সাধারন বিষয় গুলোঃ
- বিভিন্ন ধরনের সেইপ এর পার্থক্য করতে পারে, যেমন- গোলাকার, চার কোনা, ত্রিভুজ ইত্যাদি।
- কৌতূহল বৃদ্ধি পায়।
- লজ্জা পাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
- কোন কিছু মানা করা হলে তার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
- নিজের কাল্পনিক ভাবনা থেকে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে।
উচ্চতাঃ ৯০.৩-৯১.৩ সেমি
ওজনঃ ১৩.০-১৩.৩ কেজি
মাথার আকৃতিঃ ৪৭.৯-৪৮.৯ সেমি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুরা শার্ট এর বোতাম খোলা, বোতলের মুখ খোলা , দরজা খোলা ও লাগানো, বই এর পাতা উল্টানোসহ নানা রকম কাজ নিজেই করতে শিখে। কখনো কখনো কোন কিছু ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যদি সে আটকে যায় তখন আপনার উচিত হবে তাকে তার মনোভাব গুলো প্রকাশ করতে যথেষ্ট সময় দেওয়া এবং প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করা । আপনি খেয়াল করবেন আপনার ছোট্টটিকে আপনি যাই বলেন সে সেটি আবার নকল করে আপনাকে ফিরিয়ে দিবে। এই বয়সে তার ভুল গুলোর জন্য তাকে বকাঝকা করে কিংবা শাস্তি দিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। এতে করে তার জিদ আরও বেড়ে যেতে পারে, বরং আপনি যদি তার চোখের দিকে তাকিয়ে এবং তাকে আদর করে বুঝিয়ে বলেন তাহলে সেটি আপনার সন্তান অত্যন্ত তাড়াতাড়ি এবং পজিটিভ ভাবে গ্রহন করবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার আদরের সোনামণি প্রতিদিনই একটু একটু করে বড় হতে থাকে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন সে এখন নিজের পায়ের উপরে যথেষ্ট ব্যালেন্স রেখে চলাফেরা করে। এমনকি সে কোন সরু কাঠের গুঁড়ি কিংবা দেওয়ালের উপরেও ব্যালেন্স রেখে দাঁড়াতে পারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। সে অনেকের সাথে একসাথে খেলাধুলা করার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠে। একসাথে দৌড়ানো , লুকোচুরি খেলায় কিংবা হাতে হাত ধরে জটলা বেঁধে দৌড়ানোয় সে পারদর্শী হয়ে ওঠে। এছাড়াও নিজেই তার বইয়ের পাতা উল্টে রং পেন্সিল হাতে নিয়ে নিজের মত রং করা শুরু করে।
তার কাজগুলো এখন আগের থেকে অনেক বেশী গোছানো হয় এবং নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণও আগের থেকে বৃদ্ধি পায়।
চিন্তার বিষয়ঃ
- এই বয়সে যদি হাত দিয়ে জিনিসপত্র ঠিকমতো ধরতে না পারে।
- তার শারীরিক বিকাশ বয়স অনুযায়ী যদি ধীর গতিতে সম্পন্ন হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুরা তার আশেপাশের ছোট ছোট বিষয় গুলি খেয়াল করতে শুরু করে। যেমন ঘরের কোন স্থানে কোন জিনিসের পরিবর্তন হলে কিংবা সেখানে নতুন কোনো কিছু রাখা হলে সে সেটি খেয়াল করে এবং আপনাকে সে সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে পারে। তার গল্পের বইয়ের ছোট ছোট ছবিগুলো সে খেয়াল করে। এই সময় সে আরো বেশী জটিল ধরনের প্রশ্ন করতে শুরু করে। সবকিছু জানার আগ্রহ তার মধ্যে প্রবল ভাবে প্রকাশ পায়। সে এখন সাধারণ কিছু সেইপ চিনতে পারে, যেমন সার্কেল এবং স্কয়ার। কোন কাজের জন্য তাকে প্রশংসা করা হলে সে অত্যন্ত খুশি হয় এবং বারবার সেটি করতে চায়। ঠিক একইভাবে তার খারাপ কোনো কাজের জন্য যদি তাকে নিরুৎসাহিত করা হয় তাহলে সে কাজটি করা থেকে বিরত থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে কোন অবস্থাতেই তার সাথে বকাঝকা কিংবা চিল্লাপাল্লা করা যাবে না।
চিন্তার বিষয়ঃ
- কোন কিছু শেখার সময় যদি অনেকক্ষণ যাবৎ সে চুপচাপ থাকে কিংবা কোন প্রতিক্রিয়া না দেখায়।
- সাধারণ নির্দেশও যদি সে ফলো করতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান সামাজিকভাবে এখন যথেষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল। নতুন নতুন মানুষের সাথে সে পরিচিত হতে পছন্দ করে। তবে শুরুতেই তাদের সাথে মিশে যায় না। নতুন কোন মানুষের সামনে কিংবা নতুন পরিবেশে সে নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখে। হতে পারে সে লজ্জা পায় কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তবে একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরে সে সহজেই তাদের সাথে মিশে যায়। তার ভালো সময় পার করার জন্য প্রি স্কুল একটি উপযোগী পন্থা হতে পারে। সেখানে সবার সাথে বসে খেলাধুলা করা, ড্রইং করা, শারীরিক চর্চা ইত্যাদি কাজগুলো তাকে অ্যাক্টিভ রাখবে এবং আনন্দ দিবে। আপনার সন্তান একা থাকতে কিংবা অন্ধকারে ভয় পায়। তাই তাকে কখনোই একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না এতে করে মানসিকভাবে তার ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- সে যদি তার আবেগকে কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
