সাধারন বিষয় গুলোঃ
- খোলা জায়গায় স্বাধীনভাবে দৌড়াতে পারে।
- কাটা চামচের ব্যবহার শিখে।
- দুইটি শব্দের বাক্য বলতে পারে।
উচ্চতাঃ ৮০.৭-৮২.২ সে.মি
ওজনঃ ১০.৬-১০.৯ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৬.২-৪৭.৪সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়স থেকে মূলত শিশুরা কথা বলা আরম্ভ করে। সে প্রায় ১৫ টি শব্দ বলতে পারে এবং ২ টি করে শব্দ দিয়ে একটি বাক্য উচ্চারণ করতে পারে। সে এখন ২০০টিরও বেশি শব্দের অর্থ বুঝতে পারে। তার সামনে কোন বস্তুর নাম ভুল বললে সে সেটি প্রতিবাদ করে। যেমন-বলকে যদি ব্যাট বলা হয় তাহলে সে সেটি মানা করে এবং ব্যাট এনে দেখিয়ে দেয়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন কনফিডেন্টলি হাঁটতে এবং দৌড়াতে পারে। সে তার উচ্ছলতা দিয়ে সারা ঘর ভরিয়ে রাখে। আপনার চোখের নিমেষেই হয়তো সে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যায়। সে তার হাত দিয়ে বল ছুড়ে মেরে খেলা করে। তার খেলনা গুলো দিয়ে ছুড়ে মারা, নিচের থেকে উঠানো, নিচে ফেলা, বলের পিছনে দৌড়ানো এসব কাজগুলো ভালভাবেই রপ্ত করে ফেলে। এতে করে তার জিনিসের আকার ও ওজন সম্বন্ধে ধারণা বাড়তে শুরু করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- সে যদি ঠিকমতো হাঁটতে কিংবা দৌড়াতে না পারে।
- জিনিসপত্র ঠিকমতো ধরতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু এখন নিজে নিজেই তার সব কাজগুলি করতে চাইবে। এমনকি সে আপনার কাজগুলোও করে দিতে চাইবে। যদিও সে এখন কোন কিছুই ঠিকমতো করতে পারে না এবং তার প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন হয় তারপরেও আপনার উচিত তাকে নিজে নিজে কাজ করতে উৎসাহিত করা। এর ফলে আপনার কিছুটা কষ্ট হলেও আপনার শিশুটি স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেড়ে উঠবে। সে তার ড্রেসআপ এর ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকে। আয়নায় গিয়ে সে নিজেকে সুন্দর কাপড়ে দেখে খুব আনন্দ পায়। বিশেষ করে সে বাসার বড়দের জুতা কিংবা সেন্ডেল পায়ে দিয়ে হাঁটতে খুব পছন্দ করে। এই বয়সে এই কাজটি তার জন্য খুব আনন্দদায়ক। সে ঘরের জিনিসপাতি তার খেলনায় পরিণত করতে ভালোবাসে, যেমন টিভির রিমোট সে তার ফোন হিসাবে ব্যবহার করে। আবার রান্নাঘরের হাঁড়িপাতিল নিয়ে সে নিজেই রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনি যখন তাকে কোনো কথা বলেন তখন সে যদি আপনার দিকে না তাকায় কিংবা এমন ভাব করে যেন কথাটি সে শুনলোই না তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন আপনাকে অনুকরণ করতে খুব পছন্দ করে। বাসার বড়রা কে কি করল সে সবকিছু পর্যবেক্ষন করে। আপনি তার সাথে যে আচরণগুলো করেন সেগুলি সে তার পুতুলের সাথে করতে থাকে। যেমন সে তার পুতুলের চুল আঁচড়ে দেয়, খাইয়ে দেয় কিংবা জামা পরিয়ে দেয়। সে সবার কাছ থেকে খুব আদর পেতে চায়। তাকে জড়িয়ে ধরলে এবং চুমু দিলে সে খুশীতে আপ্লুত হয়ে ওঠে।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনি বাবুর সাথে যখন খেলা করেন তখন যদি সে একদমই প্রতিক্রিয়া না দেখায়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
আপনার বাবুর ঘুমের পরিমাণ এ সময়ে এসে অনেকটাই কমে যায়। কারণ সে সবসময় খেলাধুলার মধ্যে থাকতে চায়। তবে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার উপরই বর্তায়। কেননা তার শারীরিক বিকাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমের খুবই প্রয়োজন। সে যদি রাত জাগে তাহলে চেষ্টা করুন তাকে প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় শুয়ে দেওয়া। এতে আস্তে আস্তে তার ঘুমের অভ্যাস তৈরী হয়ে যাবে। সে হয়তো দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম ত্যাগ করতে পারে। তবে আপনার উচিত হবে তাকে নিয়ম করে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়া। সে সারাদিন খেলাধুলা এবং দৌড়াদৌড়ির মাধ্যমে যে পরিমান শক্তি ব্যয় করে ঘুমের মধ্য দিয়ে তা পুনরায় ফিরে পায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
বাবু একেবারেই ঘুমাতে না চাওয়া একটি চিন্তার বিষয়। অনেক বাচ্চা আছে যারা সারাদিন সবমিলিয়ে ৬-৭ ঘন্টা ঘুমায়। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের শরীর এবং মনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং খাওয়ায় অরুচি তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে বাচ্চাকে কিভাবে ঠিকমতো ঘুম পাড়ানোর যায় সে ব্যবস্থা করা উচিত।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
