সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ তিন থেকে চার শব্দের বোধগম্য বাক্য বলে থাকে।
✅ একটু সময় পর পর হাত পানি দিয়ে ধুয়ে আবার শুকায়।
✅ খেলনা গুলো রং এবং সাইজ অনুযায়ী আলাদা করতে পারে।
✅ দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে উপরে ও নীচে লাফাতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৮৯.৬-৯০.৬ সে.মি
? ওজনঃ ১২.৯-১৩.১ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৭.৮-৪৮.৮ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সোনামণি এখন সব ধরনের কথা বলার পাশাপাশি অনেক কিছুই বুঝতে পারে। সে তার গল্পের বইয়ের সাধারণ গল্পগুলি পুরোটাই বুঝতে পারে। এই বয়সে তার ব্রেইন ডেভলপমেন্ট অত্যন্ত দ্রুততার সহিত হয়। সে তার শরীরের সবগুলো অঙ্গের নাম বলতে পারে। এছাড়াও আপনি যখন তার সাথে তার নার্সারি রাইমস গাইতে থাকেন তখন সেও সুর করে আপনার তালে তাল মিলাবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
৩০ মাস বয়সের শিশুরা নতুন নতুন দক্ষতা প্রকাশ করে। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় তারা দুই পায়ের ব্যবহার শিখে। অর্থাৎ বড়দের মতো এক ধাপে এক পা এবং অপর ধাপে তার অন্য পা ব্যবহার করে সিঁড়িতে উঠতে পারে। হাঁটার সময় সে তার সামনে থাকা কোন বস্তু কিংবা বাঁধা এড়িয়ে হাঁটতে পারে। তার পায়ের পেশিও এখন বেশ শক্ত হয়। সে এখন দুই পায়ে ভর দিয়ে ট্রাইসাইকেল চালাতে পারে। কাগজ ভাঁজ করা, বড় সাইজের বোতাম খোলা, সিম্পল সেইপ ম্যাচিং করা এই কাজগুলো সে করতে চেষ্টা করে এবং অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? হাঁটা কিংবা দৌড়ানোর সময় যদি সে বারবার পড়ে যায়।
? সে যদি সব সময় অনিয়মিতভাবে হাঁটাচলা করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট শিশুটির মধ্যে ধীরে ধীরে ধৈর্য ধারনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে যেকোন বিষয়ের প্রতি আরও বেশি সময় নিয়ে মনোযোগ বজায় রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়াও সে ছোট ছোট সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করে, যেমন জামা উল্টাপাশে পরলে সেটি খুলে পুনরায় পরা, এক পাশের হাত অন্যপাশের হাতায় ঢোকালে তা খুলে আবার ঠিক করা, তার খেলনার সেটিংস উল্টোপাল্টা হলে সেটি ঠিক করা এই ধরনের কাজগুলো সে খুব মনোযোগ সহকারে করে থাকে। ছোট-বড়, ঠান্ডা-গরম, নরম-শক্ত, উপর-নিচ, বিভিন্ন রং এবং সাইজ সম্বন্ধে সে ভালোভাবে বুঝতে পারে। এছাড়াও সে এখন আরো বেশি স্বাধীনচেতা হয় এবং তার প্রতিদিনের কাজ গুলো অনেকটা নিজেই করতে চেষ্টা করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সমস্যা সমাধানের কার্যক্রমে সে যদি কোনও উৎসাহ না দেখায়।
? বিভিন্ন রং এবং সেইপ অনুযায়ী জিনিস সাজাতে না পারে।
? নতুন নতুন আবিষ্কারের প্রতি যদি কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখনো তার সমবয়সীদের সাথে খেলার ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে না। সে প্রথমে নিজের মতো খেলতে থাকে কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে তার সমবয়সীদের সাথে মিশে যায় এবং খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। সে আপনাকে কোন কিছু বর্ণনা করার সময় বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং ঠিকমত বর্ণনা করতে না পারলে কিংবা আপনি যদি তার কথা বুঝতে না পারেন তাহলে সে রাগান্বিত হয়ে ওঠে। এছাড়াও সে নিজে নিজে কাজ করতে না পারলে কিংবা আপনি যদি তাকে সাহায্য করতে চান তাহলে সে সেটি গ্রহণ করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তার মধ্যে আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয় এখন কিছুটা কমতে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি কারো সাথেই মেলামেশা না করে।
