সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিতভাবে সঞ্চালন করতে পারে।
✅ সম্পূর্ণভাবে আমার, তার, তোমার এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে অবগত থাকে।
✅ হাত এবং চোখের সমন্বয় এর উন্নতি হয়।
✅ নরম কোন জিনিসের নড়াচড়া করানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত আচরন প্রদর্শন করে।
? উচ্চতাঃ ৯৩.০-৯৪.০ সে.মি
? ওজনঃ ১৩.৬-১৪.০ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৮.৩-৪৯.৩ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু খুব তাড়াতাড়ি তিন বছরের মাইলস্টোন গুলো অতিক্রম করতে চলেছে। এই বয়সে শিশুরা নিজেই নিজের কাজ গুলো করতে ভালোবাসে। সে নিজে নিজে ব্রাশ করার সময় তার নার্সারি রাইমস এ দেখা গানটি গুনগুনিয়ে গায় আর বারবার ব্রাশ করতে চায়। এখন সে টেবিলে বসে আপনাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। এই সময় তার নিজস্ব প্লেট, গ্লাস, চামচ ইত্যাদি তাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে। সে যদি ঠিকমতো খাবার খেতে না চায় তাহলে চিন্তিত না হয় তাকে বুঝিয়ে কিংবা বারবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তবে কখনই তার সাথে জোর জবরদস্তি করা ঠিক হবে না।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তানের মধ্যে এখন ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সে কয়েক সেকেন্ডের জন্য এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, আবার সরু কোন বীমের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। তার দৌড়ানো এবং বেয়ে ওঠার দক্ষতা অসাধারণ ভাবে বৃদ্ধি পায়। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সে আরো বেশি পারদর্শী হয়ে ওঠে। সে এখন সহজেই জগ কিংবা বোয়েমের মুখ খোলা ও লাগানো, দরজার হাতল ধরে টান দেওয়া, বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানো, কোন কোন ক্ষেত্রে কাঁচি দিয়ে কাগজ কাঁটা এই কাজগুলি করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিচে উঠতে না পারে।
? সে যদি তার হাঁটাচলার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারে এবং সহজে পড়ে যায়।
? সে যদি এক পায়ের উপর কিছু সেকেন্ডের জন্য ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।
? ছোট কোন বস্তু নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সে যদি অসুবিধা বোধ করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন অন্যদের সাথে আরো গোছানোভাবে খেলাধুলা করে। সে একটি নির্দিষ্ট খেলায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। বিভিন্ন রং চেনার ব্যাপারে সে পারদর্শী হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট রং তার অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। সে অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। কল্পনার জগতে খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। আবার এই সময় তার মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ভয় সৃষ্টি হয়। আপনার উচিত ভয় পাওয়া নিয়ে তার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করা যেন সে অযথা কোনো কিছু নিয়ে ভয় পাওয়া থেকে বিরত থাকে। তাকে বেশি বেশি গণনা করতে দেওয়া যেতে পারে। কেননা কোন কিছু গণনা করার প্রতি এই বয়সে তার প্রবল ঝোঁক কাজ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি একটি সাধারন বাক্যের নির্দেশনা বুঝে কাজ করতে না পারে।
? সে যদি খেলাধুলা বা অন্যান্য মজার কাজ গুলোর মধ্যে কোন আনন্দ খুঁজে না পায়।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার শিশু অন্যদের প্রতি যত্ন এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করতে শুরু করে। বিশেষ করে কেউ যদি তার সামনে চিন্তিত, মর্মাহত কিংবা বিপর্যস্ত থাকে তাহলে আপনার ছোট্টটি তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। সে সব সময় যাদের সাথে খেলাধুলা করে কিংবা একসাথে একই বাসায় থাকে তাদের সাথে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলে। তার খেলনাগুলো এখন ভাগাভাগি করে খেলা শুরু করে। নিজের এবং অন্যের সম্পর্কিত বিষয় গুলি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। এছাড়াও সে এখনো বাসার বড়দের এবং যাদের সাথে সে খেলা করে তাদেরকে অনুকরণ করে কাজ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি সব সময় একা থাকতে চায়।
? সে যদি গ্রুপে খেলাধুলা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
? চোখে চোখ রেখে সে যদি এখনো যোগাযোগ করতে না পারে।
স্বাভাবিক ঘুমের ধরনঃ
এই সময় শিশুরা খেলাধুলার প্রতি এতটাই মনোযোগী থাকে যে তারা দিনের বেলার ঘুমের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ঘুমের সময় সে না ঘুমিয়ে সারাদিন খেলতে চায়। তবে আপনার উচিত হবে তাকে বুঝিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট টাইমে ঘুমাতে নিয়ে যাওয়া। কেননা তার বিকাশের জন্য এখনো ১১-১৪ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
