সাধারন বিষয় গুলোঃ
✅ এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে লাফাতে পারে।
✅ সিঁড়ির রেলিং না ধরেই সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারে।
✅ নিজে নিজে ছড়া কিংবা গান গাইতে পারে।
✅ কয়েকটি রং এবং আকারের নাম সঠিকভাবে বলতে পারে।
✅ নিজের সম্পূর্ণ নাম বলতে পারে।
✅ তার শব্দ ভান্ডারে ১৫০০ এর অধিক শব্দ যুক্ত হয়.
? উচ্চতাঃ ১০০.৩-১০২.৩ সে.মি
? ওজনঃ ১৫.৯-১৬.৩ কেজি
মূল পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন চার বছরের মাইলফলক অতিক্রম করতে চলেছে। সে এখন আর ছোট্ট টোডলার নেই বরং একটি বড় বাচ্চাতে পরিণত হতে যাচ্ছে। কারো সাহায্য ছাড়াই সে আত্মবিশ্বাসের সাথে হাঁটাচলা, দৌড়াদৌড়ি, সিঁড়িতে উঠা নামা এমনকি উপর থেকে নিচে লাফ দিতে সক্ষম। এছাড়াও বল ছুড়ে মারা এবং ক্যাচ ধরায়ও সে পারদর্শী হয়ে ওঠে। তার হাত এবং চোখের সমন্বয়ের মধ্যে পুরোপুরি সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। মোট কথা বলা যায় সে এখন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং অনেকটাই পরিপূর্ণ।
দৈহিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন তার এক পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ড কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ব্যালেন্স রাখতে পারে কিংবা লাফাতে পারে। সে একটি নির্দিষ্ট উঁচু স্থান থেকে পড়ে না গিয়ে লাফ দিয়ে নীচে নামতে পারে। সিঁড়িতে কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে ওঠানামা করতে পারে। মাথা দিয়ে বল ছুড়ে দিতে পারে আবার একটু বড় সাইজের বলগুলো দূর থেকে আসলে ক্যাচ ধরতে পারে। সে ট্রাই সাইকেলে প্যাডেল চেপে চালাতে পারে এবং সামনে-পেছনে সহজেই হাঁটাচলা করতে পারে। বড়দের মতো পেন্সিল ধরতে শিখে এবং নির্দিষ্ট কিছু আকারের ছবি আঁকতে পারে। এছাড়াও সে নিজ হাতে খাবার মাখিয়ে খেতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি উপর থেকে নিচে লাফ দিতে না পারে।
? কোন কিছু দেখতে যদি তার সমস্যা হয়।
? সঠিকভাবে সে পেন্সিল ধরতে না পারলে।
? ব্রাশ করা, হাত ধোয়া, নিজ হাতে খাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোতে যদি অত্যন্ত অসুবিধা বোধ করে।
? এতদিনে সে যেসকল দক্ষতা অর্জন করেছিল তা যদি সহসাই ভুলে যেতে শুরু করে।
বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন কোন কিছু গণনার ধারণা অনুধাবন করতে শিখে। সে ১ থেকে ১০ টি বস্তু এমনকি তার বেশিও গুনতে পারে। এছাড়াও সে চার থেকে পাঁচটি রং এবং আকারের নাম বলতে পারে। ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, গোলাকার এবং আয়তকার আকার গুলো আঁকতে পারে। সে কল্পনা ভিত্তিক এবং ভান করা খেলাধুলা করতে ভালোবাসে। সময় সম্বন্ধে তার ধারনা তৈরি হয় এবং কোন সময় কি কাজ করতে হবে সেটিও স্পষ্ট হয়। যেমন সকালে নাস্তা করা, দুপুরের লাঞ্চ এবং রাতের ডিনার, সন্ধ্যায় নাস্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো সে বুঝতে শিখে। যেকোনো বিষয়ের প্রতি তার মনোযোগ প্রসারিত হয়। সে বিভিন্ন আকার যেমন বড় এবং ছোট এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বুঝতে শিখে। সে একসাথে প্রায় তিনটি নির্দেশনা যুক্ত বাক্য মেনে কাজ করতে পারে। যেমন যদি তাকে বলা হয় তুমি ফ্রিজ এর কাছে যাও, ফ্রিজ খুলে একটি আপেল নিয়ে আসো। তাহলে সে নির্দেশনাটি মেনে ঠিকই কাজটি সম্পন্ন করতে পারে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? আপনার সন্তান যদি তিনটি নির্দেশনা যুক্ত কমান্ড ফলো করতে না পারে।
? কল্পনা ভিত্তিক কিংবা অনেকে মিলিত হয়ে খেলাধুলার প্রতি তার কোনো আগ্রহ যদি না থাকে।
? কোন কাজ করতে গেলে সহজেই যদি সে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে।
? বাবা মায়ের থেকে দূরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি অনেক বেশি কান্নাকাটি করে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তনঃ
আপনার সন্তান এখন নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করতে পছন্দ করে। এছাড়াও সে নতুন কোনো কাজ করার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করে। সে এখন একা একা খেলাধুলা করতে চায় না বরং বন্ধুদের সাথে গ্রুপ করে খেলতে চায়। অন্য বাচ্চাদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে সে খেলাধুলা করে। সে ভাষায় প্রকাশ করে তার পছন্দ, অপছন্দ, আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি বর্ণনা করে। সে হয়তো এখনো ভান করা এবং বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখে না কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে কল্পনা এবং বাস্তবের পার্থক্য বুঝতে পারে। নিয়ম মেনে প্রতিদিনের কাজগুলি করতে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। খেলাধুলার পাশাপাশি গান গাওয়া, নাচা, ছবি আঁকা এই কাজগুলিও অনেক বেশি উপভোগ করে।
