সাধারন বিষয় গুলোঃ
- অন্ততপক্ষে ১৫ টি শব্দ বলতে পারে।
- হাঁটা এবং দৌড়ানোর ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী থাকে।
- নিজে নিজে চামচ দিয়ে খাবার খেতে পারে।
উচ্চতাঃ ৭৮.৪-৮০.২ সে.মি
ওজনঃ ১০.২-১০.৫ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৫.৯-৪৭.০ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই সময়ে আপনার শিশুটি সারাদিন খেলাধুলা করবে এবং তার ঘুমের পরিমাণ কমে যাবে। আগে যদি সে দিনে তিনবার ঘুমাতো তাহলে সে এখন একবার কিংবা খুব বেশি হলে দুইবার ঘুমাবে। সে আনন্দে লাফ দিতে পারে। এছাড়া সে নিজেই তার কাপড় খুলে ফেলতে পারে। এখনো তার মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা অতোটা পরিপক্ক হয় না। খুব সহজেই তাকে একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট করা যায়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার বাবুর এখন বেশ কয়েকটা দাঁত বের হবে। সে নিজেই কিংবা আপনার সাহায্য নিয়ে তার দাঁত ব্রাশ করতে চাইবে। সে এখন তার হাঁটা এবং দৌড়ানোর ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। সে একা একা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে পারে এবং আপনার হাত ধরে নিচে নামতে পারে। তবে এখনো তাকে সিঁড়িতে একা হাঁটতে দেওয়া মোটেও উচিত হবে না। গানের তালে তালে কিংবা আনন্দে নাচে এবং লাফ দেয়। সে এখন নিজ হাতে খাওয়া, পানি ঢালা কিংবা ওপর থেকে কোন বস্তু পাড়াসহ নানা রকম কাজ করতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার বাবু যদি খুব কম খেলাধুলা করে কিংবা সব সময় মনমরা থাকে তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি গানের তালে তালে নাচ করতে খুব ভালোবাসে। যে আপনার কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে এবং নিজে নিজে কপি করা শুরু করে। যেমন সে তার খেলনা ফোনটি নিয়ে আপনি যেভাবে ফোনে কথা বলেন ঠিক একই ভাবে কথা বলতে খুব পছন্দ করে। আবার আপনি বাসার অন্যান্যদের সাথে যা যা বলেন আপনার ছোট্ট শিশুটি তার পুতুল গুলোর সাথে ঠিক একইভাবে অভিনয় করে কথা বলে। আপনার ছোট্ট শিশুটি এখন বিভিন্ন পশু পাখির ডাকও শোনাতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- আপনার বিভিন্ন কার্যক্রমে যদি আপনার শিশু মনোযোগ দিতে না পারে।
- সে যদি তার প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী চলতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার বাবু ঘরের কাজে আপনাকে সহযোগিতা করতে ভালোবাসে। সে খুব খুশি হয় যদি আপনি তার কাজের প্রশংসা করেন। সে তার স্ট্রলারে বসতে না চাইলে, খাবার খেতে না চাইলে কিংবা আপনি তাকে মনোযোগ না দিলে সে জিদ শুরু করে এবং হাত-পা ছুঁড়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। সে তার নিজের জিনিস সম্বন্ধে খুব বেশি সচেতন থাকে। যদি কেউ তার খেলনা বা অন্য কোন জিনিস ধরতে চায় তাহলে সে সাথে সাথে সেটি তার কাছ থেকে নিয়ে নেয় এবং তাকে জানিয়ে দেয় যে এটি আমার।
চিন্তার বিষয়ঃ
আপনার বাচ্চা যদি অল্পতেই রেগে যায় কিংবা প্রতিটি ব্যাপারেই বিরক্ত করে এবং জিদ শুরু করে তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়।
ভাষাগত পরিবর্তন ঃ
আপনার বাবু এখন কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ টি শব্দ বলতে পারে। এছাড়াও আপনি কোন বস্তুর বা মানুষের নাম নিলে সে সেটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে। সে হয়তো দুইটি শব্দের একটি বাক্য বলাও শিখে যেতে পারে। যেমন আমি খাই, তুমি যাও ইত্যাদি।
চিন্তার বিষয় ঃ
- যদি সে এখনও একটি বা দুইটি শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে।
- তার নাম ধরে ডাকার পরেও যদি সে রেসপন্স না করে কিংবা আপনার দেওয়া ইনস্ট্রাকশন বুঝতে না পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার শিশুকে টেবিলে বসিয়ে নিজ হাতে খেতে দিন। সেইসাথে তাকে নানা রকম খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। এর ফলে সে নিজে হয়তো অল্প খেতে পারবে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন খাবারের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হবে। ব্লেন্ড করা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। ব্লেন্ড করা খাবারে কোন খাদ্যেরই সঠিক স্বাদ পাওয়া যায় না। যার ফলে খাবারের প্রতি শিশুর কোন আগ্রহ থাকে না। সে যদি একটি একটি করে আইটেম নিয়ে খাওয়া শুরু করে তাহলেই তার বিভিন্ন রংয়ের এবং স্বাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে এবং সে মজা করে খাবে।
এক এক বাচ্চার খাবারের ধরণ এক এক রকম। কারোর হয়তো তিন চামচেই পেট ভরে যায় আবার কারো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্লেট শেষ করার পরেও তাকে এক্সট্রা খাবার দিতে হয়। তাই কখনোই আপনার বাচ্চাকে অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করতে যাবেন না। আগে তার খাবারের চাহিদা সম্পর্কে বুঝে তাকে সে অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
১৮ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৮৯০.১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০ মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ (ফুল ক্রিম): ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে । পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ পান করবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার আদরের সোনামণি এখন সারা ঘর জুড়ে বিচরণ করে। এই সময় আপনাকে যথেষ্ট সাবধান হতে হবে । সবসময়ই তার সাথে সাথে থাকার চেষ্টা করুন। না হলে সে ব্যথা পেতে পারে এমনকি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যেতে পারে। সে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের পাল্লা, ড্রয়ার খুলতে চেষ্টা করে। সে ক্ষেত্রে এগুলোর সাথে ধাক্কা লেগে তার চোখমুখে এমনকি হাত-পায়ে ব্যথা লাগতে পারে। এইসব জিনিসের উপরে বাচ্চাদের উপযুক্ত সেফটি মেজারমেন্ট নিতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার শিশুকে বেশি বেশি বাহিরে খেলতে নিয়ে যান। এর ফলে সে খোলা জায়গায় স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে এবং দৌড়োতে পারবে।আপনার সোনামণি এখন খেলার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী থাকে। তাকে নতুন নতুন খেলনা এনে দিন। বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলনা যেমন ব্লক, পাজেল ইত্যাদি খেলনাগুলো তার বুদ্ধি বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।এই বয়সে শিশুরা খুব বেশি পরিমাণে নতুন কিছু শিখতে শুরু করে। তাই তাদেরকে বেশি বেশি বই পড়ে শোনান। দিনে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরকে বই পড়ে শোনান। এছাড়াও তার সাথে গান করুন এবং তালে তালে নাচও করতে পারেন। তার হাতে রংপেন্সিল এবং কাগজ তুলে দিন যেন সে তার ছোট্ট হাত দিয়ে নিজের মনের মত আঁকিবুকি করতে পারে।