সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ ছোট ছোট জিনিসগুলা সহজেই হাত দিয়ে ধরতে পারে।
✅ কয়েক সেকেন্ডের জন্য এক পায়ের উপর দাঁড়াতে পারে।
✅ কালার এবং বিভিন্ন সেইপ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়।
? উচ্চতাঃ ৮৮.০-৮৯.৬ সে.মি
? ওজনঃ ১২.৬-১২.৭ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৭.৬-৪৮.৬ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার শিশুকে এখন কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে সে বেশ ভেবেচিন্তে গুছিয়ে উত্তর দিবে। এই সময় তার মধ্যে রাগ বৃদ্ধি পায়। কোন কারনে রাগ করলে সে অন্যকে মারা, আঘাত করা, চুল টানা, কামড়ানো ইত্যাদি কাজগুলি করতে পারে। এসব কাজে তাকে অবশ্যই বাধা দিতে হবে তবে তার সাথে রাগ না করে তাকে বুঝিয়ে বিষয়টির নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশুকে এখন আর ফিডারে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। তাকে গ্লাসে কিংবা স্ট্র দিয়ে পানি খাওয়ানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। আপনার ছোট্ট সোনা নিজে নিজেই দরোজা খুলে ফেলতে পারে। সেই সাথে সে চেয়ার টেবিল কিংবা ঘরের অন্যান্য ফার্নিচার এবং প্লেগ্রাউন্ড এর মই বেয়ে অনায়াসেই উঠে যেতে পারে। সে এখন তার বুড়ো আঙ্গুল এবং অন্যান্য আঙ্গুলের ফাঁকের মাঝে তার প্রিয় মোম রঙ পেন্সিলটিকে(ক্রেয়ন) ধরে রাখতেও সমর্থ হয়ে ওঠে। যখন সে মুষ্ঠীর মধ্যে এগুলি নিয়ে লেখালেখি করে তখন তার হাতের সেই নড়াচড়া করার শক্তি কব্জি থেকে নয় বরং কনুই থেকে আসে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার শিশু তার আঙ্গুলের মধ্যে পেন্সিল ধরতে না পারে।
? তার চলাফেরায় যদি অস্বাভাবিকভাবে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তানের প্রতীকী চিন্তাভাবনা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সে এখন ছবির মধ্যে থাকা কোন কিছুর সাথে বাস্তব জিনিসের সংযোগ করতে পারে। আবার ছবি এবং বাস্তবের অবয়বটি যে আলাদা সেটিরও পার্থক্য করতে পারে। সে তার খেলনা গুলোর সাথে মনঃসংযোগ ঘটায়। মাঝেমধ্যে তার পছন্দের চরিত্রটি সে নিজের মধ্যে ধারণ করে। হতে পারে সে তার খেলনাপাতিলে রান্না করে পরিবেশন করে আপনাকে খাওয়াবে, না হয় তার টেডি বিয়ারের মা হয়ে তাকে শাসন করবে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি তার ভাবনার জগতে খেলাধুলা না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন সামাজিকভাবে অন্যদের সাথে আরো বেশি ইন্টারেক্টিভ হয়ে ওঠে। সে তার সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলার প্রতিও বেশ আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে এখনও তার মধ্যে তার খেলনা ভাগাভাগি না করা এবং জিদ করার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে আপনি হঠাৎ যখন তাকে রেখে দূরে চলে যান তখন সে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে কান্নাকাটি করতে পারে। এছাড়া আপনাকে আঁকড়ে রাখার প্রবণতাও তার মধ্যে দেখা যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি সে কখনোই অন্য মানুষের সাথে মিশতে না চায়।
? যদি সে তার সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করতে না চায়।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
আপনার সন্তান এখন ঘুমের সময় নিজ থেকেই ঘুমিয়ে যেতে পারে আবার নিজে নিজেই ঘুম থেকে উঠে যায়। সারাদিনের সে খুব একটা ঘুমাতে চায় না। তবে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তার ঘুম যেন অতিরিক্ত কম না হয়। সকালের দিকে না ঘুমালেও দুপুরের পরে তাকে কিছু সময়ের জন্য ঘুমাতে দেওয়া উচিত। না হলে সে অস্থির চিত্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে এবং হয়তো আপনাকে বিরক্তও করতে পারে। ঘুমের সময় তাকে গল্পের বই পড়ে শোনানোর অভ্যাস করা ভালো। প্রতিদিন গল্পের বই পড়া শুনে ঘুমাতে গেলে তার মানসিক বিকাশ ভালো হয়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার ২৮ মাস বয়সী শিশুটি তার চারপাশের পরিবেশে যা কিছু ঘটে তা বর্ণনা করার জন্য বিভিন্ন রকম শব্দের ব্যবহার শুরু করে। সে সবসময় উদগ্রীব হয়ে থাকে আপনাকে কোন কিছু বর্ণনা করে শোনানোর জন্য।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? কথা বলার সময় যদি আপনার শিশু তোতলানো শুরু করে।
? তার শব্দ ভান্ডারে যদি নতুন কোন শব্দ যোগ না হয়।
? সে যদি সব সময় চুপচাপ থাকে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে না চায়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানের খাবারের ব্যাপারে তার পছন্দকে প্রাধান্য দিন। জোর করে খাওয়ানো একদমই উচিত হবে না। চেষ্টা করুন তার খাবারের মধ্যে বৈচিত্রতা বজায় রাখতে।এছাড়াও রঙিন প্লেট ,বাটি , চামচ,গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করে তার খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। স্ন্যাক্স হিসাবে তাকে পুষ্টিকর খাবার গুলি সামনে দিন। তাকে নিয়মিত বাদাম ও খেজুর খেতে দিন। এই খাবারগুলি শরীরে শক্তি যোগাতে এবং ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া প্রধান খাবার হিসাবে ভাত ও তরকারি কিংবা খিচুড়ি খাওয়াতে পারেন। তবে কখনই ব্লেন্ড করে খাওয়াতে যাবেন না। এতে চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা থেকে সে বঞ্চিত হবে এবং খাবারের কোন স্বাদও পাবেনা।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
২৮ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১০৬৮.১ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তানের উপর এখন সব সময় নজর রাখুন। যেহেতু সে এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। প্রয়োজনে বকা দিয়ে শাসন করা যেতে পারে। সে এখনো নিজে নিজে সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে দিনের মধ্যে ৩ ঘণ্টার বেশি খেলাধুলা করতে দিন। তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে গেলে অবশ্যই আপনার তত্ত্বাবধানে রাখুন। সে এখন ছোট ছোট জিনিস বিশেষ করে বোতাম বা খোলস জাতীয় খেলনা নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। এক্ষেত্রে ছোট কিছু তার মুখে দিয়ে ফেলছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখুন। সে যখন অবাধে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করে তখন তাকে বিভিন্ন আসবাবপত্রের উচ্চতা এবং পরিধি সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন যেন সে ব্যথা না পায়। তাকে বিভিন্ন রং করার সরঞ্জামাদি, কিচেন সেট, ডক্টর সেট, সুপার শপ কাউন্টার সেট ইত্যাদি খেলনা দেওয়া যেতে পারে। এসব খেলনা নিয়ে খেলার সময় কল্পনার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তার জন্য নেওয়া বইয়ের মধ্যে ফ্ল্যাশ কার্ড সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে করে সে আরো নতুন নতুন জিনিসের নাম শিখতে পারবে। এইসব খেলাধুলা এবং নতুন নতুন জিনিস শেখার বিষয়গুলো আপনার শিশুর জন্য খুবই আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। চোখের সামনে আপনার সন্তানকে প্রতিনিয়ত বড় হতে দেখে আপনি মাঝেমধ্যেই আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠবেন।