৪২ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ খেলার মাঠের উপকরণ যেমন স্লাইডার, দোলনা, বেয়ে উপরে উঠার মই ইত্যাদি দিয়ে খেলতে পারে।

✅ নিত্যদিনের কাজ গুলি নিজেই করতে পারে।

✅ স্বাছন্দময় এবং কল্পিত উভয় ভাবেই তার শরীরকে নড়াচড়া করাতে পারে।

✅ উপরে-নিচে, সামনে-পেছনে, আশপাশে ইত্যাদি স্থানভিত্তিক বিষয়গুলোতে তার ধারণা আরও বেশি স্পষ্ট হয়।

? উচ্চতাঃ ৯৭.৭-৯৯.০ সে.মি

? ওজনঃ ১৪.৯-১৫.৩ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণি এখন বেশ ভালোভাবেই চামচ ব্যবহার করে খাবার খেতে পারে। সে বিভিন্ন জিনিসের পরিমাপ সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে শুরু করে। যেমন সে কতটুকু লম্বা, গ্লাসে কি পরিমাণ পানি আছে এরকম আরো অনেক বিষয় নিয়ে তার আগ্রহ তৈরি হয়। এছাড়াও বিপরীত ধর্মী জিনিসগুলো সম্বন্ধেও সে ধারণা পেতে শুরু করে। সময় সম্পর্কে তার মধ্যে ধারনা তৈরি হয় যেমন গতকাল কি হয়েছিল সেটি সে মনে রাখতে পারে। 

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান দৌড়ানো, লাফানো, গড়াগড়ি করা, নাচ করা,এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা, কোন কিছু বেয়ে উপরে উঠা এরকম আরো অনেক কাজেই ইতিমধ্যে মাস্টার হয়ে ওঠে। বিপরীত দুই পায়েরই ব্যবহার করে সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারে। দুই হাত দিয়ে সে বল ছুঁড়ে মারে আবার ক্যাচ ধরতে পারে। নিজে নিজে শার্টের বোতাম খোলা, একটির পর একটি ব্লক সাজানো এবং পাজল মিলানো এই ধরনের কাজগুলো বেশ দক্ষতার সাথেই করে থাকে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যদি তার কাছে অতিরিক্ত কঠিন মনে হয়।

? দুইহাতে সে যদি বল কিংবা রংপেন্সিল ধরতে না পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন সংখ্যা গুলো চিনতে শিখে এবং সেগুলোকে বর্ণমালা থেকে আলাদা করতে পারে। বিভিন্ন জিনিসের নাম সে সঠিকভাবে বলতে পারে। কোন কিছু কিভাবে ছোট থেকে বড় হয় সে সম্বন্ধে অল্প পরিসরে ধারণা লাভ করে। যেমন বীজ থেকে কেমন করে চারা বের হয়ে ফুল ফল ধরে সেটি সে পর্যবেক্ষণ করে। সে এখন ৭/৮টি জিনিস গুনতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি এখনও ভালোভাবে কথা বলতে না পারে।

? পরিচিত জিনিস গুলো সম্পর্কে যদি সে এখনো কোন ধারণা লাভ করতে না পারে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

লজ্জা কমে গিয়ে আপনার সন্তান অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে শুরু করে।  সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তাদের উপযোগী একই ধরনের বিষয় নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। সে তার জিনিস ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। এখন তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা পছন্দ করলেও মাঝেমধ্যে নিজের সাথে সময় কাটাতেও ভালোবাসে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি আপনাকে অতিরিক্ত আঁকড়ে ধরে রাখে এবং আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে।

? তার জেদ করার কারণে যদি তার প্রতিদিনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান সহজেই বিভিন্ন শব্দ আয়ত্ত করে ফেলে এবং তাদেরকে একত্রিত করে বাক্য গঠন করে । এভাবে তার শব্দের ভান্ডার বিশাল আকার ধারণ করতে শুরু করে। তার কথা বলার মধ্যে ব্যাকরণগত কাঠামো গুলো গড়ে উঠতে শুরু করে। সে এখন এলোমেলোভাবে বাক্য না বলে বরং নির্ধারিত নিয়ম মেনেই কথা বলা শুরু করে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি এখনও ব্যাকরণগত কাঠামো অনুযায়ী কথা বলতে না পারে।

? সে যদি তার নাম বলতে না পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

৪২ মাসের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫৩২ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।

  • সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
  • দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
  • বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
  • রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে। আবার বিকেল ৫টায় নাশতা দিয়ে রাত ৮টার  মধ্যে রাতের খাবার শেষ করবেন। চাইলে ঘুমের আগে হাল্কা কিছু দিতে পারেন আবার না দিলেও চলে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার সন্তানের উপর এখন সব সময় নজর রাখুন। যেহেতু সে এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। সে এখনো নিজের নিজের সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।অভিভাবক হিসাবে আপনার উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবে তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে। 

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণিকে‌ নিয়মিত বাহিরে খেলতে নিয়ে যান এবং আপনিও তার সাথে খেলাধুলায় নিযুক্ত হন। তাকে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিন। ঘরের ভিতরে খেলার জন্য তাকে এমন সব খেলনা দিন যেগুলি দিয়ে খেলতে কিছুটা মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। তাকে নিয়ে লুকোচুরি খেলতে পারেন যা তার মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া তাঁর খেলনার মধ্যে স্যান্ডবক্স যুক্ত করতে পারেন কিংবা একটি ছোট পুল তৈরি করে দিতে পারেন। তাকে চক ও বোর্ড এনে দিন এবং প্রতিদিন সেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু আঁকতে উৎসাহ দিন। খেলার ছলে তাকে পাজল, সংখ্যা এবং অক্ষর মিলানোতে সাহায্য করুন। যখনই সম্ভব হবে তার সামনে কোন কিছু জোরে জোরে গণনা করুন যেন সে গুনতে শিখে। এছাড়াও তাকে নিয়মিত বই পড়ে শোনান এবং এমন সব বই এনে দিন যার গল্পগুলো সাধারণ কিন্তু রঙিন এবং বড় বড় ছবিতে পরিপূর্ণ। তাকে সাধারণ নির্দেশনা গুলো মেনে চলায় অভ্যস্ত করুন। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি তাকে উৎসাহ দান করুন। এইসময় প্রি-স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত বয়স।  প্রি-স্কুলে দেওয়ার আগে যদি সম্ভব হয় তাহলে যেসব বাচ্চারা অলরেডি স্কুলে যায় তাদের সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে তাদেরকে দেখে স্কুলে যাওয়ার জন্য আপনার সন্তানের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হবে। তবে প্রি-স্কুল এ দেওয়ার আগে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা জরুরী। আপনি আপনার সন্তানকে বোঝাতে পারেন যে স্কুল একটি মজার জায়গা এবং সেখানে গেলে অনেক মজার মজার খেলনা এবং বন্ধু পাবে। কিছু সময়ের জন্য মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হবে কিন্তু এই সময়ে তুমি আরো অনেক মজা করতে পারবে। এভাবে আস্তে আস্তে তাকে মানসিকভাবে অভ্যস্ত করে তুলুন যেন তার মধ্যে অতিরিক্ত ভয় থাকলে তা দূর হয়ে যায়।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.