৩৮ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ এক পায়ে দাঁড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।

✅ সাধারণ সেইপগুলো পেন্সিল দিয়ে খাতায় আঁকতে পারে। 

✅ সিঁড়ির ধাপগুলো দিয়ে ওঠার সময় বিকল্প পায়ের ব্যবহার করে উপরে উঠতে এবং নিচে নামতে পারে।

✅ হাতের আংগুল ব্যবহার করে ছোটখাটো জিনিসগুলো আয়ত্ত করতে শিখে তবে বোতাম লাগানো এবং জুতার ফিতা বাঁধার ক্ষেত্রে এখনো অন্যদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়।

? উচ্চতাঃ ৯৫.৫-৯৬.৬ সে.মি

? ওজনঃ ১৪.৩-১৪.৭ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তানকে এখন পার্কে খেলাধুলা করাতে নিয়ে গেলে সে নিজে নিজেই স্লাইড দিয়ে নামতে পারে। তাকে সাহায্যের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। সে এখন নতুন কোন কাজে অনেকক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে যেমন ক্রাফটিং করায় কিংবা ছবি আঁকায়। এছাড়া সে নিজেই নিজের জামা পরতে এবং খুলতে পারে।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন আগের থেকে অনেক বেশি লাফালাফি করে এবং সে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। সে নিয়ন্ত্রিতভাবে হাঁটাচলা কিংবা দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। এছাড়াও সে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌড়ে চলে যায়। সে ভালোভাবেই প্যাডেল চেপে ট্রাই সাইকেল চালাতে শিখে। উঁচু এবং প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে উড়তে পারে। নিজে নিজে তার প্রায় সব কাজই করতে শিখে। আপনার সাহায্য ছাড়া সে নিজের কাপড় নিজেই পরতে পারে আবার খুলতে পারে। পানির গ্লাস এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় অল্প পরিমাণ পানি ফেলে অর্থাৎ পানির গ্লাস ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। নিজের খাবার নিজেই নিয়ে খেতে পারে। 

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তানের শুনতে এবং দেখতে সমস্যা হয়।

? আপনি কথা বলার সময় সে যদি কখনো আপনার দিকে না তাকায়।

? সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যদি অসুবিধা হয়।

? পেন্সিল কিংবা রং পেন্সিলের মত ছোটখাট জিনিস হ্যান্ডেল করতে যদি তার সমস্যা হয়।

? সাধারণ কিছু সেইপ আঁকতে না পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন ৪ থেকে ৮ মিনিটের জন্য কোন কাজের উপর তার মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।সে সবসময়ই অনুসন্ধানী, উৎসাহী এবং কল্পনাপ্রবণ আচরণ করে। সে তার কল্পনার জগতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন জীব জন্তুর চরিত্র ধারণ করে। আবার সে একা একা খেলার সময় কাল্পনিক কারো সাথে নিজেই কথা বলে। হয়তো সে নিজে ডাক্তার হয়ে আপনারকে ওষুধ খাওয়াবে না হলে আপনার মা হয়ে আপনাকে শাসন করবে।এখন সে একটি , দুইটি করে জিনিসের সংখ্যা গণনা করতে পারে। সিম্পল কিছু রং এর নাম এবং তার কিছু বন্ধুদের নাম বলতে পারে। সাধারণ বর্ণমালা শিখতে শুরু করে। একসাথে দুইটি কাজ করা তার জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে যায়, যেমন একসাথে খাওয়া এবং কথা বলা তার পক্ষে কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবে একসাথে দুইটি নির্দেশনা মেনে কাজ করতে পারে যেমন যদি বলা হয় ‘তুমি রান্নাঘরের যাও এবং পানির গ্লাসটি নিয়ে এসো’ তাহলে সে ঠিকঠাকমতো কাজটি করতে পারবে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? সন্তান যদি সাধারন নির্দেশনা মেনে কাজ করতে না পারে যেমন যদি বলা হয় ‘আমাকে বল টি দাও’ তাহলে যদি না বুঝে।

? সে যদি কল্পনা ভিত্তিক খেলাধুলা না করে।

? যদি সে চোখে চোখ রেখে কথা না বলে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তানকে এখন ডে-কেয়ার কিংবা প্রি স্কুল এ দেওয়ার আদর্শ সময়। কারণ সে একাকী খেলাধুলার চাইতে কয়েকজনের গ্রুপে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সে তার খেলনা গুলিকে ভাগাভাগি করে নেয় এবং মিলিতভাবে কিভাবে খেলতে হয় সেই সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে। পালাক্রমে কিভাবে খেলতে হয় সে বিষয়ে তার ধারণা তৈরি হয়। আগের মতো এখন আর সে আপনাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় না। সে বাসার বড়দের কে দেখে সালাম/আদাব দেওয়া শিখে। এসময় সে প্রচুর কথা বলে এবং একা একাই খেলতে থাকে। কখনো কখনো সে ঈর্ষান্বিত হয় আবার হতাশ হয়ে যায়। এছাড়াও সে আমার, তোমার, তার এই শব্দগুলোর ব্যবহার শিখে। আপনার সন্তান তার নিয়মিত রুটিন মেনে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং তার রুটিনে কোন বড় পরিবর্তন হলে সে তা মেনে নিতে পারে না এবং খুবই আপসেট হয়ে পড়ে। সে তার বন্ধুদের কে বিষন্ন দেখলে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ না করে।

