিকারী রোগ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় তখনই আমরা ঠান্ডা কাশির মত কমন অসুখে অথবা চিকেনপক্স, নিউমোনিয়া এবং এমএমআর এর মত গুরুতর অসুখে পড়ি।

যখনই নতুন কোন জীবাণু আমাদের আক্রমন করে তখনই আমাদের ইমিউন সিস্টেম একটি সতর্কতা পায় এবং সাথেসাথেই এটি জীবাণু সৃষ্টিকারী রোগ নিরাময়ের কাজে পড়ে।

যেভাবে ওষুধ কাজ করেঃ

ওষুধ হচ্ছে একটি কেমিক্যাল যা আমাদের শরীরের মধ্যে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্রে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওষুধ খাবার পর তা পেটে দিয়ে গলে। তারপর বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা রক্তে প্রবাহিত হয়। ওষুধের অণুগুলি আমাদের শরীরের সব অঙ্গে যায় ব্লাড সার্কুলেশনের মাধ্যমে।

যেমন আমরা যখন মাথাব্যথার ওষুধ খাই তখন তা শুধুমাত্র মাথায় না বরং পুরো শরীরেই ছড়িয়ে যায়। শরীরের কোষ রক্ত ​​থেকে ওষুধের অণুগুলি শোষণ করে। এরপর ওষুধের কেমিক্যালগুলি বায়োকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়া শুরু করে এবং ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুগুলি সনাক্ত করে তা ঠিক করা শুরু করে।

অর্থাৎ যেখানে আমরা শুধুমাত্র মাথাব্যথাতে ওষুধের প্রভাব দেখতে পাচ্ছি সেখানে আসলে এটি পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। মাথাব্যাথা সেরে যাওয়াতে আমরা ভাবচি ওষুধ শুধু মাথা নিয়েই কাজ করেছে। ওষুধ একইভাবে অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও কাজ করে।

অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা কী?

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশনের সাথে লড়াই করে কিন্তু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলি অকেজো।

মেডিকেল নিউজ টুডের মতে ‘যদি অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খাওয়া হয় তাহলে সম্ভাবনা থাকে সে ব্যাকটেরিয়াটির অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যায়।’

ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট ইনফেকশনের ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিৎ। একবার অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে তার কোর্স শেষ করতে হবে। কোর্স শুরু করার দিনই যদি আপনার শিশু সুস্থ হয়ে যায় তারপরও আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাইয়ে যেতে হবে কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত। কারণ সব ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস না করলে তারা নিজেদের মধ্যে সংখ্যায় বেড়ে দুইগুণ তিনগুণ হবে এবং এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ আরো শক্তিশালী হবে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাব?

আপনার শিশুকে ফল এবং সবজি দিতে চেষ্টা করুন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি ঘটতে পারে যখন ইমিউন সিস্টেম নিজে নিজে শরীরকে সুস্থ করতে পারেনা। প্রয়োজন হতে পারে বাহ্যিক সাহায্যের অর্থাৎ ডাক্তার এবং ওষুধের।Food and Drug Administration এর মতে যদি আপনার সন্তানের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কোনটি দেখতে পান তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন

১। নবজাতকের (প্রথম ২মাস পর্যন্ত) যেকোন রকম জ্বর

২। ২ মাসের বেশি বয়সী শিশুর ১০২ এর উপর জ্বর

৩। যদি শিশুর ঠোঁট নীল হয়ে যায়

৪। শিশু যদি একেবারে খাওয়া বন্ধ করে দেয়

৫। শিশুর যদি কানে ব্যথা হওয়া শুরু হয়

৬। কাশ যদি ৩ সপ্তাহের বেশি থাকে এবং

৭। শিশু যদি ঘর্ঘর শব্দের সাথে দ্রুত নিশ্বাস নেয় এবং প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে পাজর দেখা যায়

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার শিশুকে কোনও ওষুধ দেবার সময় সঠিক পরিমাণে দিতে ভুলবেন না। সঠিক মাপের জন্যে ওষুধের সাথে দেয়া চামচ ব্যবহার করুন।

 

 

 

 

Related Articles
Please Come Back Again for Amazing Articles
Related Products
Please Come Back Again for Amazing Products
Tags
ToguMogu App