৩৭ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দৌড়াদৌড়ি করে।

✅ ১টি থেকে ৫টি জিনিস গুনতে পারে।

✅ কোন কাজে ৫ থেকে ৮ মিনিট পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।

✅ নিজে নিজে জামা পরতে এবং খুলতে পারে।

? উচ্চতাঃ ৯৪.৮-৯৫.৯ সে.মি

? ওজনঃ ১৪.১-১৪.৫ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

এই বয়সের শিশুরা সহজে হাঁটতে পারে, দৌড়ানো, উপরে চড়া, পা ছোঁড়া এবং লাফানো ইত্যাদি খুব সহজেই করতে পারে। সাধারণ জিনিসপত্র ও ছবি চিনতে পারে এবং আঙ্গুল দিয়ে চিহ্নিত করতে পারে। পাশাপাশি বাচ্চারা দুই বা তিন শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা করতে শুরু করে। নিজের নাম ও বয়স বলতে পারে। এছাড়াও একটু বুদ্ধিদীপ্ত বাচ্চারা বিভিন্ন রঙের নাম বলতে পারে, সংখ্যা বুঝতে পারে। বিভিন্ন খেলনার বায়না করা এবং সেসব দিয়ে খেলা করা শুরু করে। এই বয়সের বাচ্চারা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে ভালবাসার প্রদর্শন করে থাকে। 

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান নিয়ন্ত্রিতভাবে হাঁটাচলা কিংবা দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। এছাড়াও সে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। উঁচু এবং প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে উড়তে পারে। সে নিজে নিজে তার প্রায় সব কাজই করতে শিখে। আপনার সাহায্য ছাড়া সে নিজের কাপড় নিজেই পরতে পারে আবার খুলতে পারে। পানির গ্লাস এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় অল্প পরিমাণ পানি ফেলে অর্থাৎ পানির গ্লাস ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? সে যদি নিজের কাজে আগ্রহী না হয়।

? সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না পারলে।

? নিচু আসবাবপত্র বেয়ে উঠতে না পারলে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন সবসময়ই অনুসন্ধানী, উৎসাহী এবং কল্পনাপ্রবণ আচরণ করে। সে তার কল্পনার জগতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জীব জন্তুর চরিত্র ধারণ করে। একা একা খেলার সময় কাল্পনিক কারো সাথে নিজেই কথা বলে। হয়তো সে নিজে ডাক্তার হয়ে আপনারকে ওষুধ খাওয়াবে না হলে আপনার মা হয়ে আপনাকে শাসন করবে।এখন সে একটি , দুইটি করে জিনিসের সংখ্যা গণনা করতে পারে। সাধারণ বর্ণমালা শিখতে শুরু করে। একসাথে দুইটি কাজ করা তার জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে যায়, যেমন একসাথে খাওয়া এবং কথা বলা তার পক্ষে কিছুটা কষ্টসাধ্য।

চিন্তার বিষয়ঃ

? সে যদি কল্পনা ভিত্তিক খেলাধুলা না করে।

? ৪ টার বেশি ব্লক সাজাতে না পারে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন একাকী খেলাধুলার চাইতে কয়েকজনের গ্রুপে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সে তার খেলনা গুলোকে ভাগাভাগি করে নেয় এবং মিলিতভাবে কিভাবে খেলতে হয় সেই সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে। সে বাসার বড়দের কে দেখে সালাম/আদাব দেওয়ার শিখে। সে প্রচুর কথা বলে এবং একা একাই খেলতে থাকে। কখনো কখনো সে ঈর্ষান্বিত হয় আবার হতাশ হয়ে যায়। এছাড়াও সে আমার, তোমার, তার এই শব্দগুলোর ব্যবহার শিখে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ না করে।

? চোখের দিকে তাকিয়ে সে যদি কথা বলতে না পারে।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন পাঁচটি শব্দের বাক্য গঠন করতে পারে। তার শব্দ ভান্ডারে প্রায় ৮০০-৯০০ বা তার বেশি শব্দ যুক্ত হয়। সে কিছু কিছু বর্ণ চিহ্নিত করতে পারে। দুই থেকে তিনটি নির্দেশনাযুক্ত কমান্ড মেনে চলতে পারে। সামনে-পেছনে, উপরে নিচে এই ধরনের প্রিপজিশন গুলোর ব্যবহার শিখে। সে তার নাম, বয়স এবং লিঙ্গ কি তা বলতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি পরিস্কারভাবে কথা বলতে না পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

  • তিন বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তিন বছরের শিশুর খাদ্যে ১৫০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
  • সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
  • দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
  • বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
  • রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি কঠোর হবেন না। তাকে সরাসরি কোন কাজে না করা ঠিক হবে না। সে যদি কথা না শোনে তাহলে তাকে বকাঝকা না দিয়ে শাস্তি হিসেবে তার একটি পছন্দের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন। এই বয়সে সে অপরিচিত মানুষ, বিভিন্ন পোকামাকড় এবং পশু পাখি, অন্ধকার ইত্যাদির দেখে ভয় পেতে পারে। ভয় পেলে তাকে আদর করে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তার অতিরিক্ত দুরন্তপনার কারণে যদি আপনি ধৈর্য হারা হয়ে যান তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং শিশুদের গায়ে হাত তোলা কিংবা বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

শিশুদেরকে এই বয়স থেকেই নির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মের মধ্যে দিয়ে না গেলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অন্যায় আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশু যেন আপনার আদেশ পালন করে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন। সে যদি বারবার আপনার কথাগুলো মেনে না চলে তাহলে তার চোখের দিকে চোখ রেখে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিন এবং তাকে দিয়ে কাঙ্খিত কাজটি করিয়ে নিন। আপনি যদি তাকে তার খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখতে বলেন তাহলে সেই কাজটি তাকেই করতে দিন। সে যদি ঠিকমতো নাও করতে পারে তবুও আপনি তাকে দিয়েই কাজটি করান। আপনি তার কাজ করে দিলে তার মধ্যে এমন ধারণার জন্মাতে পারে যে আপনি সবসময়ই তার কাজ গুলি করে দিবেন এবং ভবিষ্যতে সে কাজটি নাও করতে পারে। এই বয়সে সে সবসময় আপনার প্রশংসা কামনা করে। তাই তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময়ে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করুন। তবে তার অন্যায় কাজগুলো কে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। আপনার সন্তান ছোট , বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এই ধরনের চিন্তা থেকে তার অন্যায় কাজগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়ার অবকাশ নেই। কেননা শিশুরা সেগুলোই শেখে যা তারা ছোটবেলা থেকে শিখে আসছে। যে কাজের কোনো বিকল্প নেই সেখানে তাকে কোনো সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। বাচ্চাকে সরাসরি কোন কাজের কমান্ড না দিয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে বেঁধে দিতে পারেন। যেমন ‘এখন ঘুমাতে যাও’ কথাটি না বলে আপনি বলতে পারেন ‘আর দশ মিনিটের মধ্যে আমি যেন দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ’। সে যদি জিদ করে তাহলে সব সময় তা প্রশ্রয় না দিয়ে কিছু কিছু সময় এড়িয়ে যান। এমনকি দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে পারেন। শিশুরা এই বয়সে যদি  অতিরিক্ত মনোযোগ পেয়ে যায় তাহলে তারা একগুঁয়ে আচরণ করতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.