সাধারন বিষয় গুলোঃ
- নতুন নতুন কথা বলতে শিখে। দিনে নতুন দশটি কিংবা তার বেশি শব্দ শিখতে পারে।
- নিজের কাপড় নিজেই খুলতে পারে।
- আসবাবপত্র বেয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা যায়।
উচ্চতাঃ ৮১.৭-৮৩.৩ সে.মি
ওজনঃ ১০.৮-১১.২ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৬.৪-৪৭.৫ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু এখন অস্পষ্ট বুলি আওড়ানোর পরিবর্তে স্পষ্টভাবে কথা বলা শুরু করবে। তার এই পরিবর্তনটি হঠাৎ করেই তার মধ্যে দেখা দিবে। সে আপনাকে অনুকরণে পারদর্শী হয়ে ওঠে। আপনার কথা ও কাজ সবকিছু নকল করে নিজের মতো করা শুরু করে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন ঘরের আদুরে টোডলার। সে সারা ঘর দৌড়ে বেড়াবে এবং আপনাকে কাজে সহযোগিতা করার নামে আপনার কাজ আরও বাড়িয়ে দিবে। এই বয়সের মধ্যে তার হাত ও চোখের সমন্বয় পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত হয়ে যায়। সে এখন তার খেলনা গুলো একসাথে জড়ো করতে পারে আবার সেগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়েও দিতে পারে। নিজ হাতে খাবার খেতে পারে। এছাড়াও কলম বা পেন্সিল ধরে কাগজে দাগ টানতে এবং আঁকি-বুকি করতে পারে। আপনার ছোট্টটি এখন আপনার হাত ধরে সিঁড়ি্র ধাপগুলো উঠতে এবং নামতে পারে। সেক্ষেত্রে সে সিঁড়ির প্রতি স্টেপে তার দুই পা একসাথে দিয়ে উঠতে থাকে। ঘরের ফার্নিচার বেয়ে বেয়ে উঠা তার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে সে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং ব্যথা পায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার ছোট্ট সোনাটি যদি সারা দিন একটানা কাঁদতে থাকে কিংবা তার শরীরের কোন স্থান ফোলা দেখা যায় তাহলে কিন্তু চিন্তার বিষয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
যেহেতু তার বুদ্ধি বিকাশ এখন অনেক দ্রুততার সাথে হতে থাকে এজন্য তার মধ্যে ভয়ের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। সে ঘরের ছোটখাটো পোকামাকড় কিংবা অন্ধকার দেখে ভয় পায়। আবার আপনার দূরে সরে যাওয়াও তার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পানির প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ দেখা যায়। হতে পারে সে ঘরের একটি টুল বা চেয়ার নিয়ে সারাক্ষণ বেসিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা সুযোগ খুঁজতে থাকে কখন কোন ফাঁকে সে একটু পানি ধরতে পারবে। এরকম দুষ্টুমিতে সে সবসময়ই আপনাকে দৌড়ের ওপর রাখবে। এছাড়াও সে এখন মাটি, বালি, গাছের পাতা, পোষা বিড়াল, বাসার নিচের কুকুর এই সকল প্রাকৃতিক জিনিসের প্রতি প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার বাবু যদি তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা একটি চিন্তার বিষয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে বাবু তার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর সাথে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি তার দূরে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সাথেও সে অনেক মিশুক এবং প্রাণবন্ত আচরণ করে। সে নিয়মিত যাদের সাথে ফোনে কথা বলে অথবা যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় তাদেরকে সে ভালোভাবেই চেনে তবে অনেকদিন পরে দেখা হলে প্রথমে হয়ত তাদের থেকে দূরে সরে যায় কিংবা তাদের কাছে যেতে চায়না।কিন্তু কিছুক্ষন সময় যাওয়ার পর সে ঠিকই আস্তে আস্তে তাদের সাথে মিশে যায়। তার সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করতে শিখে তবে তার জিনিসপাতি শেয়ার করতে চায়না। অনেক সময় তার মন মত কিছু না হলে সে চিল্লাচিল্লি করে, মেঝেতে গড়াগড়ি করে কান্নাকাটি করে কিংবা রাগে কামড় বসিয়ে দিতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
শিশুসন্তানের অতিরিক্ত জেদ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে সেটি একটি চিন্তার বিষয়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
