সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ আপনার সন্তান এখন অন্যদের সাথে আরো ভালো সময় কাটাতে পছন্দ করে।
✅ সে তার খেলনাগুলো ভাগাভাগি করে খেলা করে।
✅ বিস্তর পরিসরে আবেগ-অনুভূতি, রাগ , আনন্দ, ভয়, দুঃখ ইত্যাদি অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
✅ নিজ হাতে খাবার খেতে পারে।
✅ অধিকাংশ রং এবং সেইপ এর নাম বলতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৯৩.৬-৯৪.৭ সে.মি
? ওজনঃ ১৩.৮-১৪.২ কেজি
? মাথার আকৃতিঃ ৪৮.৪-৪৯.৪ সে.মি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তিন বছরের মাইলস্টোনগুলো অতিক্রম করতে চলেছে। দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি কিংবা অবিরত ছোটাছুটি করতে সে এখন মাস্টার হয়ে ওঠে। তার পিছে সারাদিন দৌড়াতে গিয়ে আপনাকে সব সময় পায়ের উপরে থাকা লাগবে।সে আপনার সঙ্গে রুমের ভিতর নাচ করতে কিংবা বাইরে গিয়ে আপনার সাথে বল খেলতে চাইবে। আপনার সঙ্গে খেলা করা তার একটি প্রিয় কাজ হলেও সে এখন নিজে নিজে কিংবা তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করে। মাঝেমধ্যে হয়তো সে প্রচন্ড রেগে গিয়ে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে। এই সময় ধৈর্য ধারণ করে তার রাগ থামা পর্যন্ত তাকে সময় দিন। সে কিছুটা শান্ত হওয়ার পরে তাকে আদর করে বুঝিয়ে বলুন যে তার ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এখন আপনার সন্তান শারীরিকভাবে অনেক বেশি শক্ত পোক্ত হয়ে ওঠে। সে কর্মচাঞ্চল্য এবং প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। এসময় সে পড়ে না গিয়ে একটানা অনেকক্ষণ দৌড়াতে পারে।প্যাডেল চেপে তিন চাকার সাইকেল চালাতে পারে। সে সহজেই নিচু ফার্নিচারগুলোতে উঠতে পারে। সিঁড়িতে উঠা নামা করার সময় দুই পায়েরই ব্যবহার করে। হাত দিয়ে ছুড়ে কিংবা লাথি দিয়ে বল ছুঁড়ে দিতে পারে। এছাড়াও সে একটি সোজা লাইন বরাবর এবং পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে হাঁটতে পারে ।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান হাটতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে অসুবিধা বোধ করে।
? সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা কিংবা নিচু ফার্নিচার বেয়ে উপরে উঠতে না পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও এখন অনেকটা এগিয়ে যায়।সে আগের দিন কি ঘটেছিল তা মনে রাখতে পারে। সাধারণ পাজল মিলাতে পারে। ১ থেকে ৫ কিংবা ১০ পর্যন্ত গুনতে পারে। এছাড়াও সে বিভিন্ন সেইপ চিনে তাদেরকে আলাদা করতে সক্ষম হয়। কোন কিছুর প্রতি সে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এছাড়াও সাধারণ নির্দেশনা মেনে কাজ করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি সাধারন পাজল মেলাতে না পারে।
? সে যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে।
? সাধারণ আকৃতি মেলাতে না পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু এখন সামাজিকভাবেও বেশ এগিয়ে যায়। সে তার খেলনা গুলো ভাগাভাগি করে খেলতে পছন্দ করে। এছাড়াও আপনি খেয়াল করবেন সে খেলার সময় কাল্পনিক চরিত্র ধারণ করে অথবা কল্পনায় কারো সাথে কথা বলে। সে এখন তার কিছু বন্ধুদের নামও বলতে পারে। বিস্তর পরিসরে তার আবেগ-অনুভূতি, রাগ , আনন্দ, ভয়, দুঃখ ইত্যাদি অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? রাগ হলে আপনার সন্তান যদি অতিরিক্ত ভয়াবহ আচরণ করতে থাকে।
? সে যদি সামাজিক ভাবে মিশতে না পারে এবং সবসময় চুপচাপ থাকে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন তার নিজের নাম এবং বয়স বলতে সক্ষম হয়। সে তার কিছু কিছু বন্ধুদের নাম বলতে পারে। সে সাধারন প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারে এবং সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে থাকে। আপনার সন্তান এখন আপনাকে নানাভাবে গল্প শুনিয়ে তার কথার ঝুলি খুলে বসে। এছাড়াও নার্সারি রাইমস গুলো সে সারা দিন গুনগুনিয়ে গাইতে থাকে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? সে যদি সরাসরি আপনার সাথে বাক্য বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ না করে।
