৪১ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।

✅ ৯০০টিরও অধিক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে।

✅ উপর, নিচ, ভিতর, বাহির ইত্যাদি প্রিপজিশন গুলোর অর্থ বুঝতে শিখে।

✅ কাল্পনিক চরিত্র গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে খেলা করে।

✅ সংখ্যার সাথে শব্দের মিলের ধারণা তৈরি হয়। যেমন পাঁচ অর্থ যে পাঁচটি বস্তু সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।

? উচ্চতাঃ ৯৭.১-৯৮.৪ সে.মি

? ওজনঃ ১৪.৭-১৫.২ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এই বয়সে তার গল্পের বই থেকে অনেক কিছু মনে করে আপনাকে শোনাবে কেননা তার স্মৃতিশক্তি এখন আগের থেকে আরো বেশি উন্নত হতে থাকে। এছাড়াও সে একই এবং ভিন্ন রকম বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে। এই সময় স্ক্রিনের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। সে মোবাইল, ট্যাব কিংবা টিভিতে তার প্রিয় কার্টুনগুলো দেখার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তার স্ক্রীন টাইম এর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া উচিত এবং সেটি যেন কখনোই খুব বেশি সময় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এই বয়সে শিশুরা তার বাবা-মায়ের চলাফেরা এবং কাজকর্ম অনুকরণ করতে খুব ভালোবাসে। সে বাসার বড়দের জুতা পড়ে সারা ঘর ঘুরে বেড়ানোতে খুবই আনন্দ পায়।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন এক পায়ে সিঁড়িতে ওঠানামা করতে পারে। সে সহজেই সামনে-পিছে হাঁটতে পারে, এমনকি কষ্টসাধ্য জায়গাগুলোতেও সে বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে যেতে পারে। পা দিয়ে বলে লাথি মারা, হাত দিয়ে ক্যাচ ধরা এবং বল ছুড়ে দেওয়ায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পাঁচ সেকেন্ডের জন্য সে এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে কিংবা লাফিয়ে সামনে এগোতে পারে। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ট্রাইসাইকেল চালিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। আপনার সন্তান এখন পড়ে না গিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকতে পারে। তার হাত এবং আঙ্গুলের মধ্যে সমন্বয়ের উন্নতি ঘটে। বোতলের মুখ খোলা এবং লাগানো, শার্টের বোতাম খোলা, নব ঘোরানো ইত্যাদি কাজ গুলো সে নিজ হাতেই করতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান স্বাধীনভাবে দৌড়াতে, লাফাতে কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠা নামা করতে না পারে।

? সে যদি অল্প উপর থেকে নিচে লাফ দিতে না পারে এবং মাথা দিয়ে বল ছুড়ে দিতে না পারে।

? কোন জিনিস ঠিকভাবে ধরতে কিংবা ছোট কোন বস্তু আংগুল দিয়ে হাতের মধ্যে নিতে যদি  অসুবিধা বোধ করে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

এই বয়সে বাচ্চারা সংখ্যা চিনতে শিখে এবং সেগুলো অক্ষর থেকে আলাদা করতে পারে। তার স্মরণশক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সে আগের দিনের কাহিনী মনে করে আপনাকে শোনাতে পারে কিংবা তাঁর গল্পের বইয়ের কোন গল্প বলে শোনাতে পারে। একই রকম এবং বিভিন্ন জিনিসের পার্থক্য করতে শিখে। এছাড়াও কিছু কিছু জিনিসের নাম বলতে পারে এবং আলাদা করে দেখাতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান সাধারণ নির্দেশনা অনুসরণ করতে না পারে।

? যদি সে একেবারেই গণনা করতে না পারে।

? যদি সাধারন জিনিসগুলো চিনতে না পারে।

? কোন কিছুর প্রতি সে যদি কোনো আগ্রহ প্রকাশ না করে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

