সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ ছোট ছোট বাক্য বলতে পারে।
✅ ৬ টির বেশি বডি পার্টসের নাম বলতে পারে।
✅ সারাদিন প্রচুর কথা বলে এবং প্রশ্ন করে।
✅ পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত হয়।
✅ নিজে নিজে কাজ করতে চেষ্টা করে।
? উচ্চতাঃ ৮৫.১-৮৬.৮ সে.মি
? ওজনঃ ১১.৭-১১.৯ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৭.০-৪৮.১ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান তার ২বছরের মাইলফলক অতিক্রম করতে পুরোপুরি প্রস্তুত। আপনি খেয়াল করবেন যে আপনার সন্তানের মধ্যে হটাত করেই বেশ পরিবর্তন চলে আসবে। সে এখন অযথা কোন কিছু নিয়ে জেদ করা কমিয়ে দিবে। তবে এখনও সে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সময় নেয়। সে তার চারপাশের পৃথিবী থেকে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু শিখতে থাকে। বিশেষ করে আপনি তার সবথেকে বড় শিক্ষক। আপনার প্রতিদিনের কাজকে সে খুব সুন্দর করেই অনুকরন করে করতে পারে। সে সারাদিন প্রচুর পরিমাণে এনার্জি নিয়ে সারাঘর দৌড়াবে, লাফাবে, সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠবে আর নিচে নামবে, খাট, টেবিল, সোফা, জানালা আরও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র বেয়ে বেয়ে উপরে উঠবে আর নামবে। তবে খাটুনি হলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনাকে সব সময় তার পিছে পিছে থাকা লাগবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার ২বছরের ছোট্ট সন্তানটি এখন ছোটখাটো একটা টর্নেডো। সে সারাদিন এতটাই একটিভ থাকে যে আপনাকে দিনের অধিকাংশ সময়ই দৌড়ের উপর রাখবে। সে সারাদিন প্রচুর পরিমাণে এনার্জি নিয়ে সারাঘর দৌড়াবে, লাফাবে, সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠবে আর নিচে নামবে, খাট, টেবিল, সোফা, জানালা আরও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র বেয়ে বেয়ে উপরে উঠবে আর নামবে। উপর থেকে কোন জিনিস নামাতে হলে সে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে দাড়িয়ে সেটি পাড়ার চেষ্টা করে। সে এখন আত্মবিশ্বাসী ভাবেই দৌড়ে বেড়ায়,বলে লাথি মারে, ছোট করে লাফ দেয় এমনকি মাথা দিয়েও বল মারতে পারে। সে খুব সহজেই ব্লক দিয়ে টাওয়ার সাজাতে পারে। এছাড়া পেন্সিল হাতে সে গোলাকার দাগ কাটতে পারে। সে নিজেই তার খেলনা নিয়ে খেলে আবার সেগুলি গুছিয়ে রাখে। একা একা খাওয়া কিংবা গ্লাসে পানি ঢালাও সে আয়ত্ত করে ফেলে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যেসব দক্ষতা অর্জন করেছে সেগুলো যদি সহসাই ভুলে যায়।
? তার হাঁটাচলায় যদি ভারসাম্য না থাকে।
? সে যদি দৌড়াতে না পারে অথবা পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।
? সে যদি তার চারপাশের কিছুই অনুকরণ করতে না পারে।
? শরীরের কোন অংশে যদি দুর্বলতা অনুভব করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
২ বছরের মধ্যে বাচ্চারা বেশ পরিপক্ক হয়ে ওঠে। তার মস্তিষ্কের প্রায় ৭৫% বিকাশ এই সময়ের মধ্যে হয়ে যায়। কোনটা কি জিনিস তা সে সহজেই আলাদা করতে পারে। যেমন খাবার যে কাপড় থেকে আলাদা, আবার পশুপাখি আর ফুলফল আলাদা সেটি সে সহজেই ভাগ করতে শিখে যায়। তার পরিচিত কিংবা বন্ধুদের ছবি দেখে তাদেরকে চিনতে পারে আর বারবার তাদের ছবি দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। বাসায় কোন নতুন জিনিস আনলে কিংবা পুরাতন কিছু সরিয়ে ফেললে সে তা খেয়াল করে। আবার নতুন কিছু দেখে সে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়। আপনার শিশুর মধ্যে এখন অনুভব করার ক্ষমতা তৈরি হয়। যেমন সে শক্ত ও নরম, ঠাণ্ডা ও গরম, কম ও বেশি ইত্যাদি বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে। সে তার খেলনাপাতি নিয়ে তার নিজস্ব একটি কাল্পনিক জগত তৈরি করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে সাধারণ নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারে।
