সাধারন বিষয় গুলোঃ
- চলতে চলতে মোড় নেয়, জিনিস ভাগাভাগি করে এবং কাজে সহযোগিতা করে।
- বাবা মায়ের সাথে খেলাধুলায় ঘনিষ্ঠ হয়।
- কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে।
- সংখ্যার সাথে পরিমাপ কিভাবে সম্পর্কিত তা বুঝতে পারে।
উচ্চতাঃ ৯৬.৫-৯৭.৮ সে.মি
ওজনঃ ১৪.৬-১৫.০ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন সিকোয়েন্স অনুযায়ী কাজ করতে শিখে। অর্থাৎ তাকে যদি বলা হয় ‘আগে খাওয়া শেষ করে পরে খেলতে যাবে’ তাহলে সে আপনার কথা মত আগের কাজটি আগে এবং পরের কাজটি পরে করবে। এখন নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে থাকে। তার বই থেকে কিংবা নার্সারি রাইমস দেখেও সে অতি দ্রুত নতুন নতুন শব্দ শিখে ফেলে। এই বয়সে তাকে প্রি প্লে স্কুলে দিলে সে খেলার ছলে অনেক কিছু শিখতে পারবে। সেইসাথে বন্ধুদের সাথে কিভাবে সম্মিলিতভাবে একসাথে থাকতে হয় সে বিষয়টিও বুঝতে পারবে।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তান স্বাচ্ছন্দে সামনে এগিয়ে যেতে এবং পেছন ফিরে আসতে পারে। সে পড়ে না গিয়ে একপায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে, দৌড়াতে এবং বাঁক নিতে পারে। কোনরকম সাহায্য ছাড়াই সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারে এবং নিচে নামতে পারে। সে এখন হাতে সঠিকভাবে রং পেন্সিল ধরতে শিখে এবং দেখে দেখে বিভিন্ন সেইপ ও অক্ষর খাতায় আঁকতে পারে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান স্বাধীনভাবে দৌড়াতে, লাফাতে কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠা নামা করতে না পারে।
- সে যদি অল্প উচ্চতায় উপর থেকে নিচে লাফ দিতে না পারে এবং মাথা দিয়ে বল ছুড়ে দিতে না পারে।
- কোন জিনিস ঠিকভাবে ধরতে কিংবা ছোট কোন বস্তু আংগুল দিয়ে হাতের মধ্যে নিতে যদি অসুবিধা বোধ করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
এই বয়সে আপনার সন্তানের মধ্যে সময় সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়। এছাড়াও সে একই রকম এবং বিপরীত ধর্মী জিনিস গুলো চিহ্নিত করতে পারে। আপনার সন্তান এখন গণনা করতে পারে এবং বিভিন্ন রং এর নাম বলতে পারে। সে তার গল্পের বইয়ের গল্প গুলো মনে করে আপনাকে শোনাবে অথবা তার খেলার সময় নিজে নিজেই বলতে থাকে। এছাড়াও আপনার থেকে গল্পের বইয়ের শিরোনাম শুনে নির্দিষ্ট বইটি আপনাকে এনে দিতে পাদিস
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি আপনার সন্তান একেবারেই গণনা করতে না পারে।
- সে যদি সাধারন জিনিসগুলো চিনতে না পারে।
- কোন কিছুর প্রতি সে যদি কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার শিশু সন্তান এখন আরো বেশি স্বতন্ত্র এবং সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করে। সে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখে। সে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিলিতভাবে খেলাধুলা করে এবং একজনের পর আরেকজনের টার্ন এই বিষয়টি বুঝতে শিখে। আপনার সন্তান এখন মজা করে বড়দের আচরণ নকল করে । সে তার পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য পরিচিতদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে।
চিন্তার বিষয়ঃ
- যদি তার মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের ঘাটতি থাকে।
- আপনি তার সামনে থেকে সামান্য দূরে গেলেও সে যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
- খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী না হয় এবং অন্যান্যদের দেখে যদি সে হিংসাত্মক আচরণ করে।
ভাষাগত পরিবর্তন উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন প্রতিদিনই তার শব্দ ভান্ডারে নতুন নতুন শব্দ যোগ করতে থাকে। সে তার নাম বলতে পারে এবং সারাদিনে কি কি কাজ করেছে সেগুলি বিস্তারিত বলতে পারে। সে আপনার কথা শুনতে অভ্যস্ত হয় এবং সাধারণ নির্দেশনাগুলো মেনে চলে। স্পষ্ট ভাবে কথা বলে এবং অপরিচিতদের সাথেও বাক্য বিনিময়ে পারদর্শী হয়ে ওঠে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
৪০ মাস বয়সী শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫১৯ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
- সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
- দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
- বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
- রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
শিশুরা খেলার সময় বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মেলামেশা করে। এই সময় তাদের প্রতি খেয়াল রাখুন যে সে নেতিবাচক বা বিপদ্গামি কিছু শিখছে কিনা। বিশেষ করে ভাষাগত ভাবে সে অত্যন্ত দ্রুত শব্দ আয়ত্ত করে ফেলে। তাই সে কি ধরনের ভাষা শিখছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। খেলাধুলার সময় শিশুর প্রতি বিশেষ নজর রাখুন যেন সে পড়ে গিয়ে ব্যথা না পায়। সাইকেল চালানোর সময় থাকে হেলমেট, কনুই এবং হাঁটুর প্যাড পরিয়ে দিন।আপনার সন্তানকে সাধারণ শিক্ষাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি কঠোর হবেন না। তাকে সরাসরি কোন কাজে না করা ঠিক হবে না। সে যদি কথা না শোনে তাহলে তাকে বকাঝকা না দিয়ে শাস্তি হিসেবে তার একটি পছন্দের কাজ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন। এই বয়সে অপরিচিত মানুষ, বিভিন্ন পোকামাকড় এবং পশু পাখি, অন্ধকার ইত্যাদির দেখে ভয় পেতে পারে। সে ভয় পেলে তাকে আদর করে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করুন। তারক অতিরিক্ত দুরন্তপনার কারণে যদি আপনি ধৈর্য হারা হয়ে যান তাহলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং শিশুদের গায়ে হাত তোলা কিংবা বকাঝকা করা থেকে বিরত থাকুন।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খেলাধুলার মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। ঘরের ভিতরে সীমাবদ্ধ না থেকে তাকে বাহিরেও খেলতে নিয়ে যান। কাদামাটি ,বালু, ঘাস, পানি ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিস নিয়ে তাকে খেলতে দিন। শিশুদেরকে এই বয়স থেকেই নির্দিষ্ট নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়মের মধ্যে দিয়ে না গেলে শিশুর মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অন্যায় আচরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। শিশু যেন আপনার আদেশ পালন করে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন। সে যদি বারবার আপনার কথাগুলো মেনে না চলে তাহলে তার চোখের দিকে চোখ রেখে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দিন এবং তাকে দিয়ে কাঙ্খিত কাজটি করিয়ে নিন। আপনি যদি তাকে তার খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখতে বলেন তাহলে সেই কাজটি তাকে করতে দিন। সে যদি ঠিকমতো নাও করতে পারে তবুও আপনি তাকে কাজটি করে দিবেন না। তাহলে তার মধ্যে এমন ধারণার জন্মাতে পারে যে আপনি সবসময়ই তার কাজ গুলি করে দিবেন এবং ভবিষ্যতে সে কাজটি নাও করতে পারে। এই বয়সে সে সবসময় আপনার প্রশংসা কামনা করে। তাই তার প্রত্যেকটি কাজের বিনিময়ে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করুন। তবে তার অন্যায় কাজগুলো কে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। আপনার সন্তান ছোট , বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এই ধরনের চিন্তা থেকে তার অন্যায় কাজগুলোকে কখনোই প্রশ্রয় দিবেন না। কেননা শিশুরা সেগুলোই শেখে যা তারা ছোটবেলা থেকে শিখে আসছে। যে কাজের কোনো বিকল্প নেই সেখানে তাকে কোনো সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। বাচ্চাকে সরাসরি কোন কাজের কমান্ড না দিয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে বেঁধে দিতে পারেন। যেমন ‘এখন ঘুমাতে যাও’ কথাটি না বলে আপনি বলতে পারেন ‘আর দশ মিনিটের মধ্যে যেন আমি দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ’। সে যদি জিদ করে তাহলে তাহলে সব সময় তা প্রশ্রয় না দিয়ে কিছু কিছু সময় এড়িয়ে যান। এমনকি দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে পারেন। শিশুরা এই বয়সে যদি অতিরিক্ত মনোযোগ পেয়ে যায় তাহলে তারা একগুঁয়ে আচরণ করতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।