সাধারন বিষয় গুলোঃ
- বড়দের জুতা বা স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে সারা ঘর হেঁটে বেড়ায়।
- ইলেকট্রিক প্লাগের মধ্যে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে।
- কিছু কিছু রং এবং জীব জন্তুর নাম বলতে পারে।
- ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে পারে।
উচ্চতাঃ ৮৮.৪-৮৯.৯ সে.মি
ওজনঃ ১২.৮-১২.৯ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৭.৭-৪৮.৭ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এসময় বাচ্চারা খুবই মজার মজার আচরণ করে। তারা হঠাৎ হঠাৎই আপনার সামনে এমন কিছু কথা বলবে কিংবা কাজ করবে যা দেখে আপনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি করতে পারেন। তবে এই সময়ে তাদের জন্য একটি বিপদজনক কার্যক্রম হলো বাসায় ইলেকট্রিক সুইচ এবং প্লাগে হাত দেওয়া। আপনাকে সবসময়ই এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুদের দ্বিতীয় সারির দাঁত উঠে যেতে পারে। শারীরিকভাবে এখন শিশুরা অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। সে নিজের মতো করে দৌড়ায় আবার বিশ্রাম নেয়, লাফায়, নাচে, কোন কিছু ধরে খাড়া উপরের দিকে উঠতে চায়। এভাবে করে সে তার চারপাশে বিচরণ করতে থাকে। সে এখন আটটি ব্লক দিয়ে একটি টাওয়ার তৈরি করতে পারে। তার খেলনা কাঁচি দিয়ে কাগজ কাটতে পারে। একা একা জামা পরতে ও খুলতে পারে। পটি ট্রেনিংয়ে সফল হয়ে নিচ থেকে পটিতে বসতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- প্রয়োজনের তুলনায় যদি তার ওজন অতিরিক্ত কম থাকে।
- তার বয়স উপযুক্ত কোন কাজ করতে যদি সে অসুবিধা বোধ করে কিংবা না পারে।
- যদি সে খেলাধুলা করতে না চায় কিংবা খেলতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন নিজে নিজেই তার সব কাজ করতে চাইবে। যেমন নিজেই তার কাপড় পছন্দ করা, নিজে নিজে কাপড় পরা, পানি এবং খাবার একাই খাওয়া ইত্যাদি। আপনি যদি বাসায় থাকা অন্য কাউকে একটি কাজ করতে বলেন তাহলে সে নিজেই আগে আগে দৌড়ে চলে যাবে কাজটি করার জন্য। এছাড়াও কোন নির্দিষ্ট কিছু যেমন তার খেলনা কিংবা অন্য কিছু যদি তাকে আকৃষ্ট করে তাহলে সে দুর থেকে দৌড়ে আসতে পারে সেটি দেখার জন্য। সব কিছুর ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন করে এবং নিজেকে আপনার কাছে বর্ণনা করার চেষ্টা করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- সে যদি তার চারপাশের কোন কিছু আবিষ্কারের ব্যাপারে আগ্রহী না হয়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
নতুন নতুন কাজকর্ম করতে গিয়ে অনেক সময় যখন কাজটি করতে না পারে তখন শিশুরা বিরক্ত হয়ে যায়। এসময় সে কিছুটা জেদি হয়ে ওঠে এবং হাত পা ছুড়ে কান্নাকাটি করতে পারে। কেননা তারা এখনো জানিনা কিভাবে তাদের হতাশা প্রকাশ করবে। এ কারণে হয়তো সে ছোটখাটো বিষয়ে অকারণেই কান্নাকাটি কিংবা জেদ করতে পারে। অপরদিকে এই বয়সে তারা এখন আরো বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করে। নতুন নতুন মানুষের সাথে মেশা, তাদেরকে নিজের খেলনা দেখানো কিংবা তাদের সাথে খেলাধুলা করা ইত্যাদি কাজগুলো তার মধ্যে অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিস্তার লাভ করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি সে সারাক্ষণই আপনাকে আঁকড়ে ধরে রাখে।
- জেদের বশে কান্নাকাটি করা যদি অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়।
- সব সময় সে যদি উদ্বিগ্ন আচরণ করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন নিজের কাজগুলোকে আপনার সামনে বর্ণনা করে মেলে ধরতে চায়। সে তার চারপাশের পরিবেশে যা কিছু ঘটে তা বর্ণনা করার জন্য বিভিন্ন রকম শব্দের ব্যবহার শুরু করে। সে সবসময় উদগ্রীব হয়ে থাকে আপনাকে কোন কিছু বর্ণনা করে শোনানোর জন্য। এছাড়াও সে প্রচুর প্রশ্ন করে। ‘কি’ এবং ‘কেন’ জাতীয় প্রশ্ন করে আবার এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। সে জোরে এবং আস্তে কথা বলার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- কথা বলার সময় যদি আপনার শিশু তোতলানো শুরু করে।
- তার শব্দ ভান্ডারে যদি নতুন কোন শব্দ যোগ না হয়।
- সে যদি সব সময় চুপচাপ থাকে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে না চায়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানের খাবারের ব্যাপারে তার পছন্দকে প্রাধান্য দিন। জোর করে খাওয়ানো একদমই উচিত হবে না। চেষ্টা করুন তার খাবারের মধ্যে বৈচিত্রতা বজায় রাখতে।এছাড়াও রঙিন প্লেট ,বাটি , চামচ,গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করে তার খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। স্ন্যাক্স হিসাবে তাকে পুষ্টিকর খাবার গুলি সামনে দিন। তাকে নিয়মিত বাদাম ও খেজুর খেতে দিন। এই খাবারগুলি শরীরে শক্তি যোগাতে এবং ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া প্রধান খাবার হিসাবে ভাত ও তরকারি কিংবা খিচুড়ি খাওয়াতে পারেন। তবে কখনই ব্লেন্ড করে খাওয়াতে যাবেন না। এতে চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা থেকে সে বঞ্চিত হবে এবং খাবারের কোন স্বাদও পাবেনা।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
২৯ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১০৮৫.৯ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার শিশু সন্তান সবার চোখের মনি। সবাই তাকে খুব বেশি আদর করবে। তবে অভিভাবক হিসাবে উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবে তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তান যখন সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে কিংবা খেলাধুলা করে তখন তার দিকে খেয়াল রাখুন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সব সময় তাকে কাজে সাহায্য না করে মাঝেমধ্যে তার নিজেকে নিজের কাজ গুলি করতে দিন। মাঝেমধ্যে তার থেকে দূরে থাকুন তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য। সে যখন অবাধে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করে তখন তাকে বিভিন্ন আসবাবপত্রের উচ্চতা এবং পরিধি সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন যেন সে ব্যথা না পায়। তাকে বিভিন্ন রং করার সরঞ্জামাদি, কিচেন সেট, ডক্টর সেট, সুপার শপ কাউন্টার সেট ইত্যাদি খেলনা দেওয়া যেতে পারে। এসব খেলনা নিয়ে খেলার সময় কল্পনার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তার জন্য নেওয়া বইয়ের মধ্যে ফ্ল্যাশ কার্ড সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে করে সে আরো নতুন নতুন জিনিসের নাম শিখতে পারবে। তার এইসব খেলাধুলা এবং নতুন নতুন জিনিস শেখার বিষয়গুলো আপনার জন্য খুবই আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। চোখের সামনে আপনার সন্তানকে প্রতিনিয়ত বড় হতে দেখে আপনি মাঝেমধ্যেই আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠবেন।