সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ নতুন নতুন শব্দ অত্যন্ত দ্রুত শিখে।
✅ ঘরের কাজে সাহায্য করতে পারে।
✅ গোসলের সময় অনেকটাই সহযোগিতা করে।
✅ অল্প উচ্চতা থেকে ছোট করে লাফ দিতে পারে।
? উচ্চতাঃ ৯৬.০-৯৭.২ সে.মি
? ওজনঃ ১৪.৪-১৪.৮ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
এই বয়সে সন্তান প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে থাকে। এখন সে দেখে দেখে সাধারণ আকৃতি গুলো আঁকতে পারে। এছাড়াও ড্রয়িং খাতায় ভিন্ন ভিন্ন রঙের ব্যবহার করে। সে বাইরের জগত থেকে নানারকম শিক্ষা লাভ করে। বিভিন্ন পশু পাখির নাম চিনতে শিখে এবং তারা কিভাবে ডাকে সেটি পর্যবেক্ষণ করে। এই বয়সে শিশুরা তার বাবা-মায়ের কাছে অন্য বাচ্চাদের দেখলে ঈর্ষা পরায়ন আচরণ করে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন আত্মবিশ্বাসের সাথে হাঁটতে,দৌড়াতে এবং লাফাতে পারে। সে তার এক পায়ে ভর দিয়ে ভারসাম্য রেখে দাঁড়াতে পারে। সে এখন অতি দ্রুততার সাথে দুই পায়ের ব্যবহার করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে পারে। এছাড়াও নিজে নিজে হাত ধোয়া এবং নিজের জামাকাপড় পরার কাজটিও নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করে যদিও বোতাম এবং জুতার ফিতা লাগাতে সে এখনো কিছুটা সমস্যায় পড়ে। কলম কিংবা রং পেন্সিল দিয়ে দেখে দেখে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ এবং বড় হাতের কয়েকটি অক্ষর লিখতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান তার আংগুলের মধ্যে রং পেন্সিল ধরতে না পারে।
? সে যদি ঠিকভাবে দৌড়াতে না পারে, অল্প উঁচু থেকে লাফ দিতে না পারে কিংবা মাথা দিয়ে বল ছুড়ে দিতে না পারে।
? খাতার মধ্যে হাবিজাবি লেখা এবং দেখে দেখে গোল দাগ কাটতে যদি তার অসুবিধা হয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন আপনার ফোনের কিবোর্ডের কিছু নাম্বার চিনতে পারে। কিছু কিছু জিনিসের নির্দিষ্ট রং কি হবে সে সেটি আয়ত্ত করে ফেলে যেমন আপেলের রং লাল, আঙ্গুরের রং সবুজ ইত্যাদি। সে ৩টি থেকে ১০টি জিনিস পর্যন্ত গুনতে পারে। এছাড়াও সে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা করতে পারে। তার গল্পের বই থেকে কিছু কিছু অংশ মনে করে তার খেলার সময় সেগুলো নিজের মত করে বলে । এখন সে টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হলে নিজের মুখেই বলতে পারে। কোন কোন সময় অবশ্য দুর্ঘটনাবশত সে বিছানা ভিজিয়ে ফেলতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি সাধারন নির্দেশনা বুঝে কাজ করতে না পারে।
? সে যদি সাধারন পাজল মিলাতে না পারে।
? প্রাথমিক কিছু রং চিনতে না শিখে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
এই বয়সে শিশুরা আরো বেশি স্বাধীনভাবে খেলাধুলা করে। তাকে এখন প্রি স্কুলে দেওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ এই বয়স থেকেই সে তার বন্ধুদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে খেলাধুলা করে। সেইসাথে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে থাকে। সে তার পছন্দমত বন্ধু বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও পারদর্শী হয়। এছাড়া সে যে কোন পরিস্থিতি বুঝতে শেখে এবং সে অনুযায়ী আচরণ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? রাগ হলে সে যদি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
? আপনি তার সামনে থেকে সামান্য দূরে গেলে সে যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন ৫ থেকে ৬ টি শব্দের একটি বাক্য বলতে পারে এবং আপনার সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে।তার কথাগুলো এখন বেশ স্পষ্ট এবং বাইরের মানুষজন তা বুঝতে পারে। সে কিছু কিছু বর্ণ চিহ্নিত করতে পারে। দুই থেকে তিনটি নির্দেশনার যুক্ত কমান্ড মেনে চলতে পারে। সামনে-পেছনে, উপরে নিচে এই ধরনের প্রিপজিশন গুলোর ব্যবহার শিখে। সে তার নাম, বয়স এবং লিঙ্গ কি তা বলতে পারে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
