গর্ভবতী নারীর সুস্থতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারি পরামর্শ

গর্ভধারণ যে কোন নারীর জীবনে পরম আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। এই সময়ে গর্ভবতী নারীর সুস্থতায় তার গুরুজন নানা উপদেশ দেয় যা মানতে গিয়ে অনেক সময় তা ভুল উপদেশ হওয়াতে ক্ষতির কারণ হয়। অনেক উপদেশ ক্ষেত্র বিশেষে মা ও বাচ্চার জীবনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য কনসিভের পর পর-ই একজন গাইনী বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধায়নে থেকে প্রেগনেন্সি নিশ্চিত করার পাশাপাশি কোন রিস্ক ফ্যাক্টর (যা মা অথবা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ) আছে কিনা দেখে নিতে হবে। আসুন তবে জেনে নিই গর্ভবতী নারীর কী করা উচিৎ আর কী না করা উচিৎ…

গর্ভবতী নারীর সুস্থতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারি পরামর্শ-

(১) গর্ভপাত নিয়ে কুসংস্কার দূর করুন

গর্ভধারণের পর প্রথম যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে তা হচ্ছে  গর্ভপাত।এজন্যে পরিবারের সদস্যরা অনেক সময় বিভিন্ন কুসংস্কারকে দায়ী করেন, যেমন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর সহবাস, সামান্য আঘাত পাওয়া, গায়ে খারাপ বাতাস লাগা ইত্যাদি। এগুলো গর্ভপাতের জন্য দায়ী না।প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে প্রথমবার গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ নির্ণয় করা যেতে পারে। ভালো হয় গর্ভধারণের পূর্বে ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা এবং এর কারণসমূহ নিয়ে সচেতন হওয়াণ

(২) ভিটামিন ঔষধ নিয়ে ভুল ধারণা দূর করুন

অনেক মায়েরা মনে করেন ভিটামিন ঔষধ খেলে বাচ্চা বড় হয়ে যায় এবং সিজারের সম্ভাবনা বাড়ে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারনা। ভিটামিন মায়ের শরীরের রক্ত শূন্যতা দূর করে এবং হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তাই ভিটামিন ঔষধ নিয়ে ভুল ধারনাটি মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন এখুনি।

(৩) গর্ভবতী অবস্থায় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস নিয়ে ভুল ধরণা দূর করুন

অনেক মায়েরা এ সময় শারীরিক পরিশ্রম ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকেন।প্রকৃতপক্ষে কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা (যেমন,প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, রিপিটেড অ্যাবরশন , IUGR) ছাড়া গর্ভবতী মায়েরা স্বাভাবিক সব কাজই চালিয়ে যেতে পারেন।

তবে প্রথম ও শেষ তিন মাস কিছুটা সাবধানে থাকতে বলা হয়।গর্ভবতী অবস্থায় একজন মা প্রতিদিন ৩০ মিনিট যেকোন মধ্যম মানের ব্যায়া  (যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা) করতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৭ দিন।  এতে করে অতিরিক্ত ওজন হওয়া , ডায়াবেটিস এবং প্রেসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। আবার অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের জন্য কম ওজনের শিশু জন্ম নিতে পারে।

(৪) ঢিলা-ঢালা পোশাক পরুন

অনেক মায়েরা তাদের পেটিকোট বা সালোয়ারের বাঁধন পেটের উপর শক্ত করে বেঁধে রাখেন যাতে বাচ্চা উপর দিকে উঠে না যায়।প্রকৃতপক্ষে গর্ভের বাচ্চাকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য এর চারপাশে এমনিওটিক ফ্লুইড বা পানির আবরন থাকে এবং এই সময়ে মায়েদেরকে ঢিলা-ঢালা পোশাক পরার উপদেশ দেয়া হয়।

(৫) গর্ভপাতের হিস্ট্রি থাকলে পেঁপে ও আনারস খাওয়া নিয়ে সাবধান হন

পেঁপে ও আনারস পেটের জন্য উপকারী ফল এবং পরিমিত পরিমানে খাওয়া যায়।তবে যাদের গর্ভপাতের হিস্ট্রি আছে তাদের প্রথম তিন মাস অতিরিক্ত কাচা পেঁপে ও আনারস না খাওয়াই ভাল।

কারণ কিছু ক্ষেত্রে পেঁপে ও আনারস জরায়ু সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাত করতে পারে।এই সময়ে আধা সিদ্ধ মাংস, আনপাস্তুরাইজড মিল্ক, হট ডগ খেলেওলিস্টেরিয়া নামক জীবাণুর সঙ্ক্রমণ থেকে গর্ভপাত হতে পারে।বড়ির পোষা বিড়াল থেকেও অনেক সময় এই জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। 

(৬) শরীরের অবস্থা বুঝে চা-কফি পান করুন

যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত চা, কফি বাদ দিতে হবে এবং প্রি এক্লাপ্সিয়া বা প্রেসারের সমস্যা থাকলে খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া উচিত হবে না।

(৭) আলট্রাসাউন্ড রেডিয়েশন নিয়ে পরিস্কার ধারণা নিন

অনেক মায়ের সংশয় থাকে অতিরিক্ত আলট্রাসাউন্ড বাচ্চার কোন ক্ষতি করে কিনা। আলট্রাসাউন্ড এ যে পরিমান রেডিয়েশন থাকে তা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর নয়।

সাধারণত প্রেগনেন্সিতে ২-৪ বার আলট্রাসাউন্ড করা লাগতে পারে। তবে মা বা বাচ্চার কোন কোন জটিলতার ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি এই পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় x-ray এবং CT scan কি ক্ষতিকর?

গর্ভাবস্থায় x-ray এবং CT scan গর্ভস্ত বাচ্চার রেডিয়েশন জনিত ক্ষতি করে। তাই গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষাগুলো করা থেকে বিরত থাকা-ই শ্রেয় ।

এই তো জেনে গেলেন গর্ভবতী নারীর সুস্থতায় করণীয়। গর্ভবতী নারীর সুস্থতায় সব সময় তাকে হাসিখুশি ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে, কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা পরবর্তী কালে শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা গবেষণায় প্রমাণিত।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.