৪৯ মাস বয়সী সন্তানের জন্য যা কিছু জানা প্রয়োজন

সাধারন বিষয় গুলোঃ

✅ একা একা খেতে পারে।

✅ বদমেজাজ প্রদর্শন করা কমে যায়।

✅ ১ থেকে ৫টি পর্যন্ত জিনিস গুনতে পারে।

✅ টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে মুখে বলতে পারে।

? উচ্চতাঃ ১০১.৬-১০৩.১ সে.মি

? ওজনঃ ১৬.১-১৬.৫ কেজি

মূল পরিবর্তনঃ

এই সময় আপনার শিশু মোটামুটি সব ধরনের কথা বলতে শিখে। সে ৫ থেকে ৬ টি শব্দের বাক্য  ব্যবহার করে এবং তার কথাগুলো প্রায় সকলের কাছেই বোধগম্য হয়। সে মাঝে মাঝে আপনাকে উদ্ভট কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে। কারণ সে তার চারপাশের জগতে কি ঘটছে তার সবকিছুই জানার আগ্রহ প্রকাশ করে। আপনার সন্তান এখন শারীরিকভাবে বেশ শক্ত হয়ে যায়। সে মই দিয়ে ওঠানামা করা, ডিগবাজি খাওয়া সহ অন্যান্য কাজগুলো বেশ দক্ষতার সাথেই করে থাকে।

দৈহিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন শারীরিকভাবে বেশ শক্ত পোক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে নিজে থেকেই মোটামুটি সব কাজ করতে পারে। সে এখন মই‌ বেয়ে উপরে উঠতে পারে। ডিগবাজি খাওয়া তার একটি পছন্দের খেলা। আপনার সন্তান উপরে-নিচে সহজে ওঠানামা করতে পার। সিঁড়ির ধাপ গুলিতে আলাদা আলাদা পা ফেলে ওঠানামা করে। সে বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দৌড়াতে শিখে। অল্প উঁচু জায়গা থেকে সে নিচে লাফ দিতে পারে। এছাড়াও বল ছুড়ে মারা, ক্যাচ ধরা, পা দিয়ে লাথি দিয়ে বল মারা ইত্যাদি কাজগুলো সে এখন সহজেই করতে পারে। সে এক পায়ের উপর কয়েক সেকেন্ডের জন্য দাঁড়ায় এবং লাফাতে পারে। নিজের কাজগুলো সে নিজে করতেই পছন্দ করে। নিজ হাতে খাওয়া, একা একা জামা কাপড় পরা, এমনকি গোসলের সময় গায়ে সাবান মাখা ইত্যাদি কাজগুলো সে নিজে করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখন সে পেন্সিল এবং রং পেন্সিল ভালোভাবে থাকতে শিখে। এমনকি পেন্সিল দিয়ে সে দেখে দেখে সহজ আকৃতি গুলো আঁকতেও পারে। সে অন্তত দশটি ব্লক সাজিয়ে একটি বিল্ডিং তৈরি করতে পারে এবং পুঁতি একত্রিত করে মালা গাঁথতে পারে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? যদি আপনার সন্তান হাঁটাচলা করতে গিয়ে কিংবা সাধারণ কাজগুলো করতে গিয়ে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে।

? সে যদি ঠিকমত শুনতে না পায় এবং সাধারণ নির্দেশনা না বোঝার কারণে বারবার প্রশ্ন করতে থাকে।

? খাওয়া, কাপড় পরা কিংবা টয়লেটে যাওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে যদি তার অসুবিধা হয় এবং সব সময়ই আপনাকে সাহায্য করা লাগে।

? বিভিন্ন কোণ থেকে জিনিসপত্র দেখতে যদি অসুবিধা হয়।

? এতদিনে সে যে সকল দক্ষতা অর্জন করেছে সহসাই যদি সে ভুলে যায়।

বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন তিনটি সংযুক্ত নির্দেশনা যুক্ত বাক্য বুঝতে সক্ষম। এছাড়াও সে জিনিসের সংখ্যা গণনা করে কয়টি জিনিস সেটি বুঝতে পারে। বিভিন্ন জিনিসকে আকার, আকৃতি, রং এবং ধরন অনুযায়ী পৃথক করতে পারে। লম্বা ও খাটো, হালকা ও ভারী বস্তুগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে। রাত এবং দিনের পার্থক্য বলতে পারে। সে চার থেকে পাঁচটি রং এর নাম বলতে পারে এবং সেগুলো মিলাতে পারে। 

চিন্তার বিষয়ঃ

? আপনার সন্তান যদি দুইটি নির্দেশনার যুক্ত বাক্য বুঝতে না পারে।

? কোন কাজের প্রতি যদি সে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে এবং সহসাই অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

? যদি আমি, তুমি ইত্যাদি শব্দগুলোর সঠিক ব্যবহার না জানে।

? যদি সে একই এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারে।

মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ

আপনার সন্তান এখন তার পারিপার্শ্বিক মানুষদের গুরুত্ব অনুভব করতে শুরু করে। সে তার আশপাশের মানুষের সাথে খোলামেলা ভাবে কথা বলে এবং পর্যায়ক্রমিক খেলাধুলার গুরুত্ব বুঝতে শিখে। কিন্তু সে সকল খেলাতে জিতে যেতে চায় এবং কোন কিছুতে হেরে গেলে অত্যন্ত মন খারাপ করে । তারমধ্যে নানারকম আবেগীয় অনুভূতিগুলো পরিলক্ষিত হয় যেমন হিংসা ,রাগ , ভয়,আনন্দ কিংবা দুঃখ। সে মজার মজার কার্যক্রম করতে এবং হাস্যকর কথাবার্তা বলতে খুব আনন্দ বোধ করে। এই বয়সে সে নিজের জন্য তার বন্ধুদের ভেতর থেকে একজনকে পছন্দ করে এবং তাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে নেয়। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য সে ছোটখাটো মিথ্যা বলে থাকে যদিও তার মধ্যে এই অনুশোচনা থাকতে পারে যে মিথ্যা বলা ভালো নয়। গান গাওয়া, নাচানাচি করা কিংবা অভিনয় করার মধ্যে সে আনন্দ খুঁজে পায়। এছাড়াও বাস্তব এবং কল্পনা জগতের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে।

