২৩ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ ৫০ টির অধিক শব্দ ব্যবহার করে।

✅ পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে দাড়াতে পারে।

✅ দুই বা তিন শব্দের বাক্য বলতে পারে।

✅ অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে চায়।

? উচ্চতাঃ ৮৪.৮-৮৬.১ সে.মি  

? ওজনঃ ১১.৫-১১.৭ কেজি

? মাথার আকৃতিঃ ৪৬.৯-৪৮.০ সে.মি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার শিশু সন্তানটি দিন দিন তার বিকাশের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আপনাকে সে এখন প্রশ্নের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। চারপাশের সবকিছুই তার কাছে কৌতুহলী হয়ে উঠে। সে এখন অনেক বেশি স্বাধীনচেতা মনোভাব প্রদর্শন করে। তার নিজস্ব মতামত তৈরি হয় এবং মতের বিরুদ্ধে গেলে সে বিরোধিতা শুরু করে। এক্ষেত্রে অনেক সময় সে রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে চারিদিকে হৈ চৈ ফেলে দেয়। আবার কিছু সময় অতিবাহিত হলে কিংবা অন্যদিকে তার মনোযোগ ঘুরিয়ে দিলে সে নিজের থেকেই ঠান্ডা হয়ে যায়।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার শিশু সন্তানটি এখন উপর থেকে কোন বস্তু নেওয়ার চেষ্টা করার সময় পায়ের আংগুলের উপর ভর দিয়ে উপরের দিকে উঠে দাঁড়ায়। তার পিঠ এবং পায়ের মাংসপেশি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে ফলে সে নিজ থেকে নিচু হয়ে বা ঝুঁকে পড়ে জিনিস‌ উঠাতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে একাই ওঠানামা করতে পারে, তাই বলে তাকে একা সিঁড়িতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। তার জামা-কাপড় সে নিজেই খুলতে ও পরতে পারে। নিজ হাতে খাবার খাওয়া এবং পানি পান করার সময়  আশপাশে খাবার ছড়িয়ে পড়ার পরিমাণ কমে যায়। একা একা  সাহায্য ছাড়া সে গ্রিল বেয়ে উপরে উঠতে পারে এবং নিচে নামতে পারে। এছাড়াও হাতে পেন্সিল নিয়ে সে গোলাকার দাগ কাটতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি সে বল বা অন্য কিছু ছুড়ে দিতে না পারে।

? পায়ের আংগুলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।

? হাতের মধ্যে কোন জিনিস যেমন বল, চামচ, পেন্সিল ইত্যাদি ধরতে না পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার ছোট্ট সোনাটি এখন আপনাকে অবাক করে দিয়ে নানা রকম কাজকর্ম করতে থাকবে। সে তার আশপাশের সবাইকে নকল করার মাস্টারে পরিণত হয়। আপনি নিজেও অবাক হবেন যখন দেখবেন আপনার এই ছোট্ট বাচ্চাটি কিভাবে তার চারপাশের সবকিছু তার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় এবং সময় অসময় সেগুলো প্রকাশ করতে থাকে। সে তার দৈনন্দিন কাজ গুলি বেশ নিপুন ভাবে সম্পন্ন করে। নির্দিষ্ট বাটি থেকে প্লেটে খাবার বেড়ে নেওয়া, জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালা, চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া এই কাজগুলো সে অনায়াসেই করতে পারে। খেলতে খেলতে এসে যদি কোন একটি খেলনা একটি স্থানে রেখে যায় তাহলে কিছুক্ষণ পরে সে মনে করে সেটি আবার সেই স্থান থেকে নিয়ে আসে। অথবা সে যদি কোনো একটি জিনিস যেকোনো স্থানে লুকিয়ে রাখে তাহলে পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করলে সেটি খুঁজে দিতে পারে। এটি হলো তার মনে রাখার দক্ষতা যা এখন থেকেই তার মধ্যে তৈরি হয়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার শিশু তার পরিচিত বা নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের নাম মনে রাখতে না পারে কিংবা সেগুলি দেখিয়ে দিতে না পারে তাহলে তা একটি চিন্তার বিষয়।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

শিশুরা এই বয়সে তার সমবয়সী কিংবা তার থেকে কম বেশি ছোট বা বড় বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে পছন্দ করে। সে এখন তার খেলনা গুলিও ভাগাভাগি করে খেলে তবে তার মর্জি হলে সেটি নাও করতে পারে। আপনার ছোট্ট সোনাটির মধ্যে এখন বিচ্ছেদের ভয় অনেক বেশি কাজ করে। আপনাকে কিছুক্ষণ না দেখলে কিংবা আপনি দূরে সরে গেলে সে চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। আবার বাসায় কোন মেহমান আসলেও সে কোল থেকে নামতে চায়না। 

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান সামাজিকভাবে কারো সাথে মিশতে না চায়।

? যদি সে অন্য বাচ্চাদেরকে সহ্য করতে না পারে কিংবা তাদের প্রতি মারমুখী আচরণ করে।

? আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে সে যদি মাত্রাতিরিক্ত জেদ এবং কান্নাকাটি করে।