? চিন্তার বিষয়ঃ
? যদি আপনার সন্তান অন্য বন্ধুবান্ধবের সাথে এবং পরিবারের বাইরে অন্যান্যদের সাথে মিশতে চায়।
? জামা কাপড় পরা, ঘুমানো, টয়লেটে যাওয়া ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রে সব সময় যদি সে ঝামেলা করতে থাকে।
? সে যদি অতিরিক্ত লাজুক কিংবা আক্রমনাত্মক আচরণ করে।
? সব সময় যদি সে দুঃখী এবং মনমরা হয়ে থাকে।
ভাষাগত পরিবর্তন ও উন্নতিঃ
আপনার সন্তান এখন যথেষ্ট স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে। তার কথা বহিরাগতরাও বুঝতে সক্ষম। তার শব্দ ভান্ডারে ১৫০০টির অধিক শব্দ যুক্ত হয়। সে তার সম্পূর্ণ নাম বলতে পারে। আমি এবং তুমি এই শব্দগুলি সঠিক ব্যবহার করতে পারে। সে তার স্মৃতি থেকে ছড়া মনে করে সেগুলি গাইতে পারে। এছাড়াও সে অক্ষর দেখে পড়তে পারে এবং তার বইয়ের সাধারণ জিনিসগুলোর নাম বলতে পারে। সে এখনো অনেক প্রশ্ন করে বিশেষ করে কে এবং কেন দিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকে।
খাবার এবং পুষ্টিঃ
৪৮ মাসের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই বয়সে শিশুর খাদ্যে ১৫৭৩ কিলোক্যালরি থাকা জরুরি।
সকাল ৭টা : ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি। শেষে দুধ ও ফলমূল।
দুপুর ১২টা : ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি। শেষে খেতে চাইলে দুধ।
বিকেল ৫টা : সকাল ৭টার মতো।
রাত ৯-১০টা : দুপুর ১২টার মতো।
দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাশতা দেওয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাশতা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।আবার বিকেল ৫টায় নাশতা দিয়ে রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করবেন। চাইলে ঘুমের আগে হাল্কা কিছু দিতে পারেন আবার না দিলেও চলে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।
যেসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবেঃ
আপনার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য আপনার ঘর বাড়ি যথেষ্ট পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের ভিতরে বিভিন্ন রকম পোকামাকড় বিশেষ করে ছোট ছোট পোকামাকড় শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণে ঘরের পরিছন্নতা নিশ্চিতকরণ এবং পোকামাকড় দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ওষুধপাতি বিশেষ করে পোকা মারার ওষুধ সহ অন্যান্য সরঞ্জাম শিশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। কাপড় ধোয়ার সাবান, পাউডার, হারপিক, ঘর পরিষ্কার করার লিকুইড সহ অন্যান্য কেমিক্যাল জাতীয় সরঞ্জাম অবশ্যই আপনার সন্তান থেকে দূরে রাখুন। কোনভাবেই যেন তারা এগুলো নাগালের মধ্যে না পায়। এছাড়াও ম্যাচ বক্স, গ্যাসের চুলা, ছুরি,কাঁচি, চাকু এবং অন্যান্য ধাঁরালো বস্তুগুলো তাদের নাগালের থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করুন। এমনকি ক্রাফটিং এর সময় কাঁচি কিংবা গ্লু গান এর প্রয়োজন থাকলে আপনি সাথে থেকে সেগুলি দিয়ে কাজ করতে সাহায্য করুন। আপনার সন্তানকে প্রতিদিনের রুটিন মেনে চলতে বাধ্য করুন। এলোমেলো জীবন যাপন সন্তানের জন্য মোটেও ভালো নয়। এতে করে জীবনে নিয়মানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলার গুরুত্ব সম্পর্কে তার ধারণা তৈরি হবে না এবং ভবিষ্যতে সে বিপথগামী হয়ে যেতে পারে।
অভিভাবকদের জন্য টিপসঃ
আপনার সন্তানকে ড্রয়িং, কাটিং, দড়ি ধরে টানাটানি সহ অন্যান্য কার্যক্রমে উৎসাহিত করুন। এতে তার শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাকে নিজ হাতে খাবার নিয়ে খেতে উৎসাহিত করুন। এই বয়সে হয়তো সে পুরোপুরি পরিষ্কার করে তার দাঁত ব্রাশ করতে সক্ষম হয় না। এ কারণে শেষ মুহূর্তে আপনি নিজে তাকে ব্রাশ করিয়ে দিতে পারেন। তাকে খেলাধুলার জন্য প্রচুর সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। বিল্ডিং ব্লক এবং লেগো সেট গুলো তার ব্রেইন ডেভলপমেন্ট এর জন্য অত্যন্ত উপযোগী খেলনা। ঘরের ভেতরে এই সকল খেলার পাশাপাশি তাকে নিয়মিত বাহিরে খেলতে নিয়ে গেলে তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে খুবই উন্নতি ঘটবে। সব সময় চেষ্টা করুন তাকে প্রতিদিনের নির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যে চলতে। সে যদি রুটিন মোতাবেক কাজ না করে তাহলে তাকে কড়া ভাবে বলা যেতে পারে কিংবা শাসন করা যেতে পারে।