সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ বড়দের মতো আচরণ করতে চেষ্টা করে।
✅ পা দিয়ে বল ছুঁড়ে দিতে পারে।
✅ আধো আধো কথা বলা শিখে।
✅ ছয়টি বা তার অধিক ব্লক সাজাতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৮৩.৫-৮৫.০ সে.মি
? ওজনঃ ১১.৩-১১.৫ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৬.৭-৪৭.৮ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সী শিশুর দুরন্তপনার মাস্টার হয়ে যায়। সে এখন তার নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য তৈরি করে। যেমন তার কোন খেলনা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হবে কিংবা খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট প্লেট ও গ্লাস তাকে দিতে হবে। সে নিজেকে এখন অনেক বড় ভাবতে শুরু করে এবং বড়দের মতো আচরণ করতে চেষ্টা করে। এ কাজটি করতে গিয়ে হয়তো সে ঘরের অনেক কিছুই এলোমেলো করে ফেলে। তাই এই সময় তার সাথে রাগ না করে ধৈর্য ধরে তাকে সামলাতে হবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনাটি এখন নিজে নিজে তার সব কাজ করতে চায়। সে চামচ আর কাটা চামচ দিয়ে নিজে নিজে খেতে চেষ্টা করে। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সে আপনাকে সংকেত দেখাতে পারে। এছাড়াও সে তার পা দিয়ে বল ছুড়ে দেয় এবং এ সময় সে ব্যালেন্স রাখতে পারে। ঘরের আসবাবপত্র বেয়ে ওপরে ওঠা এবং নিচে নামাও তার কাছে একটি মজার খেলা। এসময় শিশুদের ওজন ঘন ঘন খুব বেশি বৃদ্ধি পায়না বা পরিবর্তন হয়না। ওজন বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? হাটতে গিয়ে সে যদি বারবার হোঁচট খায়।
? অতিরিক্ত জেদ করার সময় সে যদি অবিচ্ছিন্নভাবে তার হাত-পা কিংবা মাথা দেয়ালের সাথে বা শক্ত কোন স্থানে আঘাত করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু তার ব্লক সেট গুলো রং এবং আকার অনুযায়ী সাজাতে সক্ষম। এ সময় তাকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ গুলির নাম ধরে দেখিয়ে দিতে বললে সে সেটি সুন্দরভাবে করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল হলেও অধিকাংশ বডি পার্টসই সে দেখিয়ে দিতে পারে। সে তার সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে সারাদিন সময় পার করে দিতে পারে। এছাড়াও বাইরে গিয়ে কিংবা বাসার ছাদে খেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার বাবুর যদি এখনো কমপক্ষে তিনটি ব্লক সাজাতে না পারে।
? ঘরের সাধারণ আসবাবপত্রের নামগুলি বললে যদি সে চিনতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশু তার নিজস্ব জিনিসগুলোর প্রতি অনেক বেশি সচেতন থাকে। তার মধ্যে ‘আমার’ জাতীয় মানসিকতা অনেক বেশি প্রকাশ পায়। তার খেলনা কেউ ধরলে ‘এটি আমার’ বলে সে সাথে সাথে তা নিয়ে নেয়। বিশেষ করে যখন সে তার খেলনা গুলি দিয়ে তার সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে তখন এই আচরণগুলো প্রকাশ করে। আপনার ছোট্ট সোনা আপনারই দেওয়া আদেশ গুলো খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। সে এমন একটি আচরণ করে যেন সে আপনার কোন কথা শুনতেই পায়নি। খেলাচ্ছলে অনেক সময় সে আপনাকে আঘাত করতে পারে এটি দেখার জন্য যে আপনি কি প্রতিক্রিয়া দেখান। এখনো তার একটি অন্যতম প্রিয় কাজ হলো হামাগুড়ি দিয়ে সারা ঘর হেঁটে বেড়ানো।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনি তার সামনে থেকে দূরে চলে যাওয়ায় সে যদি অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে থাকে।
? আপনি অন্য বাচ্চাদেরকে কোলে নিলে কিংবা তাদের সাথে ইনভলব হলে যদি সে কোন রিএকশন না দেখায়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এই সময়ের মধ্যে শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের একটি রুটিন তৈরি হয়ে যায়। তবে এখনো ঘুমানোর সময় তার কিছু অভ্যাস থেকে থাকতে পারে যেমন মায়ের বুকের দুধ খেয়ে ঘুমানো, বাবার পায়ের উপরে উঠে দোল খেয়ে ঘুমানো কিংবা দোলনায় চড়ে দোল খেতে খেতে ঘুমানো। আপনার বাবুর যদি এসব অভ্যাস থাকে তাহলে তা আস্তে আস্তে পরিবর্তন করুন। তাকে প্রতিদিন একই বিছানায় একই সময়ে ঘুমাতে নিয়ে যান, ঘুমপাড়ানি গান কিংবা কবিতা পড়ে তাকে ঘুম পাড়াতে পারেন। ঘুমের আগে টিভি দেখার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? এই বয়সে এসেও যদি আপনার শিশুর স্বাভাবিক ঘুমের রুটিন তৈরি না হয় তাহলে তা একটি চিন্তার বিষয়।