এখন থেকে শিশুদের মধ্যে ভাষাগত পরিবর্তন বেশ ভালভাবেই বোঝা যায়। সে এলোমেলো বুলি আওড়ানোর পরিবর্তে নির্দিষ্ট শব্দ চয়নে বেশি পারদর্শী হতে থাকে। নিজে সব শব্দ উচ্চারণ করতে না পারলেও আপনার বলা অধিকাংশ কথাই সে বোঝে। সে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে আর ২০০ টিরও অধিক শব্দের অর্থ বুঝতে পারে। এছাড়া সে দুইটি শব্দ দিয়ে একটি বাক্যও বলতে পারে। যেমন- আমি যাই, আমি খাই এরকম সহজ কিছু বাক্য সে ব্যাবহার করে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের ক্ষেত্রে সে এখন তার মতামত দিতে শুরু করে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি খাবার তার পছন্দ হয়না। এজন্য তাকে ভিন্ন ভিন্ন খাবার দিয়ে দেখতে হবে যেন তার খাবারের রুচি বজায় থাকে। সেই সাথে খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিনও আপনাকে তৈরি করতে হবে। তার সকালের নাস্তায় একটু ভারী খাবার যেমন রুটি-ডিম, ওটস কলা, পাতলা খিচুড়ি, পাউরুটি অমলেট ইত্যাদি দিতে পারেন। এরপর এগারোটার দিকে তাকে হালকা কিছু স্নাক্স বা ফল/ফলের রস দিতে হবে। দুপুরে ভারী খাবার, বিকালের নাস্তা এবং রাতে আটটার মধ্যে তার খাবার শেষ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। প্রতিবেলায় যদি তাকে ঠিকমতো না খাওয়ানো যায় তাহলে সেটি কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে অল্প অল্প করে হলেও সারাদিনে খাইয়ে দিতে হবে। তার বাড়তি শরীরের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে তার জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের যোগান দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৯ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৯১৬.৮ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । এছাড়া সে আগের মতই ব্রেস্ট ফিডিং করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
এতদিনে আপনি ঘরের জিনিসপত্রে যে সকল সেইফটি মেজারমেন্ট নিয়েছেন তা হয়তো এখন আপনার বাবুর কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। সে হয়তো সেগুলো নিজের আয়ত্বে নিয়ে এসেছে। তাই এখন সময় এসেছে পুরনো প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে নতুনভাবে ঘরের জিনিসপত্রের উপর সেফটি মেজারমেন্ট নেওয়ার। এছাড়াও যেহেতু সে আপনার সব কথাবার্তা বুঝতে পারে এবং আপনাকে অনুকরণ করে তাই সবসময় তার সামনে কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের প্রতি সতর্ক হওয়া উচিত। কারন সে এখন আপনার বলা কথাই আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। রান্না ঘরের জিনিসপত্র, চুলা এবং ইলেকট্রিক সুইচ ব্যবহারের ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন। সম্ভব হলে সেগুলো তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। ঘরের মধ্যে এমন সব জিনিস থাকে যা আপনার শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর যেমন বড়দের ওষুধ। সেগুলো অবশ্যই তার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে আপনার সোনামণি ক্লে ডো নিয়ে খেলা করতে খুব পছন্দ করে। এখন এই জাতীয় খেলার জিনিস তার হাতে তুলে দিন। এগুলোতে যদি আপনার ঘর নষ্ট হয় তাহলে ভয় পেয়ে তার খেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না। তাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে মেঝেতে পেপার কিংবা কাপড় বিছিয়ে দিয়ে সেখানে খেলতে উৎসাহিত করুন। এই ধরনের খেলাগুলো মানসিক বিকাশের জন্য খুবই সহায়ক। তাকে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিন। সে যদি একা ব্রাশ করতে চায় তাহলে তাকে সেটা করতে দিন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনি পুনরায় ভালোভাবে তার দাঁতগুলো ব্রাশ করে দিন। তাকে বিভিন্ন ধরনের রঙিন খেলনা দিয়ে খেলতে দিন এবং খেলার ছলে তাকে আপনি রং এর নামও শেখাতে পারেন। আপনার বাবুকে বেশি বেশি কথা বলার সুযোগ দিন। সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা না বলে তাহলে ধৈর্য ধরে তাকে কথা বলানো শেখান। সে যদি একটি বা দুটি শব্দ উচ্চারণ করে তাহলে তার পরবর্তী শব্দগুলো জোড়া লাগিয়ে তাকে পূর্ণ বাক্য বলা শিখিয়ে দিন। এতে করে সে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ বাক্য বলতে পারবে। এই বয়স থেকে আপনার শিশুকে পটি ট্রেনিং দেওয়া শুরু করুন। কেননা এখন সে আপনার কথা বুঝতে পারে এবং নিজেও তার ভাব প্রকাশ করতে পারে।