? পরিবারের সদস্যদের থেকেও সে যদি দূরে দূরে থাকতে চায়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন তাকে করা প্রশ্নের উত্তরে একটি বা দুটি শব্দের পরিবর্তে কয়েকটা শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করে তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে।সে তার চারপাশের পরিবেশে যা কিছু ঘটে তা বর্ণনা করার জন্য বিভিন্ন রকম শব্দের ব্যবহার শুরু করে। সবসময় উদগ্রীব হয়ে থাকে আপনাকে কোন কিছু বর্ণনা করে শোনানোর জন্য। এছাড়াও সে প্রচুর প্রশ্ন করে। ‘কি’ এবং ‘কেন’ জাতীয় প্রশ্ন করে আপনাকে সারাদিন কথার মধ্যে রাখবে। সে জোরে এবং আস্তে কথা বলার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? কথা বলার সময় যদি আপনার শিশু তোতলানো শুরু করে।
? তার শব্দ ভান্ডারে যদি নতুন কোন শব্দ যোগ না হয়।
? সে যদি সব সময় চুপচাপ থাকে এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে না চায়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানের খাবারের ব্যাপারে তার পছন্দকে প্রাধান্য দিন। জোর করে খাওয়ানো একদমই উচিত হবে না। চেষ্টা করুন তার খাবারের মধ্যে বৈচিত্রতা বজায় রাখতে।এছাড়াও রঙিন প্লেট ,বাটি , চামচ,গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করে তার খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। স্ন্যাক্স হিসাবে তাকে পুষ্টিকর খাবার গুলি সামনে দিন। তাকে নিয়মিত বাদাম ও খেজুর খেতে দিন। এই খাবারগুলি শরীরে শক্তি যোগাতে এবং ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া প্রধান খাবার হিসাবে ভাত ও তরকারি কিংবা খিচুড়ি খাওয়াতে পারেন। তবে কখনই ব্লেন্ড করে খাওয়াতে যাবেন না। এতে চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা থেকে সে বঞ্চিত হবে এবং খাবারের কোন স্বাদও পাবেনা।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩০ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১০৩.৭ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন ।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার শিশু সন্তান সবার চোখের মনি। সবাই তাকে খুব বেশি আদর করবে। তবে অভিভাবক হিসাবে আপনার উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবেন তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তান যখন সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে কিংবা খেলাধুলা করে তখন তার দিকে খেয়াল রাখুন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সব সময় তাকে কাজে সাহায্য না করে মাঝেমধ্যে তার নিজেকে নিজের কাজ গুলি করতে দিন। মাঝেমধ্যে তার থেকে দূরে থাকুন তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য। সে যখন অবাধে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করে তখন তাকে বিভিন্ন আসবাবপত্রের উচ্চতা এবং পরিধি সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন যেন সে ব্যথা না পায়। তাকে বিভিন্ন রং করার সরঞ্জামাদি, কিচেন সেট, ডক্টর সেট, সুপার শপ কাউন্টার সেট ইত্যাদি খেলনা দেওয়া যেতে পারে। এসব খেলনা নিয়ে খেলার সময় কল্পনার পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তার জন্য নেওয়া বইয়ের মধ্যে ফ্ল্যাশ কার্ড সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে করে সে আরো নতুন নতুন জিনিসের নাম শিখতে পারবে। এইসব খেলাধুলা এবং নতুন নতুন জিনিস শেখার বিষয়গুলো আপনার জন্য খুবই আনন্দদায়ক হয়ে উঠবে। চোখের সামনে আপনার সন্তানকে প্রতিনিয়ত বড় হতে দেখে আপনি মাঝেমধ্যেই আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠবেন।