২২ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ দুইটি কমান্ড মেনে চলতে পারে, যেমন- তোমার খেলার ঘরে যাও আর হাঁড়িপাতিলগুলো নিয়ে আসো।

✅ তার দেখা নার্সারি রাইমস গুলো নিজে নিজে গাইতে পারে।

✅ বডি পার্টসের নাম বলতে পারে।

✅ নিজ হাতে খেতে পারে।

? উচ্চতাঃ ৮৩.৫-৮৫.০ সে.মি

? ওজনঃ ১১.৩-১১.৫ কেজি

? মাথার আকৃতিঃ ৪৬.৭-৪৭.৮ সে.মি

মূল পরিবর্তনঃ

এই বয়সে বাবুর মধ্যে তার লক্ষ্য পূরণের মানসিকতা দেখা যায়। সে যদি ঠিক করে যে সে একটি কাজ করবে তাহলে সেটি করতে না দেওয়া পর্যন্ত সে হাল ছাড়েনা। যেমন ধরুন সে পানির জগ নিয়ে দৌড়ে আসলো গ্লাসে পানি ঢালার জন্য, এমন সময় আপনি যদি তাকে আটকাতে চেষ্টা করেন তাহলে সে মোটেও সেটি ছেড়ে দিবে না বরং গ্লাসে পানি ঢালা শেষ হলেই সে জগটি রাখবে। এরকম নানা ধরনের কাজ সে নিজে নিজে করতে চাইবে আর সারাদিন ছুটোছুটি করে সে আপনাকে হয়রান করে তুলবে। তাই বলে আপনার ছোট্ট সোনাটির প্রতি কিন্তু বিরক্ত হওয়া যাবে না বরং তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য তার ইচ্ছামত কাজগুলি করতে তাকে আরো বেশি উৎসাহিত করুন।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার ২২ মাস বয়সের শিশু এখন স্বাধীনভাবে নিজেই সারা ঘর ঘুরে বেড়াতে সক্ষম। সে নিজেই চামচ দিয়ে খাবার এবং গ্লাসে করে পানি খেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তার অনেকগুলি দাঁত (প্রায় ১৬ টি) বের হয় যা দিয়ে সে সব ধরনের খাবার চিবিয়ে খেতে পারে। হাঁটতে এবং দৌড়োতে গিয়ে সে তার দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। সে এখন ছোটখাটো একটি ঘূর্ণিঝড়ের মতো সারা ঘর উলটপালট করতে থাকে। লাফানো, দৌড়ানো, গ্রিলে উঠা, জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারা এই সবকিছু করে সে সারাদিন আপনাকে মাতিয়ে রাখবে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বিশেষ করে কৌতূহল বশত সে বারবার তার যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান হাঁটাচলা বা দৌড়াদৌড়িতে কোনো আগ্রহ না দেখায়।

? যদি সে সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার শিশু সন্তান এখন আপনার দুইটি কমান্ড একসঙ্গে অনুসরণ করতে পারে। সে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নাম বলতে পারে। এছাড়াও সে কিছু কিছু বিপরীত জিনিসগুলা বুঝতে পারে। সে এখন ছয়টি ব্লক সাজাতে পারে এবং কিছু সাধারণ পাজল মেলাতে পারে। এছাড়াও সে তার সমবয়সী কিংবা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের সাথে মিশতে চেষ্টা করে। প্রথম প্রথম দেখা হওয়ার পর সে কিছুটা সময় নেয়। একবার ভয় কেটে গেলে সে বেশ সাচ্ছন্দে তাদের সাথে মিশে যায়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার ছোট্টটি যদি আপনার কোন কথাই না শুনে কিংবা গুরুত্ব না দেয়।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

এই বয়সে শিশু তার চারপাশে মানুষগুলোর সাথে আরো বেশি পরিচিত হতে চায়। তবে এখনও তার বাবা-মা এবং কাছের মানুষগুলি তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। সে দূর থেকে অন্যদের সাথে কথা বলতে চায়,তবে তাদের কাছে যেতে চায়না। সে তার কাছের মানুষের আবেগ গুলি অনেক গুরুত্বের সাথে বুঝতে চেষ্টা করে। এছাড়াও সে কোন কাজ করতে গেলে তার বাবা-মায়ের অনুমতি নেয়। সে তার নিজের নাম বলতে পারে এবং কেউ তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে সে অনায়াসেই তা বলে দেয়। এই বয়সে এসে সে মোটামুটি স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। তার মানে এই নয় যে সব কাজ সে নিজে নিজেই করে ফেলে। এর অর্থ এই যে নিয়মিত তাকে কি কি রুটিনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা সে আয়ত্ত করে ফেলে। আপনি হয়তো খেয়াল করবেন গোসলের সময় সে নিজেই  তার তোয়ালে এবং জামাকাপড় নিয়ে তৈরি হয়ে যাবে। এরকম নানা রকম কাজকর্মে সে বুঝিয়ে দিবে সে তার রুটিন মত চলতে প্রস্তুত।