ভাষাগত উন্নতি ও পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন অনেক কথাই বলতে শিখে এবং প্রায় সব কথাই বুঝতে পারে। সে এখনো দুইটি শব্দের একটি বাক্য উচ্চারণ করে। এছাড়াও একটি করে শব্দ সে বলতে পারে। এ সময় আপনি তার সাথে বেশি বেশি কথা বলুন। বিশেষ করে তাকে প্রচুর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। সে অস্পষ্টভাবে আলতো করে কথা বললেও আপনি সব সময় তার সাথে স্পষ্ট ভাবে কথা বলুন। এতে তার উচ্চারণ সঠিক হতে সাহায্য করবে। তাকে প্রচুর বই পড়ে শোনান এবং তার সাথে গান করুন। এসকল কাজগুলি তার কথা বলার প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি ত্বরান্বিত করবে। সে যখন আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আপনার কাজ গুলি দেখে তখন চেষ্টা করুন তাকে কাজ গুলি সম্বন্ধে বিস্তারিত বলে বোঝাতে। এরপর তাকে প্রশ্ন করুন, কোন একটি জিনিস দেখিয়ে সেটির নাম জিজ্ঞাসা করুন। এইভাবে তার ভাষাগত দক্ষতার উন্নতি ঘটবে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
অধিকাংশ মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুকে খাওয়ানোর নিয়ে নানা রকম অভিযোগ থাকে। সন্তান যদি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করে তাহলে আসলেই মায়েদের অন্য কোন কাজে মন বসে না। এখন থেকে আপনার শিশু খাওয়া নিয়ে নানা রকম অজুহাত দেখাতে পারে। সে যদি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করে তাহলে আপনাকে কিছু কিছু বিষয় প্রথমে অবলোকন করতে হবে যে তার না খাওয়ার পেছনে আসলে কারণ কি। একই খাবার রোজ রোজ খাওয়া, পেটে কৃমি, খাবারের স্বাদ ভালো না লাগা কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই শিশু খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে জানার চেষ্টা করুন আপনার সন্তানের না খাওয়ার কারণ কি এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। তাকে ভিন্ন ভিন্ন খাবার পরিবেশন করে দেখুন যে কোন খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বেশি। সে খাবারটি তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে দিন তবে মনে রাখবেন একটানা একই খাবার বেশি দিন সে খেতে চাইবে না। শিশুকে প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি দুধ, কলা এবং ডিম খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
ক্যালরি এবং ফুড চার্ট
এই বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৯৪৩.৫ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।
পানি: ২৪০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার শিশুর প্রতি যথেষ্ট সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। কেননা সে এখন জানালার কিংবা বারান্দার গ্রিল বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে যায়। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় নজর রাখুন। খোলা জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে কিংবা পড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনিও সব সময় তার সাথে সাথে থাকুন। শিশুকে কখনোই অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। সে করতে চায় না এমন কোন কাজের জন্য জোর করবেন না।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তান এখন তার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। তাকে বাসার কাজকর্মে আপনাকে সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন। যেমন তার ভাঁজ করা কাপড় গুলো সে তার ড্রয়ারে গুছিয়ে রাখতে পারে কিংবা তার নিজের খেলনা গুলিও যেন সে গুছিয়ে রাখে। আপনাকে অনেক কাজের সময় সে হয়তো কিছুটা এলোমেলো করে দিতে পারে তবুও তাকে কাজটি করতে দেওয়া উচিত। কখনোই তাকে নিরুৎসাহিত করা ঠিক হবে না। খেলার ছলে কিংবা গান গেয়ে বা কবিতা পড়ে তাকে তার দৈনন্দিন কাজগুলো করতে উৎসাহিত করুন। যেমন তার ব্রাশ করার সময় কিংবা গোসলের সময় এই জাতীয় ছড়াগুলি তাকে শুনিয়ে কাজগুলি করতে আগ্রহ তৈরি করুন। তাকে নিয়মিত বাসার বাহিরে খেলাধুলা করতে নিয়ে যান এতে করে তার এনার্জি রিলিজের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। তাকে তার খেলনা অথবা ঘরের অন্যান্য জিনিস দেখিয়ে সেগুলির নাম জিজ্ঞাসা করুন। দিনের বেলা তার সাথে প্রচুর কথা বলুন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। এতে করে তার ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে সঠিকভাবে আপনার কথাগুলো বুঝতে পারছে কিনা সেটিও নিশ্চিত হবে। তাকে এমন কোন কাজে জোরাজুরি করা ঠিক হবে না যা সে করতে চায়না। সে যদি নিজে থেকে কাজটি করে তাহলে তার প্রশংসা করার মাধ্যমে তাকে কাজটি করতে উৎসাহিত করুন।