সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ টয়লেটে বসার ক্ষেত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
✅ বই এর পাতার ছবি দেখে সে সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারে।
✅ কোন জিনিসের কি কাজ সে সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে।
✅ কোন কাজ করার ক্ষেত্রে অনুমতি চাইতে পারে।
✅ তাকে কোন কাজে অনুরোধ করা হলে কাজটি আগ্রহ নিয়ে করে এবং প্রশংসা পেতে চায়।
? উচ্চতাঃ ৯১.৭-৯২.৭ সে.মি
? ওজনঃ ১৩.৩-১৩.৭ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৮.১-৪৯.১ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বয়সে বাচ্চাদের মধ্যে না খাওয়ার কারণে পুষ্টির ঘাটতি হওয়া শুরু করে। আপনার সন্তান যদি খাওয়ার ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে হয় এবং একেবারেই খাওয়া-দাওয়া করতে না চায় তাহলে তার ওজন কমতে শুরু করে এবং স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। অপুষ্টিজনিত নানা রকম সমস্যায় ভুগতে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে দেরি না করে বাবুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। খাওয়া প্রতি অনীহা আগে থেকেই শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে তাকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়াই ভালো। বাবুর মধ্যে দিনে দিনে নানা রকম পরিবর্তন কাজ করে। সে অন্যদের আবেগ অনুভূতি গুলো বোঝার চেষ্টা করে। তার চারপাশে কেউ খুশি হলে সেও খুশি হয় আবার কোন বাচ্চা কান্নাকাটি করলে সেও দুঃখী হয়ে যায়।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান সারা ঘর দৌড়ে বেড়াবে, লাফালাফি করবে, যেকোনো কিছু আঁকড়ে ধরে বেয়ে উপরে উঠতে চাইবে। ঘরের মধ্যে তার খেলনাপাতি দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমনভাবে রেখে যাবে যেনো এই মাত্র একটি ঘূর্ণিঝড়ে সবকিছু এলোমেলো করে গেল। আপনি না চাওয়া সত্ত্বেও তার দুরন্তপনা দিন দিন বাড়তেই থাকে। সে আপন গতিতে চারিদিকে দৌড়ে বেড়ায় তবে নিজের ওপর তার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। দৌড়াতে গিয়ে পড়ে না যাওয়া, সামনে কোনো বাধা থাকলে সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া, পড়ে যেতে নিলে তা সামলে নেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো আপনার সন্তান এখন সহজেই করতে পারে। আপনি যদি আপনার সন্তানকে এরমধ্যে পটি ট্রেনিং সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে এখন তাকে টয়লেটে বসানোর প্র্যাকটিস শুরু করে দিন। পটিতে যদি সে অভ্যস্ত হয় তাহলে টয়লেটে বসা তার জন্য তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা না। আপনার সন্তান এখন সাধারণ পাজলগুলো মেলাতে পারে এবং সে আট থেকে দশটি ব্লকের টাওয়ার তৈরি করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে হাঁটতে বা দৌড়াতে না পারে।
? এতদিনে যে সকল দক্ষতা অর্জন করেছে সেগুলো যদি ভুলে যায়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার ছোট্ট সোনাটি তাঁর গল্পের বইয়ের মধ্যে অত্যন্ত আগ্রহ খুঁজে পায়। একটার পর একটা গল্প শুনতে চায়। গল্পের বইয়ে ছবি দেখে নিজেও সেটি বর্ণনা করতে চেষ্টা করে এবং এমনভাবে অভিনয় করে যেন সে নিজেই বইটি পড়ছে। সে এতদিনে তিন থেকে চারটি জিনিস গণনা করতে পারে। এছাড়াও অক্ষর চেনার ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে পারে। তবে এখনও তার প্রিয় কাজটি হলো সাদা কাগজে বিভিন্ন রং নিয়ে এলোমেলোভাবে রং করা। সে নিজের মতো করে অভিনয় করে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। যেমন খোলা জায়গায় তার গাড়িগুলোর প্রতিযোগিতা করানো কিংবা তার খেলনা পাতিলে রান্না করে প্লেটে খাবার বেড়ে খাওয়ানো। এই ধরনের খেয়ালিপনার খেলাগুলো তার অত্যন্ত পছন্দের কাজ।\
চিন্তার বিষয়ঃ
? তার খেলনাগুলো বাছাই করতে সে যদি অসুবিধা বোধ করে।
? বাসার সাধারণ জিনিসগুলোর কোনটির কি কাজ তা বুঝতে যদি সে সক্ষমতা প্রকাশ না করে।
? কোন নির্দিষ্ট কাজে যদি সে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এই বয়সে এসে একজন খেলার সাথী খুঁজে। হতে পারে সে তার সমবয়সী নির্দিষ্ট কাউকে খেলার সাথী হিসেবে বেছে নেয় এবং সব সময় তার সাথে খেলতে চায়। এমনকি তার বন্ধু যখন তার সাথে নাও থাকে তখন সে তার কল্পনায় তার বন্ধুর সাথে খেলা করে। সে এখন কাজ করার সময় আপনার অনুমতি নিতে চায়। কোন কাজ করলে আপনি তাকে প্রশংসা করছেন কিনা সেই আশায় থাকে। তার সম্বন্ধে আপনি কি চিন্তা করছেন সেটা তার জন্য একটি বড় বিষয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি এখন অন্য বাচ্চাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ না করে।
? আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে তার মধ্যে অতিরিক্ত উত্তেজনা কাজ করে।
? সে যদি অতিরিক্ত হিংসাত্মক বা আক্রমণাত্মক আচরণ করে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার ছোট্ট সোনামণি সকল কথাই মোটামুটি স্পষ্টভাবে বলতে পারে। ব্যাকরণ গত দিক থেকে তার বাক্যগুলি মোটামুটি গোছানো হয়। তবে এখনো তার আরো অনেক শেখার বাকি রয়েছে। সে এখন আপনার সাথে ছোটখাটো তিন চার বাক্যের একটি আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবে। আপনার দেওয়া জটিল কিছু কমান্ড মেনে সে কাজও করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি এখনও একটি বা দুটি শব্দ ব্যবহার করে।
? সে তার প্রয়োজন গুলো যদি মুখে বলে প্রকাশ করতে না পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তানকে টেবিলে বসে সবার সাথে একসাথে খাওয়ার অভ্যাস করুন। সামনে প্লেট দিয়ে এবং সব খাবার রেখে সে যে খাবারটি খেতে চায় সেটি নিজে নিয়ে খেতে উদ্বুদ্ধ করুন। বাচ্চারা নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস করলে সে তার নিজের পছন্দ এবং রুচিমতো খেতে পারে। আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে তার পেট ভরবে না কিংবা খাওয়ার সময় সে আশপাশে খাবার ফেলে জায়গা নোংরা করবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্থ করার ফলে একসময় সে গুছিয়ে খাবার খেতে শিখে যাবে এবং নিজ পছন্দের পেট ভরে খাবার খাবে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩৩ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১৪৮.২ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তানকে কখনোই কোনো কাজে জোরাজুরি করবেন না। তাকে তার নিজের মত বিকশিত হতে দিন। তার সামনে জোরে কথা বলা কিংবা ঝগড়াঝাঁটি করা থেকে বিরত থাকুন। কোন ধরনের কটু মন্তব্য, গালিগালাজ, হাতাহাতি-মারামারি করা আপনার শিশুর জন্য মোটেও ভালো নয়। এই কাজগুলি তার ছোট্ট মস্তিষ্কের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। ধমক দিয়ে তার সাথে কখনোই কথা বলা উচিত নয়। পারিবারিক কলহ এবং শিশুর প্রতি নির্যাতন তাদের মানসিক বিকাশের জন্য খুবই অন্তরায়।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার শিশু এখন নতুন নতুন বন্ধু খুঁজে। তাই তাকে প্রতিদিনই খেলার মাঠে নিয়ে যান। সেখানে অনেকের সাথে একসাথে খেললে তার জন্য একটি আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি হবে। সম্ভব হলে বাবা মা একসাথে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান এবং তাকে খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে দিন। তবে এই সময় অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখুন। এই বয়সে আপনার সন্তান গণনা করার মধ্যে অনেক বেশি আগ্রহ খুঁজে পায়। তাই তাকে বেশি বেশি গণনা করতে দিন। এছাড়াও নানা রকম রং পেন্সিল এবং রং করার বইগুলি দিয়ে তার দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করতে পারেন। আপনার সন্তানের সাথে এখন আরো বেশি সময় কাটান। সন্তানকে বয়সের আগে কোন কিছুই জোর করে শেখাতে যাবেন না। বিশেষ করে পড়াশুনা জাতীয় বিষয়গুলো যেমন অক্ষর লেখানো, শেইপ আঁকা, কাগজ কেটে কোন কিছু বানানো ইত্যাদি কাজগুলো বয়সের আগেই তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। তার মত করে বিকশিত হওয়ার জন্য তাকে সময় দিন। সন্তানকে বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তব শিক্ষা গুলো একটু একটু করে দেওয়া শুরু করতে পারেন। যেমন বড়দের কে দেখে সম্মান করা সালাম দেওয়া, ছোটদের আদর করা, কেউ কিছু দিলে তাকে ধন্যবাদ জানানো কিংবা সে কোনো অন্যায় করলে সরি বলা এই শিক্ষাগুলো তাকে এখন থেকে একটু একটু করে সেখানে যেতে পারে। তার কথার গুরুত্ব দিন। সে যদি অতিরিক্ত প্রশ্ন করে তাহলে ধৈর্য সহকারে সেগুলি শুনুন এবং প্রত্যেকটি প্রশ্নের আলাদা আলাদা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। কখনোই তার কথা এড়িয়ে যাবেন না। সব সময় আপনার সন্তানের গুরুত্ব আপনার কাছে সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। তবে তাকে নৈতিক শিক্ষা দিন এবং তার নিয়মিত জীবন যাপনের একটি ফলপ্রসূ রুটিন মেনটেন করুন। আপনার সন্তানের সময় গুলো আরো আনন্দঘন করার জন্য তাকে বাচ্চাদের আর্ট স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারেন তবে কখনই তা যেন সন্তানের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।