? আপনার থেকে দূরে থাকার ভয় তার মধ্যে যদি অতিরিক্ত ভাবে কাজ করে।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

এই বয়সে আপনার সন্তান পাঁচটি শব্দের বাক্য গঠন করতে পারে। তার শব্দ ভান্ডারে প্রায় ৮০০-৯০০ বা তার বেশি শব্দ যুক্ত হয়। সে কিছু কিছু বর্ণ চিহ্নিত করতে পারে। দুই থেকে তিনটি নির্দেশনার যুক্ত কমান্ড মেনে চলতে পারে। সামনে-পেছনে, উপরে নিচে এই ধরনের প্রিপজিশন গুলোর ব্যবহার শিখে। সে তার নাম, বয়স এবং লিঙ্গ কি তা বলতে পারে। কিছু কিছু বর্ণের উচ্চারণ এখনও পুরোপুরি না পারলেও তার বলা কথাগুলো অপরিচিত অনেকেই ভালোভাবে বুঝতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি পরিস্কারভাবে কথা বলতে না পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

৩৮ মাস বয়সী শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।

  • সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
  • দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
  • বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
  • রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

খেলাধুলার সময় শিশুর প্রতি বিশেষ নজর রাখুন যেন সে পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়। সাইকেল চালানোর সময় তাকে হেলমেট, কনুই এবং হাঁটুর প্যাড পরিয়ে দিন।আপনার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি কঠোর হবেন না। তাকে সরাসরি কোন কাজে না করা ঠিক হবে না। সে যদি কথা না শোনে তাহলে তাকে বকাঝকা না দিয়ে শাস্তি হিসেবে তার একটি পছন্দের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন। এই বয়সে অপরিচিত মানুষ, বিভিন্ন পোকামাকড় এবং পশু পাখি, অন্ধকার ইত্যাদির দেখে ভয় পেতে পারে। সে ভয় পেলে তাকে আদর করে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তার অতিরিক্ত দুরন্তপনার কারণে যদি আপনি ধৈর্য হারা হয়ে যান তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং শিশুদের গায়ে হাত তোলা কিংবা বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খেলাধুলার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। ঘরের ভিতরে সীমাবদ্ধ না রেখে তাকে বাহিরেও খেলতে নিয়ে যান। কাদামাটি ,বালু, ঘাস, পানি ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিস নিয়ে তাকে খেলতে দিন। শিশুদেরকে এই বয়স থেকেই নির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মের মধ্যে দিয়ে না গেলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অন্যায় আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশু যেন আপনার আদেশ পালন করে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন। সে যদি বারবার আপনার কথাগুলো মেনে না চলে তাহলে তার চোখের দিকে চোখ রেখে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিন এবং তাকে দিয়ে কাঙ্খিত কাজটি করিয়ে নিন। আপনি যদি তাকে তার খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখতে বলেন তাহলে সেই কাজটি তাকে করতে দিন। সে যদি ঠিকমতো নাও করতে পারে তবুও আপনি তাকে কাজটি করে দিবেন না। তাহলে তার মধ্যে এমন ধারণার জন্মাতে পারে যে আপনি সবসময়ই তার কাজ গুলি করে দিবেন এবং ভবিষ্যতে সে কাজটি নাও করতে পারে। এই বয়সে সে সবসময় আপনার প্রশংসা কামনা করে। তাই তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময়ে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করুন। তবে তার অন্যায় কাজগুলো কে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। আপনার সন্তান ছোট , বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এই ধরনের চিন্তা থেকে তার অন্যায় কাজগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দিবেন না। কেননা শিশুরা সেগুলোই শেখে যা তারা ছোটবেলা থেকে শিখে আসছে। যে কাজের কোনো বিকল্প নেই সেখানে তাকে কোনো সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। বাচ্চাকে সরাসরি কোন কাজের কমান্ড না দিয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে বেঁধে দিতে পারেন। যেমন ‘এখন ঘুমাতে যাও’ কথাটি না বলে আপনি বলতে পারেন ‘আর দশ মিনিটের মধ্যে যেন আমি দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ’। সে যদি জিদ করে তাহলে তাহলে সব সময় তা প্রশ্রয় না দিয়ে কিছু কিছু সময় এড়িয়ে যান। এমনকি দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে পারেন। শিশুরা এই বয়সে যদি  অতিরিক্ত মনোযোগ পেয়ে যায় তাহলে তারা একগুঁয়ে আচরণ করতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.