- সব সময় যদি কান্নাকাটি করে এবং জিদ করে।
- কোনভাবেই যদি সে অন্যদের সাথে মিশতে না চায়।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন যথেষ্ট স্পষ্ট ভাবে আপনার সাথে কথা বলবে। সে তার অনুভুতিকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে পারে। সে না বোধক শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করে।এছাড়াও সে অত্যন্ত সৃজনশীল এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে নতুন নতুন শব্দের ব্যবহার করে তার অনুভূতিগুলো বর্ণনা করে। বিভিন্ন সর্বনাম যেমন সে, তুমি, তোমার, তাদের, তার এসব শব্দের ব্যবহার শিখে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- তার শব্দের ভান্ডার যদি বৃদ্ধি না পায় এবং নতুন কোন শব্দ না শিখে।
- কথা বলতে যদি অসুবিধা হয়।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানকে এখন থেকেই টেবিলে বসে সবার সাথে একসাথে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। সামনে প্লেট দিয়ে এবং সব খাবার রেখে সে যে খাবারটি খেতে চায় সেটি নিজে নিয়ে খেতে উদ্বুদ্ধ করুন। বাচ্চারা নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস করলে সে তার নিজের পছন্দ এবং রুচিমতো খেতে পারে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে তার পেট ভরবে না কিংবা খাওয়ার সময় সে আশপাশে খাবার ফেলে জায়গা নোংরা করবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করার ফলে একসময় সে গুছিয়ে খাবার খেতে শিখে যাবে এবং নিজ পছন্দে পেট ভরে খাবার খাবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩১ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১২১.৫ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তানকে কখনোই কোনো কাজে জোরাজুরি করবেন না। তাকে তার নিজের মত বিকশিত হতে দিন। তার সামনে জোরে কথা বলা কিংবা ঝগড়াঝাঁটি করা থেকে বিরত থাকুন। কোন ধরনের কটু মন্তব্য, গালিগালাজ, হাতাহাতি-মারামারি করা আপনার শিশুর জন্য মোটেও ভালো নয়। এই কাজগুলি তার ছোট্ট মস্তিষ্কের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। ধমক দিয়ে তার সাথে কখনোই কথা বলা উচিত নয়। পারিবারিক কলহ এবং শিশুর প্রতি নির্যাতন তাদের মানসিক বিকাশের জন্য খুবই অন্তরায়।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানের সাথে এখন আরো বেশি সময় কাটান। সম্ভব হলে বাবা মা একসাথে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান এবং তাকে খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে দিন। সন্তানকে বয়সের আগে কোন কিছুই জোর করে শেখাতে যাবেন না। বিশেষ করে পড়াশুনা জাতীয় বিষয়গুলো যেমন অক্ষর লেখানো, শেইপ আঁকা, কাগজ কেটে কোন কিছু বানানো ইত্যাদি কাজগুলো বয়সের আগেই তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। তার মত করে বিকশিত হওয়ার জন্য তাকে সময় দিন। সন্তানকে বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব শিক্ষা গুলো একটু একটু করে দেওয়া শুরু করতে পারেন। যেমন বড়দেরকে দেখে সম্মান করা, সালাম দেওয়া, ছোটদের আদর করা, কেউ কিছু দিলে তাকে ধন্যবাদ জানানো কিংবা সে কোনো অন্যায় করলে সরি বলা এই শিক্ষাগুলো তাকে এখন থেকে একটু একটু করে সেখানে যেতে পারে। তার কথার গুরুত্ব দিন। সে যদি অতিরিক্ত প্রশ্ন করে তাহলে ধৈর্য সহকারে সেগুলি শুনুন এবং প্রত্যেকটি প্রশ্নের আলাদা আলাদা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। কখনোই তার কথা এড়িয়ে যাবেন না। সব সময় আপনার সন্তানের গুরুত্ব আপনার কাছে সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। তবে তাকে নৈতিক শিক্ষা দিন এবং তার নিয়মিত জীবন যাপনের একটি ফলপ্রসূ রুটিন মেইনটেন করুন। আপনার সন্তানের সময় গুলো আরো আনন্দঘন করার জন্য তাকে বাচ্চাদের আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারেন তবে কখনই তা যেন সন্তানের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।