চিন্তার বিষয়ঃ

? সে যদি স্বাভাবিকভাবে আপনার থেকে দূরে থাকতে না পারে।

? অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে যদি সে মিলেমিশে খেলাধুলা করতে পছন্দ না করে।

? সাধারণভাবে সবার সাথে মিশতে না পারে।

? সে যদি অতিরিক্ত হিংসাত্মক এবং আক্রমণাত্মক আচরণ করে।

? এখনো যদি তার খাওয়া,ঘুম এবং টয়লেট যাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়।

? কল্পনা এবং বাস্তব এর মধ্যে যদি পার্থক্য করতে না শিখে।

ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ

আপনার সন্তান এখন ছড়া গান গাওয়া সহ নানারকম গান স্পষ্ট ভাবে গাইতে পারে। সে নানা রকম গল্প বলতে থাকে যার কিছু কিছু সত্য আবার কিছুটা তার কল্পনা থেকে সাজানো থাকে। সে পাঁচটির বেশি শব্দ যুক্ত বাক্য ব্যবহার করতে শিখে। সে নিজে নিজে তার স্মৃতি থেকে কবিতা মনে করে পড়তে থাকে। নিজের নামের প্রথম এবং শেষ অংশসহ সম্পূর্ণ নাম বলতে পারে।

খাবার এবং পুষ্টিঃ

  • চার বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫০০ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
  • সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
  • দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
  • বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
  • রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।

দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।

ক্যালরি এবং ফুড চার্টঃ

৪৯ মাস বয়সী শিশুর দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হলো ১৫৮২ কিলোক্যালরি। তার দৈনিক প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট গুলো-

বুকের দুধ: প্রয়োজন নেই।

ফর্মুলা দুধ : প্রয়োজন নেই। 

গরুর দুধ :৫৯০-৬২০ মিলি/দিন।

প্রোটিন: ১৯ গ্রাম/দিন।

ফল/ফলের রস:৪০০ গ্রাম/দিন।

শাকসবজি:২০০ গ্রাম/দিন।

শস্য দানা: ১৪২ গ্রাম/দিন।

পানি: ৯৫০মিলি/দিন।

যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ

সন্তানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি সন্তানকে সতর্কতার শিক্ষা দেওয়াও প্রয়োজনীয়। রাস্তা পার হওয়া কিংবা পার্কিং এরিয়াতে বাবা মায়ের হাত ধরে থাকা, চুলার কাছে না যাওয়া, চাকু কিংবা কাঁচি দিয়ে নিজে নিজে কোন কিছু না কাটা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সাবধানতার ব্যাপারে সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে। বাহিরে নিয়ে গেলে তার প্রতি সব সময় বিশেষ নজর রাখুন যেন সে কোন গর্ত কিংবা ডোবা/পুকুর ইত্যাদি পানি জাতীয় জায়গায় না যায় এবং এগুলো থেকে সতর্ক থাকুন।

অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ

আপনার সন্তানকে সেসব জায়গায় নিয়ে যান যেখানে গিয়ে সে তার নতুন নতুন দক্ষতাগুলো কাজে লাগাতে পারবে, লাফানো কিংবা মই বেয়ে ওঠা কিংবা স্লাইড দিয়ে নিচে নামা এই ধরনের কাজ গুলি করতে পারবে। তাকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে উৎসাহিত করুন এবং তাদের ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তান এখনও তার বদমেজাজ প্রদর্শন করতে পারে। তাই তাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর সময় এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিন। সে প্যাডেল চেপে সাইকেল চালানো শিখে তাই তাকে রাস্তায় চলার নিয়মগুলি শেখান। আপনার সন্তানকে স্ক্রিন টাইম এর ব্যাপারে নির্দেশনা দিন। সারাদিনে এক ঘণ্টার বেশি তাকে কখনোই মোবাইল কিংবা টেলিভিশন দেখতে দেওয়া উচিত নয়। তার সঠিক ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সারাদিনে সব মিলিয়ে তার ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ড্রয়িং, কাটিং, ক্রাফটিং ইত্যাদি বিষয়গুলো সন্তানের ছোট ছোট মাংসপেশি মজবুত করণ এবং তার দক্ষতা বৃদ্ধি করনের জন্য খুবই উপকারী। আপনার সন্তানকে ঘরের কাজের প্রতি উৎসাহিত করুন। তাকে ছোট ছোট কাজে সংযুক্ত করুন যেমন কাপড় ভাঁজ করা কিংবা ময়লা কাপড় গুলো ধোয়ার জন্য এনে দেওয়া, জুতার বক্সের  মধ্যে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখা ইত্যাদি।

ToguMogu Logo

ToguMogu is a parenting app offering essential support from family planning to raising children up to age 10.

ToguMogu

Contact

  • +88 01958636805 (Customer Care)
  • [email protected]
  • Rezina Garden, House 67/A, Road 9/A, Dhanmondi, Dhaka 1209, Bangladesh

Copyright © 2025 ToguMogu All rights reserved.