চিন্তার বিষয়ঃ

? নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে দেখে যদি সে ভয়ে কান্নাকাটি করে।

স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ

আপনার শিশুরটির ঘুমের রুটিন হয়তো এখন অনেকটাই পাল্টে যায়। যেমন আগে যদি সে সকালের দিকে ঘুমিয়ে থাকে তাহলে এখন হয়তো তার এই ঘুমের অভ্যাসটি আর থাকে না। তবে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়াই ভালো। কেননা এই ঘুমের মধ্যে দিয়ে তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে। প্রয়োজনের তুলনায় ঘুম কম হওয়া শিশুর জন্য মোটেও ভালো নয়। তাই সে যদি ঘুমাতে নাও চায় আপনি চেষ্টা করুন তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার। রাতে তাকে নিয়মিত একই সময়ে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমাতে নিয়ে যান এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগিয়ে দিন। এই অভ্যাসটি শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? শিশুর এলোমেলো ঘুমের সময়সূচী শিশুর বিকাশের জন্য মোটেই সহায়ক নয়।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন সাধারণ কথাবার্তা বুঝতে পারে এবং সে আপনার সাধারণ নির্দেশনা অনুসরন করে। সে এখন অনেক শব্দই বলতে পারে। যদিও সেগুলো বেশ অস্পষ্ট তবুও আপনি তার কথা মোটামুটি ভালই বুঝতে পারবেন। নিজে নিজে সে তার দেখা নার্সারি রাইমস গাইতে পারে। এছাড়াও সে দিনে প্রায় ৫০ টির মত শব্দ উচ্চারন করে। 

খাবার এবং পুষ্টিঃ

 আপনার শিশু সন্তানটি এখন স্বাদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। সে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের স্বাদ নিয়ে খাবারের ব্যাপারে তার মতামত প্রকাশ করে। এই কারণে তাকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন এবং সেগুলি খেতে অভ্যস্ত করুন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে  পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নির্বাচন করতে হবে। অতিরিক্ত তেল মশলা বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার শিশুকে না খাওয়াই ভালো। তাকে নিয়মিত ভাত, খিচুড়ি, সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম এবং ফলের রস খেতে দিন। সকালের খাবার শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করুন সকালে তাকে পেট ভরে খাবার খাওয়াতে। এতে করে সে সারাদিন এনার্জি পাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

এখন শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৯৩১.৩ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০মিলি/দিন।

ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই। 

গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।

প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।

ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।

শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।

শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।

পানি: ২৪০  মিলি/দিন।

শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার শিশুটি এই সময় অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয় হবে। তাই তার সামনে কথাবার্তা এবং কাজকর্মের ব্যাপারে সতর্ক হোন। এমন কোনো কথা বা কাজ তার সামনে করা উচিত নয় যা তার উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সে সারা ঘর ব্যাপী দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। নিজেই সব কাজ একা একা করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই কারণে সব সময় তার প্রতি নজর রাখুন। এ সময় সে প্রচুর পানি নিয়ে খেলা করতে চায়। ফলে যেখানে সেখানে পানি ফেলতে পারে। এতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সর্বদা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার শিশু সন্তানকে এখন বিভিন্ন কাজ কর্মের প্রতি উৎসাহ দিন। যেমন তার ছোট ছোট খেলনা গুলি গুছিয়ে রাখা, তার খেলনা গুলি অন্যদের সাথে শেয়ার করা ইত্যাদি। তাকে বিভিন্ন রংপেন্সিল, ব্লক, ক্লে ডো দিয়ে খেলতে দিন। এতে করে তার বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি ঘটবে। একটির পর একটি ব্লক সাজানো, জামার চেইন ওঠানামা করানো ইত্যাদি কাজগুলি তার মোটর স্কিল এর উন্নতি করে।তার দৈনিক কাজগুলো যেমন নিজে নিজে ব্রাশ করা, জামাকাপড় পরা, একা চামচ দিয়ে খাওয়া এসব ব্যাপারে উৎসাহিত করুন। তাকে চাকাওয়ালা খেলনা দেয়া যেতে পারে যা সে সাড়া ঘর ঠেলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে খেলবে। আপনি নিজেও তার সাথে খেলা করুন, তাকে গান গেঁয়ে শোনান, গানের সাথে সাথে তার সাথে নাচ করুন। এই কাজগুলো তার বিকাশের জন্য খুবই সহায়ক। সর্বোপরি আপনার শিশুকে যথেষ্ট সময় দিন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.