২০ মাস বয়সের শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের একটি রুটিন তৈরি হয়ে যায়। তবে এখনো ঘুমানোর সময় তার কিছু অভ্যাস থেকে থাকতে পারে যেমন মায়ের বুকের দুধ খেয়ে ঘুমানো, বাবার পায়ের উপরে উঠে দোল খেয়ে ঘুমানো কিংবা দোলনায় চড়ে দোল খেতে খেতে ঘুমানো। আপনার বাবুর যদি এসব অভ্যাস থাকে তাহলে তা আস্তে আস্তে পরিবর্তন করুন। তাকে প্রতিদিন একই বিছানায় একই সময়ে ঘুমাতে নিয়ে যান, ঘুমপাড়ানি গান কিংবা কবিতা পড়ে তাকে ঘুম পাড়াতে পারেন। ঘুমের আগে টিভি দেখার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। এই অভ্যাসটি শিশুর মস্তিষ্ককে অস্থির করে তোলে যার ফলে সে ঘুমাতে যেতে চায়না কিংবা ঘুমের সময় হাইপার হয়ে থাকে।
চিন্তার বিষয়ঃ
এই বয়সে এসেও যদি আপনার শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের রুটিন তৈরি না হয় তাহলে তা একটি চিন্তার বিষয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তান এখন সারাদিন চঞ্চল্ভাবে খেলাধুলা করে। তাই তার প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয় এবং শক্তির প্রয়োজন হয়। এখন সারাদিনই তাকে কিছু না কিছু খেতে দেয়া উচিত। তবে দুপুরে ও রাতে তার প্রধান খাবারের আগে হাবিজাবি কিছু খাওয়ানো ঠিক হবেনা। এতে করে তার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায় আর সে পেট ভরে খেতে চায়না।তাকে প্রতিদিন একই খাবার কখনই দেওয়া ঠিক না। মাছ-মাংশের পাশাপাশি তাকে সবজি ও শাক খেতে দিন। এগুলো খেতে না চাইলে সবজি নিয়ে বিভিন্ন গল্প শোনাতে পারেন যা থেকে তার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। এছাড়া তাকে দিনের বেলা একটু পর পর পানি পান করান। পানি তার শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
এই বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৯২৫.৭কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
এতদিনে আপনি ঘরের জিনিসপত্রে যে সকল সেইফটি মেজারমেন্ট নিয়েছেন তা হয়তো এখন আপনার বাবুর কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। সে হয়তো সেগুলো নিজের আয়ত্বে নিয়ে এসেছে। তাই এখন সময় এসেছে পুরনো প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে নতুনভাবে ঘরের জিনিসপত্রের উপর সেফটি মেজারমেন্ট নেওয়া নেয়া। এছাড়াও যেহেতু সে আপনার সব কথাবার্তা বুঝতে পারে এবং আপনাকে অনুকরণ করে তাই সবসময় তার সামনে কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের প্রতি সতর্ক হওয়া উচিত। কারন সে এখন আপনার বলা কথাই আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। রান্না ঘরের জিনিসপত্র, চুলা এবং ইলেকট্রিক সুইচ ব্যবহারের ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন। সম্ভব হলে সেগুলো তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। ঘরের মধ্যে এমন সব জিনিস থাকে যা আপনার শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর যেমন বড়দের ওষুধ। সেগুলো অবশ্যই তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে আপনার সোনামণি ক্লে ডো নিয়ে খেলা করতে খুব পছন্দ করে। এখন এই জাতীয় খেলার জিনিস তার হাতে তুলে দিন। এগুলোতে যদি আপনার ঘর নষ্ট হয় তাহলে ভয় পেয়ে তার খেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না। তাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে মেঝেতে পেপার কিংবা কাপড় বিছিয়ে দিয়ে সেখানে খেলতে উৎসাহিত করুন। এই ধরনের খেলাগুলো মানসিক বিকাশের জন্য খুবই সহায়ক। তাকে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিন। সে যদি একা ব্রাশ করতে চায় তাহলে তাকে সেটা করতে দিন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনি পুনরায় ভালোভাবে তার দাঁতগুলো ব্রাশ করে দিন। তাকে বিভিন্ন ধরনের রঙিন খেলনা দিয়ে খেলতে দিন এবং খেলার ছলে তাকে আপনি রং এর নামও শেখাতে পারেন। আপনার বাবুকে বেশি বেশি কথা বলার সুযোগ দিন। সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা না বলে তাহলে ধৈর্য ধরে তাকে কথা বলানো শেখান। সে যদি একটি বা দুটি শব্দ উচ্চারণ করে তাহলে তার পরবর্তী শব্দগুলো জোড়া লাগিয়ে তাকে পূর্ণ বাক্য বলা শিখিয়ে দিন। এতে করে সে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বাক্য বলতে পারবে। এই বয়স থেকে আপনার শিশুকে পটি ট্রেনিং দেওয়া শুরু করুন। কেননা এখন সে আপনার কথা বুঝতে পারে এবং নিজেও তার ভাব প্রকাশ করতে পারে।