? সব সময় চুপচাপ থাকে এবং নিজের সাথে কথা বলে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
শিশুর বাড়ন্ত শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সঠিকভাবে তার বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের তালিকা হতে সব বিভাগের খাবারই নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়া দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে। শিশু ঠিক মত না খেলে তার খাবারের ঘাটতিজনিত নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো শিশুকে কখনোই দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে খাওয়ানো ঠিক নয়। কোন একটি নির্দিষ্ট বেলার খাবারের জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে খাওয়ানো মোটেও উচিত নয়। আবার একটি খাবার খাওয়ানোর পরে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য খাবার দেওয়া যাবে না। এতে শিশুর হজমের অসুবিধা হতে পারে।
ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ
৩৬ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৪৮৭ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-
বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।
ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই।
গরুর দুধ : ৫৭০-৬০০ মিলি/দিন।
প্রোটিন: ১৩-১৫ গ্রাম/দিন।
ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।
শাকসবজি: ১৫০ গ্রাম/দিন।
শস্য দানা: ৮৫ গ্রাম/দিন।
পানি: ৭০০ মিলি/দিন।
শিশুর দৈনিক ৩ বেলা তার প্রধান খাবার এবং ২বেলা হাল্কা নাস্তা খাবে।১/৩ কাপ থেকে ১ কাপ পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলা খাবে ।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তান খেলাধুলার সময় অতিরিক্ত লাফালাফি করলে বিশেষ করে সোফার উপরে কিংবা অন্য কোন ফার্নিচার এর উপরে উঠে না দিতে চাইলে তাকে সতর্ক করুন। হয়তো সে উপর থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে তাই তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। এছাড়া সিঁড়িতে নামার সময় সে অতিরিক্ত উত্তেজনায় লাফ দিয়ে নামতে চেষ্টা করে। এ বিষয়েও আপনাকে সাবধান থাকতে হবে। শিশুর নেতিবাচক আচরনগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। তাকে একটু একটু করে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবেন তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
এই বয়সে যেহেতু আপনার সন্তান প্রচুর এনার্জিতে ভরপুর থাকে তাই তাকে খোলা জায়গায় বিশেষ করে খোলা মাঠে ছেড়ে দিলে সে ইচ্ছামত দৌড়াতে পারবে এবং খেলাধুলা করতে পারবে। এর ফলে তার নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। আপনার সন্তানকে ট্রাইসাইকেল চালাতে উদ্বুদ্ধ করুন। এটি শুধুমাত্র ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে খোলা জায়গায় অর্থাৎ বাইরে চালাতে নিয়ে যান। তাকে বিভিন্ন আকৃতির সরু এবং চওড়া বিভিন্ন ধাপের সিঁড়িতে ওঠানামা করে হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত করুন। এই কাজগুলি তার শারীরিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। আপনার সন্তানকে এখন তার নিজের ইচ্ছামত মতো করে খাওয়া দাওয়া করতে দিন। তার যেই খাবারটি পছন্দ হয় তাকে সেটি খেতে দিন এবং সে যেন নিজ হাতে খাবার খায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করুন। পটি ট্রেনিং এর ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করুন। এ সময় যদি আপনার সন্তান ঘর নোংরা করে তাহলে বিরক্ত না হয়ে আগের মতোই চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার সন্তানের সাথে সব সময় সাধারণ ও সরল শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে কথা বলুন যেন সে আপনার কথাগুলো বুঝতে পারে। অতিরিক্ত জটিল বাক্য যদি সে বুঝতে না পারে তাহলে সে চিন্তিত এবং হতাশ হয়ে যেতে পারে। তাকে এখন আরো নতুন নতুন খেলনা বিশেষ করে পাজল এবং সেইপ মিলানোর খেলনা গুলো কিনে দিতে পারেন।