এই বয়সে শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ৩৯ মাস বয়সী শিশুর খাদ্যে ১৫১০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
শিশুরা খেলার সময় বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মেলামেশা করে। এই সময় তাদের প্রতি খেয়াল রাখুন যে সে নেতিবাচক বা বিপদ্গামি কিছু শিখছে কিনা। বিশেষ করে ভাষাগত ভাবে সে অত্যন্ত দ্রুত শব্দ আয়ত্ত করে ফেলে। তাই সে কি ধরনের ভাষা শিখছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। খেলাধুলার সময় শিশুর প্রতি বিশেষ নজর রাখুন যেন সে পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়। সাইকেল চালানোর সময় তাকে হেলমেট, কনুই এবং হাঁটুর প্যাড পরিয়ে দিন।আপনার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি কঠোর হবেন না। তাকে সরাসরি কোন কাজে না করা ঠিক হবে না। সে যদি কথা না শোনে তাহলে তাকে বকাঝকা না দিয়ে শাস্তি হিসেবে তার একটি পছন্দের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন। এই বয়সে অপরিচিত মানুষ, বিভিন্ন পোকামাকড় এবং পশু পাখি, অন্ধকার ইত্যাদির দেখে ভয় পেতে পারে। সে ভয় পেলে তাকে আদর করে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তারক অতিরিক্ত দুরন্তপনার কারণে যদি আপনি ধৈর্য হারা হয়ে যান তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং শিশুদের গায়ে হাত তোলা কিংবা বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খেলাধুলার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। ঘরের ভিতরে সীমাবদ্ধ না থেকে তাকে বাহিরেও খেলতে নিয়ে যান। কাদামাটি ,বালু, ঘাস, পানি ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিস নিয়ে তাকে খেলতে দিন। শিশুদেরকে এই বয়স থেকেই নির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মের মধ্যে দিয়ে না গেলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অন্যায় আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশু যেন আপনার আদেশ পালন করে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন। সে যদি বারবার আপনার কথাগুলো মেনে না চলে তাহলে তার চোখের দিকে চোখ রেখে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিন এবং তাকে দিয়ে কাঙ্খিত কাজটি করিয়ে নিন। আপনি যদি তাকে তার খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখতে বলেন তাহলে সেই কাজটি তাকে করতে দিন। সে যদি ঠিকমতো নাও করতে পারে তবুও আপনি তাকে কাজটি করে দিবেন না। তাহলে তার মধ্যে এমন ধারণার জন্মাতে পারে যে আপনি সবসময়ই তার কাজ গুলি করে দিবেন এবং ভবিষ্যতে সে নিজের কাজ নাও করতে পারে। এই বয়সে সে সবসময় আপনার প্রশংসা কামনা করে। তাই তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময়ে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করুন। তবে তার অন্যায় কাজগুলো কে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। আপনার সন্তান ছোট , বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এই ধরনের চিন্তা থেকে তার অন্যায় কাজগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দিবেন না। কেননা শিশুরা সেগুলোই শেখে যা তারা ছোটবেলা থেকে শিখে আসছে। যে কাজের কোনো বিকল্প নেই সেখানে তাকে কোনো সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। বাচ্চাকে সরাসরি কোন কাজের কমান্ড না দিয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে বেঁধে দিতে পারেন। যেমন ‘এখন ঘুমাতে যাও’ কথাটি না বলে আপনি বলতে পারেন ‘আর দশ মিনিটের মধ্যে যেন আমি দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ’। সে যদি জিদ করে তাহলে তাহলে সব সময় তা প্রশ্রয় না দিয়ে কিছু কিছু সময় এড়িয়ে যান। এমনকি দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে পারেন। শিশুরা এই বয়সে যদি অতিরিক্ত মনোযোগ পেয়ে যায় তাহলে তারা একগুঁয়ে আচরণ করতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।