এই বয়সের শিশুদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সে নিজেকে আরও বেশি মেলে ধরতে চায়। লজ্জা পাওয়ার প্রবণতা কমে সে অন্যদের সাথে কথা বলে এবং খেলাধুলা করে। সে তার আবেগগুলি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে শিখে। বিশেষ করে যখন তার কোন কিছু খারাপ লাগে সে মুখে প্রকাশ করে আবার অন্যকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময়ও সে আগ্রহী হয়ে তার কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেয়।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি তার সমবয়সীদের সাথে মিশতে না চায়।

? সে যদি তার বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত রূঢ় আচরণ করে।

ভাষাগত পরিবর্তনও ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন ২৫০-৩০০ টি কিংবা তারও অধিক শব্দ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারে। সে তিনটি থেকে চারটি শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করে এবং একটির পর আরেকটি বাক্য বলে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি সে একটি পুরো গল্পও আপনাকে বলে শোনাতে পারে। সে এখন সর্বনাম এর সঠিক ব্যবহার শিখে। বাক্যের মধ্যে সে সঠিকভাবে আমি, তুমি, তারা, সে ইত্যাদি সর্বনামগুলো ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও নিজের নাম এবং বয়স বলতে খুব পছন্দ করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি এখনও ব্যাকরণগত কাঠামো অনুযায়ী কথা বলতে না পারে।

? সে যদি তার নাম বলতে না পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

৪১ মাসের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫২৭ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।

সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।

দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।

বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।

রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে। আবার বিকেল ৫টায় নাশতা দিয়ে রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করবেন। চাইলে ঘুমের আগে হাল্কা কিছু দিতে পারেন আবার না দিলেও চলে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার সন্তান যেহেতু এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। সে এখনো নিজের নিজের সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।অভিভাবক হিসাবে আপনার উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবে তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণিকে‌ নিয়মিত বাহিরে খেলতে নিয়ে যান এবং আপনিও তার সাথে খেলাধুলায় নিযুক্ত হন। তাকে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিন। ঘরের ভিতরে খেলার জন্য তাকে এমন সব খেলনা দিন যেগুলি দিয়ে খেলতে কিছুটা মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। তাকে নিয়ে লুকোচুরি খেলতে পারেন যা তার মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া তাঁর খেলনার মধ্যে স্যান্ডবক্স যুক্ত করতে পারেন কিংবা একটি ছোট পুল তৈরি করে দিতে পারেন। তাকে চক ও বোর্ড এনে দিন এবং প্রতিদিন সেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু আঁকতে উৎসাহ দিন। খেলার ছলে তাকে পাজল, সংখ্যা এবং অক্ষর মিলানোতে সাহায্য করুন। যখনই সম্ভব হবে তার সামনে কোন কিছু জোরে জোরে গণনা করুন যেন সে গুনতে শিখে। এছাড়াও তাকে নিয়মিত বই পড়ে শোনান এবং এমন সব বই এনে দিন যার গল্পগুলো সাধারণ কিন্তু রঙিন এবং বড় বড় ছবিতে পরিপূর্ণ। তাকে সাধারণ নির্দেশনা গুলো মেনে চলায় অভ্যস্ত করুন। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি তাকে উৎসাহ দান করুন। এইসময় প্রি-স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত বয়স।  প্রি-স্কুলে দেওয়ার আগে যদি সম্ভব হয় তাহলে যেসব বাচ্চারা ইতিমধ্যে স্কুলে যায় তাদের সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে তাদেরকে দেখে স্কুলে যাওয়ার জন্য আপনার সন্তানের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হবে। তবে প্রি-স্কুল এ দেওয়ার আগে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা জরুরী। আপনি আপনার সন্তানকে বোঝাতে পারেন যে স্কুল একটি মজার জায়গা এবং সেখানে গেলে অনেক মজার মজার খেলনা এবং বন্ধু পাবে। কিছু সময়ের জন্য মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হবে কিন্তু এই সময়ে তুমি আরো অনেক মজা করতে পারবে। এভাবে আস্তে আস্তে তাকে মানসিকভাবে অভ্যস্ত করে তুলুন যেন তার মধ্যে অতিরিক্ত ভয় থাকলে তা দূর হয়ে যায়।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.