৪৩ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ কোনরকম সাহায্য ছাড়াই সিঁড়ি দিয়ে একা একা উঠানামা করতে পারে।

✅ হাতের বুড়ো আঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে পেন্সিল ধরতে পারে।

✅ বোতাম লাগাতে পারে।

✅ নিজে নিজে জুতা পরে তবে এখনো জুতার ফিতা বাঁধতে পারেনা।

? উচ্চতাঃ ৯৮.২-৯৯.৬ সে.মি

? ওজনঃ ১৫.০-১৫.৫ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

আপনার ছোট্ট সোনামণিটি এখন স্কুলে তার একান্ত প্রিয় কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয়। যখন সে দেখে তার বন্ধুর সাথে তার জামা-কাপড়, জুতা, রংপেন্সিল ইত্যাদি মিলে যায় সে খুশীতে পুলকিত হয়ে ওঠে। সে তার বুড়ো আংগুল এবং তর্জনীর মধ্যে পেন্সিল ধরতে সক্ষম। প্রি-স্কুলে যাওয়ার কারণে সে রং করাতেও বেশ পটু হয়ে যায়। 

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন কারো সাহায্য ছাড়া এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে একা একা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারে। দৌড়ানো, লাফানো, গড়াগড়ি করা, নাচ করা,এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা, কোন কিছু বেয়ে উপরে উঠা এরকম আরো অনেক কাজে মাস্টার হয়ে ওঠে। দুই হাত দিয়ে সে বল ছুঁড়ে মারে আবার ক্যাচ ধরতে পারে। সে নিজে নিজে শার্টের বোতাম খুলতে পারে, একটির পর একটি ব্লক সাজাতে পারে এবং পাজল মিলাতে পারে। সে এখন আপনাকে নকল করে একই রকম রং ব্যবহার করা, সেইপ মেলানো কিংবা অন্য কোন কাজ হুবহু একই ভাবে করতে পারে। সে বিভিন্ন আকারের কাগজ কাটতে পারে এবং সেগুলি আঠা দিয়ে অন্য কোথাও বসাতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান ঠিকমতো রং পেন্সিল ধরতে না পারে।

? যদি সে সিঁড়ি দিয়ে একা একা উঠানামা করতে না পারে।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

এই বয়সের শিশুরা তাদের পরিচিত রংগুলোর নাম একদম সঠিক ভাবে বলতে পারে। একই ধরনের এবং ভিন্ন রকমের জিনিস সম্বন্ধে তার ধারণা স্পষ্ট হয়। তার মধ্যে আজ এবং গতকাল কিংবা আগামীকাল এই সব সময় সম্বন্ধে ধারণা জন্মায়। সে অত্যন্ত সৃজনশীলভাবে তার কল্পনা ভিত্তিক খেলাধুলা করে। সে তার গল্পের বইয়ের অনেকগুলো গল্প এবং টিভিতে দেখা বিভিন্ন জিনিস মনে রাখতে পারে। সাধারণ সংখ্যা গণনা করতে এবং পাজল মিলাতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর টেক্সচার সম্পর্কে তার জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সে এখন নিজের পছন্দমত তার জামা-কাপড় কিংবা জুতা পরতে চায়। এছাড়া আপনার সন্তান এখন কোনো কাজে বেশ কিছুক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি সে কোন কাজে একেবারেই মনোযোগ রাখতে না পারে।

? যদি সে অনেক অল্প প্রশ্ন করে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এই বয়সে নিজের সাথে কথা বলে এবং নিজে নিজে কল্পনাপ্রবণ হয়ে খেলাধুলা করে। অন্যরা তার সম্বন্ধে কি ভাবছে সে বিষয়টি তার মধ্যে প্রভাব ফেলে। সে এখন গ্রুপে খেলাধুলা করতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া সে একা একাও খেলতে পারে এবং অন্তত ২০ মিনিট কিংবা তার অধিক সময় যাবৎ সে নিজের জগতে খেলতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে তার দুশ্চিন্তা যদি ক্রমাগত বাড়তেই থাকে।

? সে যদি তার বন্ধুদের সাথে খেলতে না চায় অথবা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে না চায়।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন ২৫০-৫০০ টি কিংবা তারও অধিক শব্দ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে পারে। সে প্রায় ৬টি শব্দ জোড়া লাগিয়ে বাক্য তৈরি করে এবং একটির পর আরেকটি বাক্য বলে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। সাধারণ কিছু প্রশ্ন যেমন তার নাম, বয়স, ভাই বোনের নাম ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

৪৩ মাসের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫৪১ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।

সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।

দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।

বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।

রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।আবার বিকেল ৫টায় নাশতা দিয়ে রাত ৮টার  মধ্যে রাতের খাবার শেষ করবেন। চাইলে ঘুমের আগে হাল্কা কিছু দিতে পারেন আবার না দিলেও চলে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