? সাধারণ ব্লক দিয়ে বিল্ডিং বানাতে যদি তার বেগ পেতে হয়।
? সাধারণ পশুপাখির নাম যেমন কুকুর, বিড়াল, পাখি ইত্যাদি বলতে না পারে।
? সে যদি তার নিজের মত করে খেলাধুলা না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তান তার খেলার সাথীদের সাথে দিনভর খেলা করে তবে সে এখনো নিজে নিজেই খেলতে বেশি পছন্দ করে। সে অন্যদের অনুকরণ করে তাদের মত করে খেলে। তবে সে তার নিজের জিনিসের ব্যাপারে অনেক বেশি পসেসিভ আচরণ করে। নিজের খেলনা সে সহজে কাওকে দিতে চায়না। এই সময়ে তার মধ্যে অবাধ্যতা এবং নিজের মতো করে চলার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। সে তার প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী চলতে চায় না বরং নিজের মত করে কাজকর্ম করতে চায়। সে কখনও কখনও বড় বাচ্চাদের মত আচরণ করে আবার হঠাৎই ছোটদের মত আবদার করতে শুরু করে। তার মধ্যে লিঙ্গ পার্থক্যের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশ পায়। যেমন মেয়ে বাচ্চার ক্ষেত্রে সে তার মা কিংবা বাসার মেয়েদের চলাফেরা, জামা কাপড়, সাজগোজ ইত্যাদি বিষয়গুলি অনুকরণ করে। আবার ছেলে বাচ্চা হলে সে তার বাবার চলাফেরা, জামা কাপড় ইত্যাদি বিষয় গুলি অনুসরণ করে।
সে এখন আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার বিষয়ে খুব বেশি আবেগীও আচরণ নাও করতে পারে। তবে তার পছন্দ মত কিছু না হলে সে অতিরিক্ত জিদ করা শুরু করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে অধিকাংশ সময় অন্যদের কামড় দেয় কিংবা আঘাত করে।
? যদি আপনার সন্তান মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজেকে শক্ত কোন জায়গায় আঘাত করে।
? যদি সে অন্য বাচ্চাদের সাথে একেবারেই খেলতে না চায়।
? যদি সে কখনোই অন্যদের সাথে চোখে চোখ রেখে যোগাযোগ না করে।
? যদি আপনার শিশু কখনোই তার নাম ধরে ডাকলে সাড়া না দেয়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
আপনার শিশু এখন নিজে নিজে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। আপনি তাকে এখন থেকেই তার নিজের বিছানায় ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করতে পারেন। তাকে নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়া তার জন্য একটি উপকারী পদক্ষেপ। দুপুরে খাওয়ার পর বাবুকে ঘুম পাড়ানো যেতে পারে। তবে রাতে চেষ্টা করুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়া এবং সকালে তাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে দেওয়া। ‘আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইজ মেক্স অ্যা ম্যান হেলদি, অয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ’ , এই ধ্রুব সত্য বাক্যটি আপনার সন্তানের জন্য ছোটবেলা থেকেই প্রযোজ্য।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? শিশুর অনিয়মিত ঘুম তার শারীরিক বিকাশের জন্য মোটেও ভাল নয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
খাবারের ব্যাপারে অনেক শিশুই নানারকম বাহানা খুঁজে এড়িয়ে যেতে চায়। এই সময়ে আপনার উচিত ধৈর্য ধরে তাকে খাওয়ানো। অনেক সময় সে এক জায়গায় বসে খেতে চায়না,কিংবা মুখের মধ্যে খাবার নিয়ে অনেক সময় ধরে বসে থাকে। এই অবস্থায় আপনাকে ধৈর্য সহকারে তাকে বুঝিয়ে খাওয়াতে হবে। তাকে খাবারের প্রতি আগ্রহী করতে তার খাবার প্রস্তুতের সময় তাকে সাথে রাখুন আর ব্যাখ্যা করে বলুন কিভাবে তার খাবার তৈরি করা হয়। তাকে আপনাকে সহযোগিতা করতে উৎসাহ দিন। প্রতি বেলার খাবার এর সময় নানা রকম গল্প বলে কিংবা তার সামনে খেলনা রেখে খেলার ছলে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। তবে মোবাইল বা টেলিভিশন দেখিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো একদমই ঠিক না। সে যদি প্রতিবেলার