সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ গণনা করতে পারে।
✅ বিভিন্ন ধরনের রং এবং শেইপ আলাদা করতে পারে।
✅ নতুন নতুন বর্ণমালা চিনতে সক্ষম হয়।
✅ কাঁচি দিয়ে লম্বা করে কাগজ কাটতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৯১.১-৯২.০ সে.মি
? ওজনঃ ১৩.২-১৩.৫ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৮.০-৪৯.০ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুরা তার খেলার জগত থেকে আস্তে আস্তে সরে এসে বইয়ের প্রতি মনোনিবেশ করে। সে নতুন নতুন রং এর নাম, বর্ণমালা, বিভিন্ন শেইপের নাম শিখে। তাকে কোন বইয়ের গল্প পড়ে শুনালে সেটা বিস্তারিত বুঝতে পারে। এছাড়াও বাসার অন্যান্য সদস্যদের নিজেদের মধ্যে যা আলোচনা হয় সেগুলিও সে খেয়াল করে এবং বুঝতে পারে। পিতা-মাতার সাথে এই সময় তার একটি আলাদা বন্ডিং তৈরি হয় এবং তাদের সাথে খেলাধুলা করতে চায়। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে। তাকে এখন আলাদা বিছানায় দেওয়ার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠে। সে অন্ধকারে ভয় পায় তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এই বয়সে দৌড়াদৌড়ি এবং লাফালাফির মাস্টার হয়ে উঠে। সোফার গদিতে কিংবা খাটের তোষক এর উপর লাফালাফি করে সে অনেক আনন্দ পায়। এই সময় পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে। তাই তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। সে একটি নির্দিষ্ট হাতের উপরে বেশী জোর দিয়ে কাজকর্ম শুরু করে। বিশেষ করে পেন্সিল ধরার সময় সে যেকোনো একটি হাত যেমন ডান কিংবা বাম হাতের ব্যবহার করে। বুড়ো আংগুল এবং তর্জনীর মধ্যে পেন্সিল নিয়ে লেখালেখি করে। এখন তার পেন্সিল ধরা অগোছালো ভাবে হয় না। বরং সে বড়দের মতই সুন্দর করে পেন্সিল ধরতে পারে। সে এখন অনেক লম্বা ব্লকের স্টেক তৈরি করতে পারে। যতক্ষণ না পর্যন্ত টাওয়ারটি নিজে নিজে পড়ে যায় ততক্ষণ সে একটি পর একটি ব্লক সাজিয়ে টাওয়ারের উচ্চতা বাড়াতে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? তার দৈহিক পরিবর্তনগুলো যদি ধীরগতিতে সম্পন্ন হয়।
? সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না পারে কিংবা লাফালাফি না করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন তার নিজস্ব জগতে মনোনিবেশ করে থাকতে ভালোবাসে। এখন খেলাধুলার চাইতেও বইয়ের প্রতি বিশেষ করে খাতায় রং করার প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়। তার রং পেন্সিল গুলোকে সে আলাদা করতে পারে এবং রং এর নাম ধরে ধরে সেগুলি চিনিয়ে দেয়। এছাড়াও তার অংকের দক্ষতাও এখন বৃদ্ধি পায়। সেই সংখ্যাগুলি গণনা করতে পারে। অর্থাৎ তার মধ্যে কোনোকিছু গণনা করার দক্ষতা তৈরি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেইপ আলাদা করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি রং এবং আকার সম্বন্ধে কোনো ধারণা না রাখে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনাটি নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করে। কিন্তু এই সময় সে নতুন অনেক কিছুই তাদের থেকে শিখতে থাকে। হতে পারে সে নেতিবাচক নানারকম বিষয়গুলো আয়ত্ত করে ফেলে। এই সময় তার সাথে আপনার ছোটখাটো তর্ক কিংবা ঝগড়াও লেগে যেতে পারে। সে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার জন্য অহেতুক জিদ কিংবা চিল্লাচিল্লি করতে পারে। খেলাধুলার সময় নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করলেও এখনো নিজে নিজে খেলার প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থাৎ দুইজন একসাথে খেলার সময় মিলিতভাবে খেলার চাইতে যে যার মত খেলার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? অধিকাংশ সময় যদি সে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকে এবং কারনে অকারনে নিজেকে আঘাত করে।
? সব সময় যদি হিংস্র আচরণ করে। বিশেষ করে কারনে অকারনে অন্যকে মারা, কামড়ানো কিংবা চুলটানা, ধাক্কা দেওয়া ইত্যাদি আচরণগুলো বেশি করলে।
? সব কাজে অতিরিক্ত অনীহা, অলসতা, লজ্জা কিংবা চোখে চোখ রেখে কথা না বলা ইত্যাদি প্রবণতা যদি বেশি থাকে।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এই বয়সে বাচ্চাদের মধ্যে খেলাধুলা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে তাদের ঘুম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে সে যেন অন্তত ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা ঘুমায়। দিনের একটি সময়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দিনে বেশি ঘুমালে শিশুরা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চায়না। তাই চেষ্টা করুন দিনে কম সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে তাকে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে নিয়ে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে দেওয়া। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘুম তার মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় ঘুম কম হলে শিশুদের নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন উপরে-নিচে, সামনে-পিছনে, ডানে-বাঁয়ে ইত্যাদি প্রিপজিশন এর ব্যবহার শিখে। এখন আপনার সাথে সে অর্থবহ মত বিনিময় করে। তার গল্পের বইয়ের গল্প গুলো সে নিজেই ছোটখাটো ভাবে বর্ণনা করে ফেলতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? তার আশপাশে অনেক মানুষ যখন কথা বলে তখন সে যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে।
? অধিকাংশ শব্দ সে যদি ঠিকমতো উচ্চারণ করতে না পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানকে এখন থেকেই টেবিলে বসে সবার সাথে একসাথে খাওয়ার অভ্যাস করুন। সামনে প্লেট দিয়ে এবং সব খাবার রেখে সে যে খাবারটি খেতে চায় সেটি নিজে নিয়ে খেতে উদ্বুদ্ধ করুন। বাচ্চারা নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস করলে সে তার নিজের পছন্দ এবং রুচিমতো খেতে পারে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে তার পেট ভরবে না কিংবা খাওয়ার সময় সে আশপাশে খাবার ফেলে জায়গা নোংরা করবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করার ফলে একসময় সে গুছিয়ে খাবার খেতে শিখে যাবে এবং নিজ পছন্দের পেট ভরে খাবার খাবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩২ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১৩৯.৩ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তান খেলাধুলার সময় অতিরিক্ত লাফালাফি করলে বিশেষ করে সোফার উপরে কিংবা অন্য কোন ফার্নিচার এর উপরে উঠে লাফালাফি করতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে তাই তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। এছাড়া সিঁড়িতে নামার সময় সে অতিরিক্ত উত্তেজনায় লাফ দিয়ে নামতে চেষ্টা করে। এ বিষয়েও আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। শিশুর নেতিবাচক আচরনগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। তাকে একটু একটু করে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবেন তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে আপনার সন্তান গণনা করার মধ্যে অনেক বেশি আগ্রহ খুঁজে পায়। তাই তাকে বেশি বেশি গণনা করতে দিন। এছাড়াও নানা রকম রং পেন্সিল এবং রং করার বইগুলি দিয়ে তার দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করতে পারেন। আপনার সন্তানের সাথে এখন আরো বেশি সময় কাটান। সম্ভব হলে বাবা মা একসাথে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান এবং তাকে খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে দিন। সন্তানকে বয়সের আগে কোন কিছুই জোর করে শেখাতে যাবেন না। বিশেষ করে পড়াশুনা জাতীয় বিষয়গুলো যেমন অক্ষর লেখানো, শেইপ আঁকা, কাগজ কেটে কোন কিছু বানানো ইত্যাদি কাজগুলো বয়সের আগেই তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। তার মত করে বিকশিত হওয়ার জন্য তাকে সময় দিন। সন্তানকে বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব শিক্ষা গুলো একটু একটু করে দেওয়া শুরু করতে পারেন। যেমন বড়দের কে দেখে সম্মান করা সালাম দেওয়া, ছোটদের আদর করা, কেউ কিছু দিলে তাকে ধন্যবাদ জানানো কিংবা সে কোনো অন্যায় করলে সরি বলা এই শিক্ষাগুলো তাকে এখন থেকে একটু একটু করে সেখানে যেতে পারে। তার কথার গুরুত্ব দিন। সে যদি অতিরিক্ত প্রশ্ন করে তাহলে ধৈর্য সহকারে সেগুলি শুনুন এবং প্রত্যেকটি প্রশ্নের আলাদা আলাদা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। কখনোই তার কথা এড়িয়ে যাবেন না। সব সময় আপনার সন্তানের গুরুত্ব আপনার কাছে সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। তবে তাকে নৈতিক শিক্ষা দিন এবং তার নিয়মিত জীবন যাপনের একটি ফলপ্রসূ রুটিন মেনটেন করুন। আপনার সন্তানের সময় গুলো আরো আনন্দঘন করার জন্য তাকে বাচ্চাদের আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারেন তবে কখনই তা যেন সন্তানের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।