ভাষাগত পরিবর্তন এবং উন্নতিঃ
অধিকাংশ বাচ্চারা এই বয়সে জটিল ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে পারে। তার শব্দভাণ্ডারের প্রায় ৯০০ টিরও বেশি শব্দ যুক্ত হয়। যদিও সে এখন পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে কথা বলে তবুও তার বাক্য তৈরির ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ত্রুটি থাকতে পারে। সে একই ছড়া গান বারবার শুনে মুখস্ত করে এবং সেগুলি নিজের মতো গাইতে থাকে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
আপনার সন্তান খাবারের ব্যাপারে এখন অনেক বেশি বেছে খেতে পছন্দ করে। সে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে যায়। এমন কি কোন কোন খাবার মোটেও খেতে চায় না। তবে তার বাড়ন্ত শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিকভাবে তার বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের তালিকা হতে সব বিভাগের খাবারই নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়া দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে। শিশু ঠিক মত না খেলে তার খাবারের ঘাটতিজনিত নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো শিশুকে কখনোই দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে খাওয়ানো ঠিক নয়। কোন একটি নির্দিষ্ট বেলার খাবারের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে খাওয়ানো মোটেও উচিত নয়। আবার একটি খাবার খাওয়ানোর পরে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য খাবার দেওয়া যাবে না। এতে শিশুর হজমের অসুবিধা হতে পারে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩৫ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১১৮৩.৩ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৪৭০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
শিশুরা সবসময়ই অনেক বেশি অনুকরণপ্রিয় হয়ে থাকে। সে আপনার বলা কথা থেকে যতটুকু না শিখবে তার থেকে অনেক বেশি এবং দ্রুত শিখে আপনাকে দেখে। আপনার সবকিছুই সে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেষ্টা করে। এই কারণে শিশুদের সামনে নিজেদের আচরণগত সংযম বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। তাদের সামনে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় কিংবা এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যা কিনা তাদের ছোট্ট মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কেননা সে আপনাকে দেখে যা শিখবে সহজে সেটি পরিবর্তন করানো যাবে না। এছাড়াও শিশুকে মোবাইল কিংবা স্ক্রীন থেকে দূরে রাখার জন্য আপনার নিজেকেও এগুলোর ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ আপনাকে দেখে সে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। তাছাড়া শিশুরা যদি কোন অন্যায় কাজ করে তাহলে তাকে সাথে সাথেই বুঝিয়ে বলতে হবে। এমন কি মজা করে মিথ্যা বললেও সেটি প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। তাকে আদর করে বুঝিয়ে এসব কাজ করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানের জন্য প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন এবং সেটি মেনে চলতে চেষ্টা করুন। বারবার তাদের রুটিনে পরিবর্তন আনা হলে তারা বিরক্ত হতে পারে। তাকে মাঝেমধ্যে নিজে নিজে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে তার মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতার মনোভাব গড়ে উঠবে। আপনার সন্তানকে এখন নানা রকম শারীরিক কার্যকলাপ যেমন- সাইকেল চালানো, ফুটবল খেলা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি কাজ গুলোর মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। তাকে বিভিন্ন নিয়ম কানুন শেখাতে শুরু করুন যেমন রাস্তা পার হওয়ার সময় আপনার হাত ধরে রাখা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা সময় বড়দের জন্য অপেক্ষা করা, কোন দরজাটি খোলা যাবে না সেটি মেনে চলা ইত্যাদি। সারাদিন কি কি কাজ করে সে দিনটি পার করলো সে সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে পারেন তাকে মস্তিষ্কে আপনার সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাকে ফ্ল্যাশ কার্ড দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও তাকে বর্ণমালার পাজল সেট দিলে তার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে আরো বেশি অক্ষর চিনতে শুরু করবে। সন্তানকে মূল্যবোধ এবং নৈতিক শিক্ষা দান করার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এছাড়াও এসময় তাকে নিজের সংস্কৃতি চেনানোর উপযুক্ত বয়স। আপনি তাকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারে। সারাদিন সে কি কি কাজ করেছে তার একটি বিবরন তার থেকে জানতে পারেন। এতে তার বক্তৃতা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং সে পুরনো ঘটনাগুলো মনে করতে পারবে।