নবজাতকের বাবা-মাকে সবসময়ই তটস্থ থাকতে হয়। নবজাতক নিশ্ছিন্তে ঘুমালেও, বাবা-মার নির্ঘুম রাত কাটে। শিশুর কখন কি প্রয়োজন সারাক্ষণ এটা নিয়ে চিন্তা। আপনার নবজাতক শিশু কি একটু ঘুমিয়েই আবার জেগে উঠে? যার কারণে আপনাদের ২জনের ঘুম হয় না? জম্বির মতো রাত কাটে?
জেনে নিন নবজাতক শিশুর ঘুমের ৫টি অজানা দিক আর কিছু টিপস-
১। কিছু কিছু শিশুর জন্য রাত এবং দিনের ঘুমের ব্যাপারটা অন্যরকম হয়। তাদের ঘুমের রুটিন আমাদের সাথে মেলে না। অনেক নবজাতক শিশুই রাতে জেগে থাকে, দিনে ঘুমায়। প্যাঁচার মতো সারারাত জেগে থাকে, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে। দিনে টানা ঘুম। বাবা-মায়ের জন্য এটা তখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ শিশুর সাথে বাবা-মারও জেগে থাকতে হয়। আপনার শিশু যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। পরিস্থিতি আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বিশেষ করে মায়েদের জন্য। ৯মাস প্রেগন্যান্সি, ডেলিভারি আবার নবজাতক শিশুকে রাত জেগে দেখাশোনার কষ্ট। শিশুকে দেখাশোনা করে বাবাও হয়তো নির্ঘুম রাত পার করতে পারেন। কারণ, শিশুর মতো বাবা-মা সারারাত জেগে থাকতে অভ্যস্ত না।
টিপসঃ
আপনার শিশুর দিনে ঘুমানোর প্রবণতা থাকলে, আপনিও আপনার ঘুমের রুটিন একটু এপাশ-ওপাশ করে নিন। রাতে যখন ঘুমাবেন, তখন রুম নিঃশব্দ, শান্ত আর অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন। দিনের বেলায় রুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে দিন। এতে করে শিশু আস্তে আস্তে দিন-রাতের মেকানিজমের সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করবে।
২। প্রথম কয়েকদিন আপনার নবজাতক ঘুমের জগতেই বেশি বিচরণ করবে। নবজাতকরা সাধারণত ১৪-১৮ঘণ্টা কেবল ঘুমিয়েই কাটায়। তার প্রথম ১মাস বয়স পর্যন্ত সে এভাবেই ঘুমিয়ে কাটাবে। তার ঘুমের প্যাটার্নটা অনেক ক্ষেত্রেই হবে- ২-৪ঘণ্টা ঘুমিয়ে জেগে উঠে, খেয়ে আবার ২-৪ঘণ্টা ঘুমানো। আপনার শিশু ঘুমিয়ে কাটালেও আপনার ঘুমে ব্যঘাত ঘটতে পারে। কারণ, আমরা বড়রা টানা ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। একটা সার্ভেতে দেখা গেছে, ৭১% নবজাতকের মাই ঘুমের ঘাটতিতে ভোগেন।
টিপসঃ
আপনার শরীর ছাড়াছাড়া ঘুমে অভ্যস্ত না হলেও বিরতি দিয়ে দিয়ে আপনি রেস্ট নিতে চেষ্টা করুন। শিশু যদি ২-৪ঘণ্টা ঘুমিয়ে জেগে উঠে, আবার ২-৪ঘণ্টা ঘুমায়, আপনিও এই রুটিনে রেস্ট নিয়ে নিন। স্বামী-স্ত্রী পালা করে দায়িত্ব পালন করুন।
৩। কিছু কিছু নবজাতকের ঘুমের অদ্ভুত দিক হচ্ছে তারা হইচই এর মধ্যেও দিব্যি ঘুমুতে পারে। আওয়াজে তাদের ঘুমে খুব একটা ব্যঘাত ঘটে না। অনেক বাবা-মাই বলেন, রুমে ফ্যান চলা বা অন্য কোন আওয়াজ যা সবসময় হতে থাকে, তা বন্ধ হয়ে গেলে শিশু জেগে উঠে।
টিপসঃ
এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। ঘরে পা টিপেটিপে হাঁটা বা ফিসফিস করে কথা বলারও প্রয়োজন নেই। এটা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি চিন্তা করে দেখুন, আপনার শিশু যখন পেটের ভিতর ছিল, তখনও সে অনেক শব্দের সাথে মানিয়ে নিয়ে বড় হয়েছে। কারণ, পেটের ভেতরের পরিবেশটাও খুব বেশি শান্ত না। মায়ের হার্টবিটের শব্দ, ডাইজেশনের শব্দ, হাঁটা-চলার শব্দ -সবই সে শুনতে পেত।
৪। প্রতিটি শিশুর ঘুমের অভ্যাসই আলাদা। অনেক ক্ষেত্রেই আপনার মনে হতে পারে, আপনার শিশু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম ঘুমাচ্ছে। আমরা অনেকেই দিনে ২৪ঘণ্টাই ঘুমানোর ক্ষমতা রাখি। আবার কেউ কেউ একেবারেই কম ঘুমাই। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। কারণ প্রতিটি শিশুই আলাদা, তাদের ঘুমের অভ্যাস তাই স্বতন্ত্র।
টিপসঃ
শিশুর এই অভ্যাসও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে। ধীরে ধীরে নবজাতকের ঘুমকে রুটিনের মধ্যে আনার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন রাতে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম পাড়াতে। একটা বেডটাইম মেইনটেইন করুন।
৫। শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে অস্বস্তি থেকেও বার বার জেগে উঠতে পারে। হয়তো সে যেভাবে ঘুমাচ্ছে, সেভাবে সে আরাম পাচ্ছে না।
টিপসঃ
শিশুর উপর কয়েক স্তরবিশিষ্ট অতিরিক্ত কাঁথা-বালিশ চাপাবেন না। এতে অনেক সময় সে বেশি ভার অনুভব করতে পারে। দম বন্ধ বন্ধ লাগতে পারে। শিশুকে তার উপযোগী বিছানায় শুতে দিন। মাথার নিছে নরম বালিশ, ২পাশে ২টো কোলবালিশ আর গায়ের উপর নরম কাঁথা। মোটামুটি উষ্ণ পরিবেশ হলেই সে ঘুমিয়ে আরাম পাবে। আশেপাশে অপ্রয়োজনীয় খেলনা যা থেকে খুব বেশি আওয়াজ হয়, তা সরিয়ে ফেলুন।