আপনার সন্তানের উপর এখন সব সময় নজর রাখুন। যেহেতু সে এখন অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করে এবং অনেক সময় স্ক্রিন টাইম পার করে এ কারণে তার আচরণে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। তার মধ্যে নেগেটিভ কোন কিছু লক্ষ্য করলে অবশ্যই তাকে নিরুৎসাহিত করুন সে কাজটি করার জন্য। সে এখনো নিজের নিজের সবকিছু করতে যায় বিধায় খেয়াল করুন যেন সে কোন কাজে দুর্ঘটনায় না পড়ে।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে বাহিরের নিয়ে গেলে সব সময় তার উপরে নজর রাখুন। এই বয়সেও শিশুরা পড়ে গিয়ে কিংবা দরজা, জানালা, ড্রয়ারের সাথে হাতে বা পায়ে আঘাত পেয়ে ব্যথা পেতে পারে। যেহেতু সে এখন সব ধরনের কাজ নিজে নিজে করতে চায় তাই তাকে সাহায্য করার কথা বলে তার সাথেই থাকুন এবং তার দিকে নজর রাখুন।অভিভাবক হিসাবে আপনার উচিত হবে শিশুকে বাইরের কারোর কোলে না দেওয়া। এমনকি শুধুমাত্র বাবা-মা ব্যতীত অন্য কেউ যেন তাকে চুমু না দেয়। শিশু যেতে চায় না এমন কারোর কাছে জোর করে কখনোই তাকে পাঠাবেন না। শিশুকে এখন থেকেই ভালো এবং খারাপ স্পর্শ সম্বন্ধে টুকটাক ধারণা দিন। পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কারোর সাথে বাইরে খেলতে পাঠাবেন না। যখন তাকে বাইরে খেলতে নিয়ে যাবে তখন অবশ্যই তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই বয়স থেকেই তার কাজ কর্মের প্রতি কিছুটা বাঁধ টানুন। তাকে কোন কোন কাজের ক্ষেত্রে নিষেধ করুন এবং তার ধৈর্য বৃদ্ধির জন্য সাথে সাথে কোন কিছু না দিয়ে তাকে কিছুটা অপেক্ষা করিয়ে তার আবদার পূরণ করুন। এতে করে শিশুর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা থাকলে তা কমতে শুরু করবে। 

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

এইসময় সন্তানের জন্য প্রি-স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত বয়স।  প্রি-স্কুলে দেওয়ার আগে যদি সম্ভব হয় তাহলে যেসব বাচ্চারা ইতিমধ্যে স্কুলে যায় তাদের সাথে আপনার সন্তানের পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে তাদেরকে দেখে স্কুলে যাওয়ার জন্য আপনার সন্তানের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হবে। তবে প্রি-স্কুল এ দেওয়ার আগে তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা জরুরী। আপনি আপনার সন্তানকে বোঝাতে পারেন যে স্কুল একটি মজার জায়গা এবং সেখানে গেলে অনেক মজার মজার খেলনা এবং বন্ধু পাবে। কিছু সময়ের জন্য মায়ের থেকে আলাদা থাকতে হবে কিন্তু এই সময়ে তুমি আরো অনেক মজা করতে পারবে। এভাবে আস্তে আস্তে তাকে মানসিকভাবে অভ্যস্ত করে তুলুন যেন তার মধ্যে অতিরিক্ত ভয় থাকলে তা দূর হয়ে যায়।আপনার ছোট্ট সোনামণিকে‌ নিয়মিত বাহিরে খেলতে নিয়ে যান এবং আপনিও তার সাথে খেলাধুলায় নিযুক্ত হন। তাকে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিন। ঘরের ভিতরে খেলার জন্য তাকে এমন সব খেলনা দিন যেগুলি দিয়ে খেলতে কিছুটা মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়। তাকে নিয়ে লুকোচুরি খেলতে পারেন যা তার মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া তাঁর খেলনার মধ্যে স্যান্ডবক্স যুক্ত করতে পারেন কিংবা একটি ছোট পুল তৈরি করে দিতে পারেন। তাকে চক ও বোর্ড এনে দিন এবং প্রতিদিনের সেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু আঁকতে উৎসাহ দিন। খেলার ছলে তাকে পাজল, সংখ্যা এবং অক্ষর মিলানোতে সাহায্য করুন। যখনই সম্ভব হবে তার সামনে কোন কিছু জোরে জোরে গণনা করুন যেন সে গুনতে শিখে। এছাড়াও তাকে নিয়মিত বই পড়ে শোনান এবং এমন সব বই এনে দিন যার গল্পগুলো সাধারণ কিন্তু রঙিন এবং বড় বড় ছবিতে পরিপূর্ণ। তাকে সাধারণ নির্দেশনা গুলো মেনে চলায় অভ্যস্ত করুন। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি তাকে উৎসাহ দান করুন।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.