স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ

আপনার ২৩ মাস বয়সী শিশুরটির ঘুমের রুটিন হয়তো এখন অনেকটাই পাল্টে যায়। যেমন আগে যদি সে সকালের দিকে ঘুমিয়ে থাকে তাহলে এখন হয়তো তার এই ঘুমের অভ্যাসটি আর থাকে না। তবে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়াই ভালো। কেননা এই ঘুমের মধ্যে দিয়ে তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে। প্রয়োজনের তুলনায় ঘুম কম হওয়া শিশুর জন্য মোটেও ভালো নয়। তাই সে যদি ঘুমাতে নাও চায় আপনি চেষ্টা করুন তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার। রাতে তাকে নিয়মিত একই সময়ে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমাতে নিয়ে যান এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগিয়ে দিন। এই অভ্যাসটি শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? শিশুর এলোমেলো ঘুমের সময়সূচী শিশুর বিকাশের জন্য মোটেই সহায়ক নয়।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার ছোট্ট সোনাটি এখন ৫০ টিরও অধিক শব্দ বলতে শিখে। সে একসাথে ২-৪টি শব্দ জোড়া লাগিয়ে একটি বাক্য বলার চেষ্টা করবে। এই সময় সে আপনাকে প্রচুর প্রশ্ন করবে। আপনি তার সাথে যেভাবে কথা বলেন সে তার খেলনা পুতুলের সাথেও একই রকম ভাবে কথা বলার চেষ্টা করে। সে নিজেকে সবার কাছে তার নাম ধরে প্রকাশ করতে পছন্দ করে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

 আপনার শিশু সন্তানটি এখন স্বাদের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। সে ভিন্ন ভিন্ন খাবারের স্বাদ নিয়ে খাবারের ব্যাপারে তার মতামত প্রকাশ করে। এই কারণে তাকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন এবং সেগুলি খেতে অভ্যস্ত করুন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে  পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নির্বাচন করতে হবে। অতিরিক্ত তেল মশলা বা ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার শিশুকে না খাওয়াই ভালো। তাকে নিয়মিত ভাত, খিচুড়ি, সবজি, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম এবং ফলের রস খেতে দিন। সকালের খাবার শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করুন সকালে তাকে পেট ভরে খাবার খাওয়াতে। এতে করে সে সারাদিন এনার্জি পাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

২৩ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ৯৭৯.১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

বুকের দুধ: ৪০০-৫৫০মিলি/দিন।

ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই। 

গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।

প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।

ফল/ফলের রস: ১১০ গ্রাম/দিন।

শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।

শস্য দানা: ৫৬ গ্রাম/দিন।

পানি: ২৪০  মিলি/দিন।

শিশুর দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার তার প্রধান খাবার খাবে। ২০০ মিলি কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

এখন সময় এসেছে আপনার ঘরের লম্বা আসবাবগুলো গুটিয়ে রাখার। এছাড়াও জানালার পাশে কোন আসবাব থাকলে বিশেষ করে চেয়ার বা ছোট টেবিল সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। আপনার ২৩ মাস বয়সী শিশুটি অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। তাই তার সামনে কথাবার্তা এবং কাজকর্মের ব্যাপারে সতর্ক হোন। সে কোন ভুল করলে বকাঝকা না করে তাকে বুঝিয়ে বলুন।কখনই তার গায়ে হাত তোলা কিংবা মারা উচিত নয়, এতে তার মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এমন কোনো কথা বা কাজ তার সামনে করা উচিত নয় যা তার উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সে সারা ঘর ব্যাপী দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। নিজেই সব কাজ একা একা করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই কারণে সব সময় তার প্রতি নজর রাখুন। এ সময় সে প্রচুর পানি নিয়ে খেলা করতে চায়। ফলে যেখানে সেখানে পানি ফেলতে পারে। এতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সর্বদা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার সন্তানকে প্রচুর সময় দেওয়া এবং তার সাথে খেলাধুলা করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি বিভিন্নভাবে তার সাথে খেলায় যুক্ত হতে পারেন । খেলার সময় তাকে বল ছুড়ে দিন এবং সেটি পুনরায় আপনার কাছে  ছুঁড়ে মারতে বলুন। তার সাথে রং পেন্সিল নিয়ে আঁকাআঁকি করুন এবং খেলাচ্ছলে তাকে বিভিন্ন রং এর নাম শিখিয়ে দিন। বই পড়ার সময় আপনার শিশুকে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে দিতে বলুন। তার পাজেল সলভিং এর সময় কিংবা কোন প্রজেক্ট কমপ্লিট করার সময় তার সাথে থাকুন এবং তাকে সাহায্য করুন। তাই বলে সব কিছুই আপনি তাকে করে দিবেন না বরং তার সাথে থেকে তাকে উৎসাহিত করুন। তাকে নিয়মিত বাহিরে খেলার মাঠে খেলতে নিয়ে যান। এছাড়াও ঘরে আপনাকে ছোটখাটো কাজে সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.