খাবার ঠিকমতো খেতে না চায় তাহলে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে তাকে স্বাস্থ্যকর স্নাক্স আইটেম দেওয়া যেতে পারে। তবে দুপুর বা রাতে ভারি খাবার খাওয়ানোর আগে অন্য কিছু তাকে খেতে দেওয়া যাবেনা। এতে করে পেট ভরে গেলে সে আর কিছুই খেতে চাইবেনা। খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়ানো ঠিক না। বিভিন্ন খাবার তাকে দিয়ে যদি সে কোন নির্দিষ্ট খাবার পছন্দ করে তাহলে সেটিই তাকে বারবার দেওয়া যেতে পারে। বাবু সবজি না খেলে সবজি দিয়ে রোল বানিয়ে ভেজে দেওয়া যেতে পারে। কিংবা নুডুলস এর মধ্যে সবজি দিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। ফল খেতে না চাইলে জুস বা স্মুদি বানিয়ে দিতে পারেন। এভাবে নানারকম টেকনিক ব্যাবহার করে আপনার সন্তানের খাওয়াদাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
২৪ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১০০৫.৮ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: ৩০০-৩৬০মিলি/দিন।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৪৭০-৭০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার ২বছরের ছোট্টটি এখন মোটামুটি সব কথাই বলতে পারে। সে ছোট ছোট বাক্য ব্যাবহার করে কথা বলে। এই সময় সে আপনাকে প্রচুর প্রশ্ন করবে। আপনি তার সাথে যেভাবে কথা বলেন সে তার খেলনা পুতুলের সাথেও একই রকম ভাবে কথা বলার চেষ্টা করে। সে নিজেকে সবার কাছে তার নাম ধরে প্রকাশ করতে পছন্দ করে। সে প্রায় ৫০থেকে ৭৫ টি শব্দ ব্যাবহার করে যার অর্ধেকই বাইরের মানুষ বুঝতে পারে। সে ১ থেকে ৫ কিংবা ১০ পর্যন্ত গুনতে পারে, এছাড়া রঙের নাম বলতে পারে। সে সারাক্ষন ‘কি’ এবং ‘কেন’ দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। এই সময়ে চেষ্টা করুন সংক্ষেপে এবং টু দ্যা পয়েন্টে তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার ২৪ মাস বয়সী শিশুটি অত্যন্ত অনুকরণপ্রিয়। তাই তার সামনে কথাবার্তা এবং কাজকর্মের ব্যাপারে সতর্ক হোন। এমন কোনো কথা বা কাজ তার সামনে করা উচিত নয় যা তার উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সে সারা ঘর ব্যাপী দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। নিজেই সব কাজ একা একা করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই কারণে সব সময় তার প্রতি নজর রাখুন। এ সময় সে প্রচুর পানি নিয়ে খেলা করতে চায়। ফলে যেখানে সেখানে পানি ফেলতে পারে। এতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সর্বদা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে প্রচুর সময় দেওয়া এবং তার সাথে খেলাধুলা করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি বিভিন্নভাবে তার সাথে খেলায় যুক্ত হতে পারেন । খেলার সময় তাকে বল ছুড়ে দিন এবং সেটি পুনরায় আপনার কাছে পাঠাতে ছুঁড়ে মারতে বলুন। তার সাথে রং পেন্সিল নিয়ে আঁকাআঁকি করুন এবং খেলাচ্ছলে তাকে বিভিন্ন রং এর নাম শিখিয়ে দিন। বই পড়ার সময় আপনার শিশুকে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে দিতে বলুন। তার পাজেল সলভিং এর সময় কিংবা কোন প্রজেক্ট কমপ্লিট করার সময় তার সাথে থাকুন এবং তাকে সাহায্য করুন। তাই বলে সব কিছুই আপনি তাকে করে দিবেন না বরং তার সাথে থেকে তাকে উৎসাহিত করুন। তাকে নিয়মিত বাহিরে খেলার মাঠে খেলতে নিয়ে যান। এছাড়াও ঘরে আপনাকে ছোটখাটো কাজে সাহায্য করতে উৎসাহিত করুন।তাকে সবার সাথে মিশতে উৎসাহিত করুন। সে যদি বেশি জেদ করে কিংবা অন্যকে আঘাত করে তাহলে তাকে সেটি করতে নিরুতসাহিত করুন। হতে পারে আপনি তাকে শাস্তি হিসেবে তার কোন একটি পছন্দের খেলনা তার থেকে নিয়ে নিলেন কিংবা কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। এভাবে আস্তে আস্তে তাকে ভাল ও খারাপের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখান।