৩৪ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ অক্ষর চেনার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

✅ পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে কথা বলে।

✅ কোন কিছু বলা হলে সেটি মানা করার বা না বলার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

✅ নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।

? উচ্চতাঃ ৯২.৪-৯৩.৪ সে.মি

? ওজনঃ ১৩.৫-১৩.৮ কেজি

? মাথার আকৃতিঃ ৪৮.২-৪৯.২ সে.মি

মূল পরিবর্তনঃ

এই‌ সময়ে শিশুদের মধ্যে মানসিক দক্ষতাগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সে অক্ষর চিনতে শুরু করে এবং সেগুলি আরো বেশি মনে রাখে। এছাড়াও নানা রকম জিনিসপত্র রং এবং আকার অনুযায়ী পৃথক করতে শিখে। এই বয়সে এসে তার পছন্দ এবং অপছন্দের অনুভুতিগুলো আরো বেশি জোরালো হয়। সবকিছুতে সে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দৌড়ানো, লাফানো, নাচ করা কিংবা কোনকিছু বেয়ে উপরে উঠতে সক্ষম। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালাতে পারে। তার হাত এবং চোখের সমন্বয় আরো বেশি উন্নত হয়। সে ছোট ছোট জিনিস গুলো সহজেই হাত দিয়ে উঠাতে পারে এবং এই সময় তার হাত থেকে কোন জিনিস পড়ে যায় না।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি এই বয়সেও সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা, লাফালাফি করা কিংবা দৌড়ানোর সক্ষমতা অর্জন না করতে পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন কিছু কিছু বর্ণমালা চিনতে শুরু করে। এমনকি সে একই সাথে বেশ কয়েকটি ছড়াও আয়ত্ত করে ফেলে। তার কল্পনার জগতে সে অনেক কিছু নিয়ে খেলা করে। নিজে নিজেই কথা বলা কিংবা তার খেলার পুতুলকে নির্দেশনা দেওয়া তার একটি অন্যতম পছন্দের কাজ। সে আপনার সাথে মজা করার জন্য ছোটখাটো মিথ্যা বলে থাকতে পারে আপনি কি প্রতিক্রিয়া দেখান সেটি দেখার জন্য। এই কাজটিতেও সে অনেক বেশি মজা পায়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি এখনও কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন আগের থেকে আরো বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে। তার মধ্যে কিছু কিছু নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় যেমন কোন নির্দিষ্ট খেলনা কিংবা কোন প্রাণী। তার সামনে কেউ যদি কান্নাকাটি করে কিংবা দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করে তাহলে সে অনেক বেশি আন্তরিক ভাবে তাকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। তার কল্পনার জগতের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে । অনেকক্ষেত্রে তার ভয় পাবার প্রবণতা কমতে থাকে আবার নতুন নতুন বিষয়ে ভয় জন্মাতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান বাহিরে যেতে না চায় এবং অন্যদের সাথে খেলাধুলা করতে না চায়।

স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ

এই সময় শিশুরা খেলাধুলার প্রতি এতটাই মনোযোগী থাকে যে তারা দিনের বেলার ঘুমের  আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ঘুমের সময় সে না ঘুমিয়ে সারাদিন খেলতে চায়। তবে আপনার উচিত হবে তাকে বুঝিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট টাইমে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়া। কেননা তার বিকাশের জন্য এখনো ১১-১৪ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণি সকল কথাই মোটামুটি স্পষ্টভাবে বলতে পারে। ব্যাকরণগত দিক থেকে তার বাক্যগুলি মোটামুটি গোছানো হয়। তবে  আরো অনেক শেখার বাকি থাকে। সে এখন আপনার সাথে ছোটখাটো একটি আলোচনা চালিয়ে যেতে পারবে। আপনার দেওয়া জটিল কিছু কমান্ড মেনে কাজ করতে পারে। আপনি প্রায়ই শুনবেন সে তার পছন্দের ছড়া গানটি একটু পর পর গাইতে থাকবে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

 আপনার সন্তান খাবারের ব্যাপারে এখন অনেক বেশি বেছে খেতে পছন্দ করে। সে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে যায়। এমন কি কোন কোন খাবার মোটেও খেতে চায় না। তবে তার বাড়ন্ত শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিকভাবে তার বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের তালিকা হতে সব বিভাগের খাবারই নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়া দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে। শিশু ঠিক মত না খেলে তার খাবারের ঘাটতিজনিত নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো শিশুকে কখনোই দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে খাওয়ানো ঠিক নয়। কোন একটি নির্দিষ্ট বেলার খাবারের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে খাওয়ানো মোটেও উচিত নয়। আবার একটি খাবার খাওয়ানোর পরে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য খাবার দেওয়া যাবে না। এতে শিশুর হজমের অসুবিধা হতে পারে।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

৩৪ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১৬৬ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।

ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই। 

গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।

প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।

ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।

শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।

শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।

পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।

শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

শিশুরা সবসময়ই অনেক বেশি অনুকরণপ্রিয় হয়ে থাকে। সে আপনার বলা কথা থেকে যতটুকু না শিখবে তার থেকে অনেক বেশি এবং দ্রুত শিখে আপনাকে দেখে। আপনার সবকিছুই সে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেষ্টা করে। এই কারণে শিশুদের সামনে নিজেদের আচরণগত সংযম বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। তাদের সামনে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় কিংবা এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যা কিনা তাদের ছোট্ট মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কেননা সে আপনাকে দেখে যা শিখবে সহজে সেটি পরিবর্তন করানো যাবে না। এছাড়াও শিশুকে মোবাইল কিংবা স্ক্রীন থেকে দূরে রাখার জন্য আপনার নিজেকেও এগুলোর ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ আপনাকে দেখে সে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। তাছাড়া শিশুরা যদি কোন অন্যায় কাজ করে তাহলে তাকে সাথে সাথেই বুঝিয়ে বলতে হবে। এমন কি মজা করে মিথ্যা বললেও সেটি প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। তাকে আদর করে বুঝিয়ে এসব কাজ করা থেকে বিরত রাখতে হবে। 

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার সন্তানকে এখন নানা রকম শারীরিক কার্যকলাপ যেমন- সাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি কাজ গুলোর মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। তাকে বিভিন্ন নিয়ম কানুন শেখাতে শুরু করুন যেমন রাস্তা পার হওয়ার সময় আপনার হাত ধরে রাখা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা সময় বড়দের জন্য অপেক্ষা করা, কোন দরজাটি খোলা যাবে না সেটি মেনে চলা ইত্যাদি। আপনার সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাকে ফ্ল্যাশ কার্ড দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও তাকে বর্ণমালার পাজল সেট দিলে তার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে আরো বেশি অক্ষর চিনতে শুরু করবে। সন্তানকে মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষা দান করার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এছাড়াও এসময় তাকে নিজের সংস্কৃতি চেনানোর উপযুক্ত বয়স। আপনি তাকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.